কাঁচা মরিচে ভোক্তার পকেট কাটছে কারসাজি চক্র

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ৫৬
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ২২: ০৬

বর্তমানে দেশিয় কাঁচা মরিচ বাজারে নেই বললেই চলে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে মরিচ আমদানি করা হচ্ছে। আর এই আমদানি করা কাঁচা মরিচ নিয়ে দেশের বাজারে চলছে ব্যাপক কারসাজি।

কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানি কাঁচা মরিচে ভোক্তাদের পকেট কেটে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছে এই কারসাজি চক্র। গত ১৫ দিন আগেও যে কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকায় কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে, গত সপ্তাহে তা হঠাৎ বেড়ে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় পৌঁছায়। আবার দুইদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১৬০টাকা পর্যন্ত কমে রোববার ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

কাঁচা মরিচের দামে এতো বেশি উঠানামায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছেন, বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যবসায়ীরা কারসাজিতে লিপ্ত হয়ে সাধারণ ক্রেতাদের পকেট কাটছেন। এতে অনেকেই সহজে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছেন। বাজারে যথেচ্ছাভাবে জিনিসপত্রের দাম হাঁকাচ্ছেন। বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।

এমন অভিযোগের সত্যতা মিলেছে কাঁচা মরিচ আমদানিকারকদের বক্তব্যেও। এ বিষয়ে রোববার রাতে বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন আমার দেশকে বলেন, ভারত থেকে প্রতি কেজি মরিচ আমদানির পর সব খরচ মিলিয়ে বেনাপোল বন্দরে দাম দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৮০ টাকার মতো। আমরা ২-১ টাকা লাভেই তা বিক্রি করছি। কিন্তু মধ্যসত্ত্বভোগীরা কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে। তিনি বলেন, এ জন্য সরকারকে বাজারে মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

রোববার কারওয়ানবাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে আসা আবু জাফর নামের এক ক্রেতা বলেন, কাঁচা মরিচের দাম অনেক। দুইদিনের ব্যবধানে কেজিতে অস্বাভাবিক উঠানামা। বাজারে সঠিকভাবে তদারকি না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

কারওয়ানবাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রেতা জাকিয়া বলেন, আমদানি করা কাঁচামরিচ বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বেশি। আমদানি বাড়লে দাম আরও কমবে।

বাজারে সরববরাহ স্বাভাবিক থাকলেও আমদানি করা ৮০ টাকার মরিচ খুচরা গত কয়েকদিনে বাজারে কেজিপ্রতি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে রোববার বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। রোববার রাজধানীর কাওয়ানবাজারে ১০০ থেকে ১২০টাকায় কেজিপ্রতি কাঁচা মরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে। দুইদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১৬০টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে।

বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে মরিচ আমদানি বেড়ে বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। সামনে আরো দাম কমতে পারে।

বাজারের খুচরা পর্যায়ে দেখা যায়, গত ১৫ দিন আগেও প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে তা হঠাৎ বেড়ে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় পৌঁছায়। অথচ আমদানিকারকের নথিপত্র অনুযায়ী ভারত থেকে প্রতি কেজি মরিচ আমদানির পর সব খরচ মিলিয়ে বেনাপোল বন্দরে দাম দাঁড়াচ্ছে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা।

আমদানিকারকরা জানান, মরিচের বড় একটা অংশ ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে আসছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ আমদানিতে সরকারকে ৩৬ টাকা শুল্ক দিতে হয়। যদি শুল্ক কমানো হয়, তাহলে আমদানি ব্যয়ও কমে বাজারেও দাম কমবে। ক্রেতারা কম মূল্যে ক্রয় করতে পারবে। খরচ বাদে তারা কম লাভেই বিক্রি করছেন। কিন্তু হাতবদল হয়ে খুচরা বাজারে দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে বলে আমদানিকারকদের দাবি।

তবে কারওয়ানবাজারের আড়তদার বাবুল মিয়া বলছেন, পণ্যের দাম উঠানামা করে সরবরাহের ওপর। সরবরাহ ভালো থাকলে দাম কমে। গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচের সরবরাহ একেবারেই কমে গিয়েছিল তাই দাম বেড়েছিল। চলতি সপ্তাহে সরবরাহ বেড়ে দাম কমেছে।

প্রসঙ্গত, গত এক মাসে কেবল বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়েই এক হাজার ৫২১ মেট্রিক টন মরিচ আমদানি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারও ১১ট্রাকে ১৬৫ মেট্রিক টন আমদানি করা কাঁচা মরিচ দেশে ঢুকেছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত