দেশের বাইরে রয়েছেন ১০ শতাংশ ভোটার

নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট কী প্রভাব ফেলতে পারে

আলজাজিরা
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১৭

বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন প্রবাসী নাগরিকরা। এ লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি নিশ্চিতে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির ধারণা অনুসারে, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অভিবাসী শ্রমিকসহ অন্তত এক কোটি ৫০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির বাস রয়েছে। যা দেশের মোট ভোটারের ১০ শতাংশ।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে ইসি পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে, যা পোস্টাল ভোট বিডি নামের অ্যাপের সহায়তায় চলবে।

বিজ্ঞাপন

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা জানিয়েছেন, প্রবাসীদের ভোটগ্রহণ সহজ কাজ হবে না।

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বদিউল আলম মজুমদার আলজাজিরাকে বলেন, ‘পুরো প্রক্রিয়াটিই অন্ধকার বাক্সের মতোÑযদি সততা ও স্বচ্ছতা অনুসরণ করা না হয়। এতে পুরো নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।’

আগে কেন ভোট দেননি প্রবাসীরা

বাংলাদেশের সংবিধানে কখনোই প্রবাসীদের ভোট দিতে স্পষ্টভাবে বাধা দেওয়ার কথা বলা হয়নি। সংবিধানে বলা হয়েছে, দেশের সব নাগরিকই নির্ধারিত বয়স হওয়ার পর ভোটার হতে পারবে। তবে এর জন্য নিজের আবাসেই থাকতে হবে, এমন কোনো বিষয় নির্ধারিত হয়নি। তবে ১৯৮২ সালের এক অধ্যাদেশে ভোটারকে তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবশ্যিকভাবে থাকার কথা বলা হয়েছে।

তবে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ২০০৯ সালে ভোটার তালিকা আইনের মধ্য দিয়ে এ অধ্যাদেশ প্রতিস্থাপিত হয়। এ আইনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে থাকা সর্বশেষ বাস করা স্থান অথবা তাদের নিজেদের বা পারিবারিক বাড়ির এলাকার স্থানীয় নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের ভোটের জন্য কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নির্বাচন সংস্কার কমিশন এ বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল অ্যাপের সহায়তায় পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থা সামনে আসে।

প্রবাসীরা কীভাবে ভোট দেবেন

আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা রেজিস্টার করে তাদের ব্যালট ট্র্যাক করতে পারবেন। ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘ভোটাররা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে এ অ্যাপে রেজিস্টার করতে পারবেন। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারের তথ্যানুসারে তাদের এলাকা নির্ধারিত হবে।’

এরপর ভোটারদের প্রবাসের ঠিকানায় নির্ধারিত খামে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হবে। এতে ব্যালট পেপার ও একটি খালি খাম থাকবে। এ খামে কিউআর কোড থাকবে, যা অ্যাপে স্ক্যান করার মাধ্যমে ভোটার খামটি হাতে পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করবেন। তবে ভোটাররা তাদের ভোট দেওয়ার পর এটি খামবন্দি করে যেকোনো পোস্ট অফিস থেকে ফেরত পাঠাতে পারবেন।

প্রবাসীদের ভোট কি আগামী নির্বাচনে

প্রভাব ফেলবে

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ আলজাজিরাকে বলেন, ‘প্রবাসী ভোটাররা মোট ভোটারের ১০ শতাংশ। কোনো কোনো অঞ্চলে তা মোট ভোটারের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। ডাকের মাধ্যমে ভোটের প্রক্রিয়ায় ভোটারদের এ পরিমাণ প্রতিযোগিতা জোরালো করবে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রবাসী ভোটারদের গুরুত্ব সংখ্যার চেয়েও বেশি। তারা সাধারণত রাজনৈতিকভাবে সচেতন, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও তাদের দেশের বাড়ির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। প্রবাসীদের ভোটে অংশগ্রহণ তাদের পরিবার ও সমাজের ওপরও প্রভাব ফেলবে, যা ভোটার অংশগ্রহণ ও জনমতকে গঠন করবে।

খালেদ বলেন, ‘সুতরাং, শুধু ভোট গণনাতেই প্রবাসীদের প্রভাব পড়বে না, একই সঙ্গে নির্বাচনের পুরো মেজাজ ও গতিতে তা অনুভূত হবে।’

দশকের পর দশক ভোট দিতে না পারা প্রবাসীরা দেশের পরিচিতি নির্বাচনি নকশাকে অনির্ধারিত মানচিত্রে বদল করতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের লাখ লাখ ভোটারের মধ্যে প্রচারণার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তবে তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়াই এখন দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য ও অপতথ্যও আরেক চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। তবে খালেদের মতো রাজনীতিবিদরা বিশ্বাস করেন, যখন ফ্যাক্ট ও দক্ষতার অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অনলাইনে তৎপরতা চালানো যায়, তাহলে গুজবকে মোকাবিলা করা সহজ হবে।

তিনি বলেন, ‘এ বিবেচনায়, তারা মিথ্যা তথ্যের সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তই থাকবেন নাÑতারা আমাদের প্রতিরোধের শক্তিশালী বাহুতে পরিণত হবেন।’

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত