হাসিনার ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠার সহযোগীদের নাম বললেন মাহমুদুর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২: ৩২
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়েছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান

জুলাই গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টার সাক্ষ্যে মাহমুদুর রহমান হাসিনার ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার নানা প্রেক্ষাপট ও বিবরণ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, মহান জুলাই ২০২৪ বিপ্লবে বাংলাদেশের ইতিহাসে নিকৃষ্টতম এক ফ্যাসিস্ট শাসকের পতন হয়েছে। এই ফ্যাসিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল একটি ম্যাটি কুলাস প্ল্যানিংয়ের মাধ্যমে। সেই প্ল্যানিংয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদের সঙ্গে একটি বিদেশি শক্তিও জড়িত ছিল। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স’ বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জেনারেল মইনের সহযোগিতায় ২০০৮ সালে পাতানো নির্বাচনে হাসিনার ক্ষমতায় আরোহণের কথা তুলে ধরেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বিডিআর হত্যাকাণ্ড, সেনাবাহিনীকে ডিমরালাইজ করা, বিচারবিভাগকে দলীয়করণ, স্কাইপ কেলেঙ্কারির ঘটনা, শাপলা হত্যাকাণ্ড, তিনটি ভুয়া জাতীয় নির্বাচন, আয়নাঘর সৃষ্টি ও ঘুম খুনের কালচার চালু, জঙ্গি নাটক সৃষ্টি এবং তার নিজের ওপর নির্যাতনের কাহিনী ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেন মাহমুদুর রহমান। তিনি তার সাক্ষ্যে বিচার বিভাগ, আইনজীবী, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সেনাবাহিনী, ১৫ বছরের ডিজিএফআই প্রধানসহ অনেকের নাম উল্লেখ করে তাদের ফ্যাসিবাদী হাসিনার সহযোগী বলে মন্তব্য করেন। বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড এবং চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের ঘটনাবলী ও এ নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরেন। আগামীকাল বাকী সাক্ষ্য প্রদান শেষে তিনি উভয়পক্ষের আইনজীবীদের জেরার জবাব দেবেন।

মাহমুদুর রহমান তার সাক্ষ্যে বলেন, শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠার পিছনে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, মিডিয়া এবং রাজনীতিবিদ তার সহযোগী ভূমিকা পালন করেছে। সরকারের বিভাগগুলোর মধ্যে বিচার বিভাগ, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন এবং সেনাবাহিনী বিশেষ করে ডিজিএফআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ডিজিএফআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দীক মূল ভূমিকা পালন করেছে। বিচার বিভাগের মধ্যে বিচারপতি খায়রুল হক, বিচারপতি এসকে সিনহা, বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দীকি, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, বিচারপতি নিজামুল হক এবং বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বিশেষভাবে ফ্যাসিবাদকে শক্তি যুগিয়েছে।

তিনি বলেন, আইনজীবীদের মধ্যে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক আইন সচিব দুলাল, সাবেক এটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন, সাবেক চীফ প্রসিকিউর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত, দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এবং মোশাররফ হোসেন কাজল উল্লেখযোগ্য।

মাহমুদুর রহমান বলেন, পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, সাবেক আইজিপি নুর মোহাম্মদ এবং সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে মনিরুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান, হারুনুর রশীদ, বিপ্লব সরকার, মেহেদী হাসান, প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার, হাবিবুর রহমান প্রমুখ ফ্যাসিস্ট সরকারের লাঠিয়ালের কাজ করেছে।

সাক্ষ্যে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের মধ্যে ২০১৪ সালের রকিব উদ্দিন কমিশন, ২০১৮ সালে নুরুল হুদা কমিশনের মরহুম মাহাবুব তালুকদার ব্যতীত অন্যান্য কমিশনারবৃন্দ এবং ২০২৪ সালের হাবিবুল আউয়াল কমিশনের সদস্যবৃন্দ বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ধবংসের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, রওশন এরশাদ, জিএম কাদের ফ্যাসিবাদের সহযোগী ভূমিকা পালন করেছে। ১৪ দলীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, দিলীপ বড়ুয়া, নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারি, ফজলে হোসেন বাদশা, শিরিন আক্তার এবং তাদের সংগীরাও ফ্যাসিবাদ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। ১৪ দলের বাইরে মেজর জেনারেল ইব্রাহিম, শমশের মবিন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মিসবাহউর রহমান চৌধুরী, কাদের সিদ্দীকি, মাহি বি চৌধুরী প্রমুখ ফ্যাসিবাদকে দীর্ঘায়িত করেছেন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনীর মধ্যে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার পিছনে ২০০৮ সালে জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ, লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, তৎকালীন ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আমিন, ব্রিগেডিয়ার বারী এবং ব্রিগেডিয়ার মামুন খালেদ ভূমিকা রেখেছেন। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪- এ ভুয়া নির্বাচনকালীন সময়ে ৩ সেনা প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় তাদের নৈতিক দায় এড়াতে পারেন না। ডিজিএফআইয়ের অধিকাংশ ডিজি এই সময়ের মধ্যে সরকারের জুলুমের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন। এদের মধ্যে লে. জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবর, লে. জেনারেল মামুন খালেদ, লে. জেনারেল মোঃ আকবর হোসেন, লে. জেনারেল সাইফুল আমিন,লে. জেনারেল তাববেজ শামস এবং লে. জেনারেল হামিদুল হক গুম এবং অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট। র‌্যাবের সেনা সদস্যদের মধ্যে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান সবচেয়ে বিতর্কিত এবং জুলুমকারীর ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলাদেশের বাইরে থেকে ভারত শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি ছিলো। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত সব সময় তার আধিপত্য কায়েম করতে চেয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত