ডেটা ব্যবস্থাপনার দুই অধ্যাদেশ জারি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ১২

অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা ২০২৫ প্রণয়ন করেছে। এই দুইঅধ্যাদেশের মাধ্যমে নাগরিকদের ব্যক্তিগত উপাত্তের বা ডেটার গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও মালিকানা নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রত্যেক নাগরিককে তার তথ্যের প্রকৃত মালিক হিসেবেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যার ফলে উপাত্ত (ডেটা) সংগ্রহ, সংরক্ষণ, স্থানান্তর ও ব্যবহার করার পূর্বে তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া সংবেদনশীল তথ্য (যেমন: আর্থিক, স্বাস্থ্য, জেনেটিক ও বায়োমেট্রিক) অতিরিক্ত সুরক্ষা পাবে এবং সুরক্ষার লঙ্ঘন ঘটলে প্রশাসনিক জরিমানা, ক্ষতিপূরণ, অর্থদণ্ড ও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ সকল বিষয় তদারকি করতে একটি উচ্চ ক্ষমতা বিশিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব করা হয়েছে। আজ রবিবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

উপাত্তের অধিকার ও সম্মতি: ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্যের উপর তার স্বীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো পক্ষ কেবল উপাত্ত-জিম্মাদার বা প্রক্রিয়াকারী হিসেবে এই উপাত্ত প্রক্রিয়া করতে পারবে।

উপাত্তধারী হিসেবে নাগরিক যেকোনো উপাত্ত-ভান্ডারে থাকা নিজের তথ্য দেখতে, ভুল সংশোধন করতে, তথ্য মুছতে এবং নিজের উপাত্তের দ্বারা স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্তে বাধাদান করার অধিকার ধারণ করবে। বৈশ্বিক মান অনুযায়ী স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সম্মতির গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি যেকোনো অপব্যবহারের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে জোরালো পদক্ষেপ।

শিশু ও সংবেদনশীল তথ্যের সুরক্ষা: শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপাত্ত সম্পর্কে কার্যকর বিধান আছে; তাদের জন্য উপাত্ত সংগ্রহে অভিভাবক বা অভিভাবিকার সম্মতি আবশ্যক। শিশুদের অনলাইন ট্র্যাকিং বা প্রোফাইলিংকেন্দ্রিক বিজ্ঞাপন বা ইত্যাদি কার্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও নীতি: রাষ্ট্রে নাগরিকের উপাত্ত ব্যবস্থাপনা কার্যকর করার জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় কর্তৃপক্ষ। এই কর্তৃপক্ষই ব্যক্তিগত উপাত্তসহ অন্য সকল ধরণের উপাত্তের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন, আইনানুগ অনুবর্তিতার তদারকি এবং অভিযোগ নিষ্পত্তি করবে।

কর্তৃপক্ষ সকল রাষ্ট্রীয় সফটওয়্যার ও উপাত্ত-ভাণ্ডারের নিরাপত্তা বিধান করবে এবং এরূপ সকল সোর্সকোড, জাতীয় সোর্সকোড রেপোজিটরিতে রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে রাষ্ট্র এরূপ সকল সফটওয়্যারের ভেন্ডর-লক এবং সফটওয়্যার-লক পরিস্থিতির অবসান ঘটাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সকল উপাত্ত-জিম্মাদার, প্রক্রিয়াকারী এবং প্ল্যাটফর্মের জবাবদিহিতা এবং শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে।

ডিজিটাল অবকাঠামো: উপাত্তের নিরাপদ বিনিময়ের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ন্যাশনাল রেসপন্সিবল ডেটা এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম। এটির মাধ্যমে অনুমোদিত, নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে এবং ন্যূনতমকরণের নীতি অনুসরণ করে সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান পরস্পরের মধ্যে উপাত্ত সহজে বিনিময় করতে পারবে এবং এতে উপাত্তের আন্তঃপরিচালন বিষয়ে নাগরিকের ও উপাত্ত-জিম্মাদারের ভোগান্তি কমবে।

নতুন অধ্যাদেশে নাগরিকদের জন্য একক ডিজিটাল পরিচয়ের ধারণা অবতরণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে একক আইডি দিয়ে নিরাপদে নানা সরকারি ও ডিজিটাল সেবা গ্রহন করা যাবে।

আন্তর্জাতিক মান ও সমন্বয়: বাংলাদেশের এই পদক্ষেপগুলো বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অধ্যাদেশে সংযোজন করা অধিকার-দায়িত্বগুলো একইসাথে বিনিয়োগবান্ধব এবং মানবাধিকার বিষয়ক সুরক্ষা প্রদান করে। এতে অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্লাউড কম্পিউটিং ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি-বাণিজ্যে সহযোগিতা সহজ হবে রাষ্ট্রের সর্বোপরি ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরান্বিত হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত