বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক শাহজালাল বিমানবন্দরে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে মহাখালী থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত সাময়িক যানচলাচলও বন্ধ রাখা হয়। এতে করে বিড়ম্বনায় পড়েন প্রবাসীরা। এ ঘটনাকে ঘিরে প্রবাসীদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
দেশে ফেরা প্রবাসীদের কেউ কেউ এটিকে দুর্ভোগ হিসেবে দেখছেন। আবার তারেক রহমানের নিরাপত্তাকে প্রয়োজনীয় বলে কেউ কেউ সাময়িক অসুবিধাকে অনেকটা স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। এদিকে প্রবাসীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিএনপি হেলফ ডেস্ক চালু করলেও দলটির দাবি প্রশাসনের বাধায় তারা কোনো কার্যক্রম চালাতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক শাহজালাল বিমানবন্দরে সরেজমিনে দেখা যায়, দেশে ফিরে প্রবাসীদের কেউ মাথায়, কেউ হাতে আবার কেউ পিঠে ব্যাগ নিয়ে একাই হাঁটছেন। কেউ খুঁজে পেয়েছেন স্বজনদের, আবার কেউ স্বজনের সন্ধান করছেন। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রেও এ ধরনের বিড়ম্বনা দেখা গেছে।
সৌদী আরবের আলজুবের সাকাকা শহর থেকে দেশে ফিরেছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা সালমা বেগম। তিনি গাজীপুরের বাসার দিকে এয়ারপোর্ট থেকে হেঁটেই যাত্রা শুরু করেন। তিনি আমার দেশকে বলেন, দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আসলেও এখন হেঁটে যেতে হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে বের হলাম মাত্রই। সামনে গাড়ি পেলে তাতে উঠবেন। তবে কতদূর হেঁটে যেতে হবে তা জানেন না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কষ্ট হচ্ছে না। তবে আমার ব্যাগেজ বহন করতে ভাই ও চাচার কষ্ট হচ্ছে। অনেক দিন পর দেশে এসেছি আমার ভালোই লাগছে। এত বড় একজন নেতা অনেক দিন পর দেশে আসলেন তারজন্য একটু কষ্ট তো সবাইকে মেনে নিতে হবে।
অপর এক প্রবাসী শ্রীবা দাসের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। তিনি ওমান থেকে ফিরেছেন। তিনি একাই টেনে নিচ্ছিলেন ২টি লাগেজ ও পিঠে একটি ব্যাগ। গ্রামের বাড়ি সিলেটে। প্রায় এক কিলোমিটার পথ ৩টি ভারি ব্যাগ নিয়ে হাটলেও তার কোনো কষ্ট নেই বলে আমার দেশকে জানিয়েছেন এই প্রবাসী। তিনি বলেন, তারেক রহমান দেড় যুগ পর দেশে ফিরেছেন, আমার আর কোনো কষ্ট নেই। আমি যতদূরই হাঁটি সমস্যা নেই। তারেক রহমান দেশে আসছেন এটাই আমার জন্য আনন্দের।
সৌদি থেকে এসেছেন আমিনুল ইসলাম স্বাধীন। তিনি যাবেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায়। স্বজনদের খুঁজে পেতে তার বেগ পেতে হয়েছে বলে জানান তিনি। আমিনুল বলেন, ১১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট ভ্রমণ করে এসেছি। দেশে আসার জন্য এতটাই আনন্দিত ছিলাম যে সময়টুকুও একদম হিসেব করে মনে রেখেছি। কিন্তু বিমানবন্দরে নেমে টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পর হতাশ হলাম। স্বজনদের পাচ্ছিলাম না। মূল সড়কে (ঢাকা-আবদুল্লাহপুর) এসে তাদের সাথে একত্রিত হয়েছি। এখন হাঁটা শুরু করলাম।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আমি ১০ বছর পর বাংলাদেশে এসেছি। কিন্তু কোনো কিছুরই খুব একটা পরিবর্তন দেখছি না। সৌদির আমিরও যদি যাতায়াত করেন এরকম ভোগান্তিতে কাউকে পড়তে হয় না। এরপরেও তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের পর বাংলাদেশের মানুষ যদি প্রকৃত অধিকার ফিরে পায়, তবে আমার আর কোনো কষ্ট থাকবে না, বরং আনন্দিত হবো। কিন্তু সেটি না হলে আমি আজকের কথা কখনো ভুলব না।
ইরাক প্রবাসী মো.জাহিদুল ইসলাম প্রায় ২৪ ঘণ্টা ভ্রমণ করে দেশে ফিরেছেন। তিনি যাচ্ছেন গাজীপুরে। তিনি বলেন, এ দেশের জন্মগত অভ্যাস ভোগান্তি পেতে হবে আমাদের। যদিও তারেক রহমানের ফেরাকে ঘিরেই এই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তিনি দীর্ঘদিন পর দেশে আসছেন সেজন্য এটিকে মেনে নিচ্ছি। তবে আমাদের সাধারণ মানুষের জন্য সহজ ব্যবস্থা রাখতে পারতো। জনগণের ভাগ্য হয়তো কেউ বদলাতে পারবে না। এরপরও আমরা চাই তিনি যদি ক্ষমতায় যান, সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটক।
ফরিদপুরের সালতা থেকে সৌদি যাচ্ছেন মামুন শেখ। তিনি উত্তরা থেকে বিমানবন্দরে হেঁটে এসেছেন। তিনি বলেন, আরো সুন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে তারেক রহমানকে স্বাগত জানানো যেত। আমাদের কষ্ট না দিলেও হতো। কষ্ট হয়েছে। কিন্তু কী আর করার। কষ্ট করেই যাচ্ছি। যাওয়ার সময় আশা রেখে যেতে চাই -বাংলাদেশকে একটি জনবান্ধব দেশ হিসেবে এসে দেখব।
ঢাকা ১৮ আসনের বিএনপির প্রার্থী ও মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের পক্ষ থেকে হেল্প ডেস্ক বসানো হয়েছিল এয়ারপোর্টে। কিন্তু হেল্প ডেস্কটির ব্যানার সেখানে থাকলেও ছিল না কোনো ছাউনি বা টেবিল। ছিলো না স্বেচ্ছাসেবকও। হেল্প ডেস্কটির দায়িত্বে থাকা যুবদল বিমানবন্দর থানার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে খুঁজে পাওয়া রাস্তার অপরপাশে বিনামূল্যে খাবার ও পানি বিতরণের একটি স্টলে।
হেল্প ডেস্ক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমার দেশকে বলেন, প্রবাসীদের সহায়তার জন্য ঢাকা ১৮ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন ভাই একটি হেল্প ডেস্ক বসাতে বলেছিলেন। আমরা বসিয়েছিলাম। কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসন সেই ডেস্ক থেকে আমাদের সরিয়ে দিয়েছে। আমরা যথেষ্ট জনবল ও মোটর সাইকেল রেখেছিলাম। এখন প্রবাসী ভাইদের একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে নিরাপত্তার জন্যই আমাদের পুলিশ-সেনাবাহিনী সেখান থেকে সরে আসতে বলেছে। তাছাড়া প্রবাসী ভাইদের জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে তাদের সহযোগিতা করতাম।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

