সুজনের জরিপ

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চায় ৭১ শতাংশ মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৩৫
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৩৬

জাতীয় সংসদে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা চায় ৬৯ শতাংশ মানুষ। উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আসন বণ্টন চান ৭১ শতাংশ লোক। একই ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদনেতা হতে পারবেন না—এমন প্রস্তাবের সঙ্গে একমত ৮৭ শতাংশ। ৮৯ শতাংশ মানুষ চায় এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণে জনমত যাচাইয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন জরিপের তথ্য উপস্থাপন করেন। চলতি বছরের মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ৪০টি প্রশ্নে সারা দেশে ১ হাজার ৩৭৩ জনের মতামত এবং ১৫টি নাগরিক সংলাপের মাধ্যমে জরিপটি করে সুজন।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে জনমত যাচাইয়ে উঠে আসা তথ্যের বরাতে বলা হয়, রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতির পরিবর্তন চান ৯০ শতাংশ মানুষ। ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নিম্নকক্ষে নারী আসন সংরক্ষণের পক্ষে ৬৩ শতাংশ ও উচ্চকক্ষে নারীদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষণের পক্ষে ৬৯ শতাংশ। বিরোধী দল থেকে নিম্নকক্ষে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগের পক্ষে ৮৬ শতাংশ ও উচ্চকক্ষে ৮২ শতাংশ মানুষ।

দুদক, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন ও প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে মত ৯০ শতাংশ মানুষের। সব সাংবিধানিক পদে ও তিন বাহিনীর প্রধান নিয়োগের জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের পক্ষে ৮০ শতাংশ, মৌলিক অধিকারের পরিধি বাড়ানোর পক্ষে ৮৮ শতাংশ এবং মৌলিক অধিকারকে শর্তহীন করার পক্ষে ৮৪ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন।

নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে—নির্বাহী বিভাগের এমন কার্যক্রম গ্রহণে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নেওয়ার বিধান করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৭ শতাংশ মানুষ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের প্রত্যয়ন করা (সার্টিফাই) করে তা গণবিজ্ঞপ্তি হিসেবে প্রকাশ করার পক্ষে ৮৬ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন।

নির্বাচনি ব্যয় নিরীক্ষণ ও অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের প্রার্থিতা বা নির্বাচনি ফলাফল বাতিল করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৮ শতাংশ মানুষ। ৯২ শতাংশ মানুষ মনে করেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দলের সদস্য হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত।

সুজন প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কারের মধ্যে নির্বাচনকালে ১২০ দিনের জন্য দলনিরপেক্ষ সরকার গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৩ শতাংশ মানুষ।

সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৫ শতাংশ মানুষ। পাঁচ বছর পরপর দলের নিবন্ধন নবায়নের পক্ষে মত ৭৬ শতাংশের। ব্যাংকিং চ্যানেলে দলের আর্থিক লেনদেন ও অডিট হিসাব প্রকাশের পক্ষে মত ৯১ শতাংশের। দলের সদস্যদের মতামতে প্রার্থী মনোনয়নের পক্ষে মত ৮৩ শতাংশের। দলের লেজুড়বৃত্তিক ও বিদেশি শাখা না থাকার পক্ষে মত ৮০ শতাংশের।

স্থায়ী স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের পক্ষে ৯০ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও বিকেন্দ্রীকরণে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের পক্ষে মত ৮৮ শতাংশের। স্থানীয় সরকারকে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের পক্ষে মত ৮৪ শতাংশের। সরকারি কৌঁসুলি ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে দক্ষ পেশাজীবী নিয়োগের পক্ষে মত ৮৫ শতাংশের। উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের পক্ষে মত ৮১ শতাংশের। স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের পক্ষে ৯০ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন।

জরিপের তথ্য উপস্থাপনের পর সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জরিপের তথ্য প্রমাণ করে, জনগণ সংস্কারের পক্ষে, তারা সংস্কার চায়। বিদ্যমান পদ্ধতি, প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হয়ে উঠতে সহায়তা করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বদিউল আলম মজুমদার আরো বলেন, এগুলোর পরিবর্তন হওয়া দরকার। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই পদ্ধতি, প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানের আমূল পরিবর্তন দরকার। সংস্কার করা দরকার।

এমরান এস হোসাইন/সম্পাদনা: ইসমাঈল

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত