স্বস্তির ঈদযাত্রায় বাড়তি ভাড়ার খড়গ

মাহফুজ সাদি
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৫, ১৩: ১৩

এবারের ঈদযাত্রার চিত্র বিগত বছরগুলোর চেয়ে ভিন্ন। স্বস্তি নিয়ে গাঁয়ে ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ। টিকিট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত তেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি কাউকে। এরই মধ্যে লাখ লাখ মানুষ রাজধানী ছাড়ায় ঢাকা এখন ফাঁকা নগরীতে পরিণত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাস, ট্রেন ও লঞ্চে যাত্রীর চাপ বেশি থাকলেও খুব একটা ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ মিলেছে, নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থাও।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া মহাসড়কগুলোতে অন্যবারের মতো ঈদযাত্রায় চিরচেনা দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি নেই। তবে গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলযোগে পরিবারের কাছে ফিরছেন অনেকেই।

গতকাল রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ মিলেছে। এর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বেলা ১২টার দিকে মহাখালী বাস টার্মিনালে টাঙ্গাইলগামী বিনিময় পরিবহনের বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ আসে। এ ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপ নিতে গেলে বিক্ষোভ শুরু করেন পরিবহনটির শ্রমিকরা। বিক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত জরিমানা না করে বাসটিকে সাত দিন সাসপেন্ড করে মুখরক্ষা করে কর্তৃপক্ষ।

মহাখালী বাস টার্মিনালে ঈদযাত্রার খোঁজ-খবর নিতে যান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক। ওই বাসটিতে উঠে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় ভাড়ার চার্ট অনুযায়ী ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুরের ভাড়া ৩৯০ টাকা হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগের সত্যতা মেলায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দেন তিনি। এতেই পরিবহনটির শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। পরে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেন বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটরা। আন্দোলনের মুখে জরিমানা না করে বাসটিকে সাত দিনের জন্য সাসপেন্ড করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।

ঘটনার আগে যাত্রীদের বেশি ভাড়া না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সিনিয়র সচিব এহছানুল হক বলেন, কোনো পরিবহন বেশি ভাড়া নিলে অভিযোগ করবেন, আমরা ওই পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করে দেব। টার্মিনালে র‍্যাব ও বিআরটিএর অফিস আছে। এছাড়া আমাদের অভিযোগ কেন্দ্র আছে এবং পুলিশের টহল চলছে। কোথাও যদি কোনো বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়, তাহলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি ভালো। তবে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী বিনিময় পরিবহনের একটি বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বেশি ভাড়া নিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে রুট পারমিট বাতিল করে দেব।

মহাখালীর পাশাপাশি গাবতলী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, আগের কদিনের চেয়ে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে। আগাম টিকিট সংগ্রহ করা যাত্রীরা আসছেন, যথাসময়ে বাস ছাড়ছে। উপস্থিত হয়েও অনেকে টিকিট কেটে বাড়ি ফিরছেন। ফলে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার অনেকটা স্বস্তি বয়ে এনেছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে সকাল থেকেই যাত্রীরা ভিড় করছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের ভিড় চাপে পরিণত হয়। বেশিরভাগ যাত্রী আগাম টিকিট করা। তবে নন ব্র্যান্ডের বাসগুলোর যাত্রীরা টিকিট কেটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। নিয়মিত যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত বাসগুলো সঠিক সময়ে টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়।

কজন টিকিট বিক্রেতা জানান, এবার সরকারি-বেসরকারি ছুটি বেশি হওয়ায় একসঙ্গে যাত্রীর চাপ পড়েনি। গত ১৪ মার্চ থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়। অনেকে অগ্রিম টিকিট কিনেছেন। যাত্রী এলেই বাস ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্য গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে যাত্রী বেশি হওয়ায় এসব গাড়ি নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যেতে পারছে।

সোহাগ পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা রাব্বি বলেন, নির্ধারিত সময়ে তাদের বাসগুলো ছাড়া হচ্ছে। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। অনেকে অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছেন, এখন এসে গাড়িতে উঠছেন আর আমরা ছেড়ে দিচ্ছি।

তবে নন-ব্র্যান্ডের বাসগুলোর ক্ষেত্রে ৬০০-৭০০ টাকার ভাড়া ৯০০ বা হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রীদের অভিযোগÑ গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালীতে থাকা নন-ব্র্যান্ড বাসগুলো সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বিভিন্ন অঙ্কের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। কারো কাছ থেকে ১০০, কারো থেকে ২০০, কারো থেকে ৩০০ বা ৪০০ টাকা বেশি নেওয়ার কথা বলেছেন অনেকে।

আলম এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাসগুলো ফিরতি ট্রিপে ফাঁকা আসার কারণে কিছু টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। এরচেয়ে কম ভাড়া নিলে ঈদযাত্রায় পোষানো সম্ভব নয়।

গাবতলী বাস টার্মিনালের পুলিশ কন্ট্রোল রুমের উপপরিদর্শক মাহমুদুল হাসান বলেন, এবার ঈদযাত্রায় মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছে, তাতে সবাই খুশি। কন্ট্রোল রুম থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নজর রাখছি। কোনো যাত্রী বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করছেন না।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে স্বস্তি

শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ। কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। সাভার পরিবহনের একটি বাসের চালক কবির হোসাইন বলেন, আজ (শুক্রবার) সড়কে যাত্রী কম, যানজটও নেই। যাত্রী কম হলে পরিবার নিয়ে খুশিতে ঈদ করব কীভাবে। তবে শ্যামলী বাসের সুপারভাইজার জসিম বলেন, তাদের বাসে যাত্রী আছে, সড়কও অনেকটা ফাঁকা। ফলে যাত্রীরা যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।

সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের ইনচার্জ সওগাতুল আলম বলেন, ঈদযাত্রায় সড়ক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও যানজট নেই। ঘরমুখো মানুষরা স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছেন।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চিরচেনা যানজট নেই

প্রতিবার ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রায় যানজটের চিত্র চিরচেনা হলেও এবার ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। আশুলিয়া, বাইপাইল, নবীনগর ও জিরানী বাজার থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত যানবাহনের ধীরগতি থাকলেও যানজট নেই। এ মহাসড়ক দিয়ে ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরছে মানুষ। তবে বাসগুলো নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা থেকে বের হওয়ার সময় যাত্রী পাওয়া গেলেও ঢাকায় ঢোকার সময় যাত্রীশূন্য থাকছে। ফলে লোকসান থেকে বাঁচতে কিছু বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

কালিয়াকৈর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, যাত্রীরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে মহাসড়কে গাড়িতে চলাচল করছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ যানবাহন চলাচলে পুলিশ কাজ করছে।

গতকাল শুক্রবার ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল চলাচলের সংখ্যা ছিল বেশি। তবে যমুনা সেতুর টোলপ্লাজায় মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। যানবাহনের চাপ বাড়ায় যমুনা সেতুতে টোল আদায়ের পরিমাণও বেড়েছে। গতকাল যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, ২৪ ঘণ্টায় এই সেতু দিয়ে ৩৫ হাজার ২২৭টি যানবাহন পারাপার করায় দুই কোটি ৬৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। ঈদযাত্রায় সেতুর দুই পাশে থাকা ৯টি করে ১৮ বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। দু’পাশেই মোটরসাইকেলের জন্য দুটি করে পৃথক বুথ থাকায় নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারছে ঘরমুখো মানুষ।

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুহাম্মদ শরীফ বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও যানজট নেই। ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

পদ্মা সেতুর মাওয়া টোলপ্লাজায় ঢল

দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে গতকাল শুক্রবার। মাওয়া টোলপ্লাজায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন প্রায় দুই কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি তৈরি হয় পদ্মা সেতুতেও। ফলে সেতুর টোলপ্লাজার মোটরসাইকেল বুথ ছাড়াও সাতটি বুথে টোল আদায়ে হিমশিম খেয়েছেন কর্মকর্তারা। যানবাহনের তীব্র চাপে এমন অবস্থা তৈরি হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মাওয়া ফাঁড়ির ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জিয়াউল ইসলাম জানান, শুক্রবার ভোর থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল বেড়েছে। টোলপ্লাজা এলাকায় মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহনের জট তৈরি হয়। মোটরসাইকেল বুথ ছাড়া সাতটি বুথে টোল নিয়েও হিমশিম খেতে হয়। বেশি চাপ থাকায় মোটরসাইকেলের বুথ একটি বাড়ানো হয়েছে।

পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, শুক্রবার সেতু দিয়ে চলাচল করা যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে, মোটরসাইকেল বেড়েছে অস্বাভাবিক। দুটি অস্থায়ী বুথ স্থাপন করে মোট তিনটি বুথের মাধ্যমে মোটরসাইকেলের টোল নেওয়া হয়। তারপরও টোলপ্লাজায় গাড়ির জট সৃষ্টি হয়।

দুর্ঘটনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট

গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ অংশে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি পণ্যবাহী ট্রাক উল্টে যাওয়ায় ১০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা জানান, নিয়ন্ত্রণ হারানো ট্রাকটি সড়কের ওপর আড়াআড়িভাবে পড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামমুখী লেনে যানজট সৃষ্টি হয়। এ যানজট দাউদকান্দির পুটিয়া অংশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি দেওয়ান কৌশিক আহমেদ বলেন, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাক সড়কের মাঝখানে পড়ে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ট্রাকটি উদ্ধার করে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। তবে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনার কারণে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে যানজট শুরু হয়ে গতকাল শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। গজারিয়া থানার ওসি আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, গজারিয়ার বালুয়াকান্দী, আনারপুরা ও বাউশিয়া এলাকায় একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা এবং যানবাহনের চাপে যানজটের সৃষ্টি হয়।

যথাসময়ে ছেড়েছে ট্রেন

বিগত বছরগুলোতে ঈদযাত্রায় যথাসময়ে ট্রেন ছাড়া তো দূরের কথা, নির্ধারিত সময়ের পরও যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। গতকাল শুক্রবার উল্টো চিত্র দেখা গেছে কমলাপুর রেলস্টেশনে। নির্ধারিত সময়ে প্ল্যাটফর্মে আনা হয় ট্রেন রেক, যাত্রীদের জন্য থেকেছে অপেক্ষায়। ফলে প্রতিটি ট্রেন যথাসময়ে ঢাকা ছেড়েছে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের লাইনে ট্রেনের রেক রয়েছে, কোনোটাতে অতিরিক্ত রেকও থাকতে দেখা গেছে।

এমন চিত্র দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় ট্রেনযাত্রীদের। তারা বলছেন, ট্রেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। শিডিউল বিপর্যয় ছিল ঈদযাত্রায় আতঙ্কের নাম। নির্ধারিত সময় ট্রেন চলানোর এমন চিত্র সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। ফলে ট্রেনে অনেকটা স্বস্তিতে যাত্রা করছে ঘরমুখো মানুষ।

জামালপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী আসাদুজ্জামান শাওন বলেন, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে আগেভাগেই রেলস্টেশনে এসেছি। ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হয়েছে। তবে প্ল্যাটফর্মে এসে ট্রেন অপেক্ষমাণ থাকতে দেখে আনন্দ পেয়েছি। এমনকি নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে এসে প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ছিল। আগেই শুনে এসেছি, এবার নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চলছে। ঈদযাত্রা এবার এতটা স্বস্তির হবে ভাবতেই ভালো লাগছে।

কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের যাত্রী সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঈদযাত্রার ভিড় ও ঝক্কিঝামেলা এড়াতে বেশি সময় নিয়েই কমলাপুর স্টেশনে এসেছি। এসে দেখি সাড়ে ১০টায় ছাড়ার ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এসেছে সাড়ে ৯টায়। স্টেশনে তেমন ভিড়ও নেই। ফলে যাত্রীরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারছেন এবার।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন জানান, ঈদযাত্রার আগের দিনগুলোর চেয়ে শুক্রবার যাত্রীর চাপ বেড়েছে। সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ঢাকা স্টেশন ত্যাগ করেছে।

ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু

এদিকে ঈদ-পরবর্তী ফিরতি যাত্রার ট্রেনের অগ্রিম টিকিটও বিক্রি শুরু হয়েছে গতকাল। ৭ এপ্রিলের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হয় এদিন। এবারও আন্তঃনগর ট্রেনের ৭ দিনের অগ্রিম টিকিট বিশেষ ব্যবস্থায় বিক্রি করা হচ্ছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হবে। বিশেষ ব্যবস্থায় বিক্রি হওয়ায় কোনো টিকিট রিফান্ড করার সুযোগ থাকছে না।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঈদের পরের আন্তঃনগর ট্রেনের ৩ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে ২৪ মার্চ; ৪ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে ২৫ মার্চ; ৫ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে ২৬ মার্চ এবং ৬ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে ২৭ মার্চ। এ ছাড়া ৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৯ মার্চ এবং ৯ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ৩০ মার্চ।

এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রায় এক কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বৃহত্তর ঢাকা ছাড়বে বলে ঈদ-পূর্ব যৌথ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলেছে নৌ, সড়ক ও রেলপথরক্ষা জাতীয় কমিটি এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম (এসসিআরএফ)। বলা হয়, ঘরমুখো এই বিপুলসংখ্যক মানুষের ৬০ শতাংশ যাবে সড়কপথে, বাকি ৪০ শতাংশ নৌ ও রেলপথে যাবে। সে হিসেবে এবার সড়কপথে ঈদযাত্রীর সংখ্যা দাঁড়ায় মোট এক কোটি ৩ লাখ ৬২ হাজার, নৌপথে ৬৯ লাখ ৮ হাজার।

টিকিট কালোবাজারি রোধে তৎপর রেল কর্তৃপক্ষ

ঘরমুখী মানুষের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য ভ্রমণ নিশ্চিত করতে টিকিট কালোবাজারি রোধে তৎপর রেল কর্তৃপক্ষ। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভিজিলেন্স টিমের মাধ্যমে স্টেশনগুলোতে ইতোমধ্যে একাধিক অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়। এসব অভিযান ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

বিষয়:

ঈদযাত্রা
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত