খালেদ মহিউদ্দিন কেন হাসিনার সাক্ষাৎকার নিতে চান, ব্যাখ্যা করলেন পিনাকী

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৫৭

খালেদ মহিউদ্দিন কেন হাসিনার সাক্ষাৎকার নিতে চান বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য। বুধবার ফেসবুক পোস্টে তিনি এ ব্যখ্যা করেন।

পিনাকী ভট্টাচার্য লেখেন, খালেদ মহিউদ্দিনের এই “হাসিনার সাক্ষাৎকার নিতে চাই” কথাটা আসলে সাংবাদিকতার চেয়ে অনেক বেশি পলিটিক্যাল থিয়েটার। সে জানে সাক্ষাৎকারটা এখনই হবে না, কিন্তু এই চাওয়ার ঘোষণা দিয়েই সে একাধিক স্তরে লাভ তুলছে। কিন্তু কেন সে এটা মার্কেটে ছাড়লো?

বিজ্ঞাপন

১ “আমি নিরপেক্ষ” ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য।

সে জানে যে হাসিনার পতনের পর সাংবাদিক সমাজের বড় অংশকে “শত্রুপক্ষ” হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাই “আমি হাসিনার সাক্ষাৎকারও নিতে চাই” বলে সে নিজেকে এমন একজন হিসেবে উপস্থাপন করছে যে,

“আমি পক্ষপাতদুষ্ট না, আমি সাংবাদিক — সবাইকে প্রশ্ন করি।”

এতে করে তার ইমেজে একধরনের ব্যালান্স ফিরে আসে।

২ “Narrative grab” — হাসিনাকে কে প্রথম মঞ্চে তুলবে

সে বোঝে, হাসিনা এখন এক “mythical exile figure” — নীরবতা যত বাড়বে, তার রহস্য তত বাড়বে।

যে-ই প্রথম তাকে মিডিয়া স্পেসে আনবে, সে-ই বর্ণনাটা নিজের নিয়ন্ত্রণে আনবে।

খালেদ মহিউদ্দিন হয়তো ভাবছে: “আমি যদি প্রথমে হাসিনাকে ক্যামেরার সামনে আনতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম পোস্ট-হাসিনা সাক্ষাৎকারটা আমার নামে যাবে।”

এটা শুধু সাংবাদিকতার নয়, ব্র্যান্ড রিক্লেইমের লড়াই।

৩ হাসিনা এখনো “নিউজ মার্কেটের মুল্যবান কারেন্সি”

সে জানে — হাসিনাকে নিয়ে আলোচনা মানে ক্লিক, রিচ, এবং বিতর্ক। এই “আমি সাক্ষাৎকার নিতে চাই” বলাটাই আসলে একটি সফট প্রোভোকেশন।

৪ রাজনৈতিক সেন্সিং ও তথ্য সংগ্রহ

সে হয়তো টের পাচ্ছে হাসিনা কোথায়, কার সাথে যোগাযোগে আছে, কীভাবে “রিটার্ন” প্রস্তুত করছে —

এই ঘোষণা দিয়ে সে একধরনের সিগন্যাল পাঠাচ্ছে:

“আমি কথা বলতে প্রস্তুত, যদি তোমরা আমাকে বেছে নাও।”

অর্থাৎ, হাসিনার শিবিরের সাথে যোগাযোগ রক্ষার safe channel খুলে রাখছে।

৫ বুদ্ধিবৃত্তিক চাল — “Public sphere”-এ বিতর্ক টানার চেষ্টা

সে জানে, হাসিনাকে এখনকার জনমনে শত্রু বা দানব হিসেবে দেখা হয়।

তাকে “আলোচনার বিষয়” বানানো মানেই একটা “civil discourse”-এর দাবি তোলা।

একভাবে সে ‘মধ্যপন্থী বুদ্ধিজীবী’ জায়গাটা দখল করতে চাইছে।

“আমরা যদি শত্রুকেও প্রশ্ন করতে না পারি, তাহলে গণতন্ত্র কই?”

এই যুক্তি দিয়ে সে নিজের জায়গাকে হাই মরাল গ্রাউন্ডে তুলছে।

৬ মিডিয়া কৌশল — “Signal without delivery”

সে জানে সাক্ষাৎকার হবে না, কিন্তু বলাটা symbolic gesture।

এটা একটা নিরাপদ বিতর্কের বোমা:

বললেই খবর হয়,

না পেলেও ক্ষতি নেই,

পেলে ইতিহাস।

৭ ব্যক্তিগত স্বীকৃতি ও “legacy interview” এর আশা: যেমন, ক্রিস্টিয়ান আমানপুরের সাথে গাদ্দাফির সাক্ষাৎকার, ডেভিড ফ্রস্টের সাথে নিক্সন।

খালেদ মহিউদ্দিন হয়তো ভেবেছে:

“যদি ইতিহাস হাসিনাকে পতিত একনায়ক হিসেবে মনে রাখে, তাহলে তার মুখ থেকে প্রথম স্বীকারোক্তিটা আমি তুলতে চাই।”

৮ আত্মপক্ষ সমর্থনেরও একটা লজিক

সে হয়তো বুঝছে অনেকেই এখন তাকে “Hasina-era beneficiary” হিসেবে দেখে।

তাই এই ঘোষণার মাধ্যমে বলছে —

“আমি কারও দালাল না, আমি শুধু কাজ করছি।”

অর্থাৎ এটা একধরনের ‘narrative cleansing’।

খালেদ মহিউদ্দিন হাসিনাকে আনবে। আজ না হোক কাল আনবে। এটা তার ব্যক্তিগত অর্জনের প্রশ্ন। সে সাহস সঞ্চয় করতেছে।

খালেদ মহিউদ্দিন সেই মুক্তামালার একটা রত্ন, যা গেথে একটা মালা তৈরি করা হচ্ছে, যার অন্য রত্নগুলো আগুন, আওয়ামী মিছিল, ক্যু প্রচেষ্টা, গৃহযুদ্ধের হুমকি, ইনক্লুসিভ নির্বাচনের চাপ। সবকিছু একটাই প্যাকেজ। বাংলাদেশে আবারো ফিরে আনতে হবে, ভারতীয় আধিপত্যবাদ।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত