আনন্দবাজার পত্রিকার নিবন্ধ
আমার দেশ ডেস্ক
ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু মহর্ষি নন, তিনি মহামহর্ষি। তাকে নিয়ে এ মন্তব্য করেছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা। সাংবাদিক অনিন্দ্য জানা’র লেখা নিবন্ধটি রোববার অনলাইন ভার্সনে প্রকাশ করা হয়েছে।
ড. ইউনূস সম্পর্কে নিবন্ধে বলা হয়, ‘বিজ্ঞজনেরা বলে গিয়েছেন, কথার আগে যাঁরা হাসেন এবং কোনও কথাতেই রেগে যান না, তাঁরা মহর্ষি স্তরের হন। সেটা সেই ২০০৬ সালে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই মনে হয়েছিল। উনিশ বছর পরে এসে মনে হচ্ছে, মহর্ষি তো বটেই। মহামহর্ষি বললেও বাড়াবাড়ি হবে না।’
নিবন্ধটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরা হলো-
মিরপুরের সেই সকালটা এখনও মনে পড়ে। ছবির মতো। ২০০৬ সালের নভেম্বর। বাংলাদেশে হালকা-হালকা শীত পড়েছে। কিন্তু বহুতল গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্চকোটির ঘরে আতিথেয়তার ওম ঘুরঘুর করছে পোষা বেড়ালের মতো। টেবিলের উল্টোদিকে যিনি বসে আছেন, তাঁর পরনে হাতি-পা পাজামা এবং চেক চেক কুর্তা। উপরে একটা অফ হোয়াইট জহরকোট চাপানো। জন্ম ১৯৪০ সালে। এখন তিনি চুরাশি। আগামী ২৮ জুন পঁচাশিতে পদার্পণ করবেন। হিসাব করে দেখছি, মিরপুরের সেই সাক্ষাতের সময় তিনি ছিলেন ছেষট্টি। সদ্য নোবেল পেয়েছেন। তখন তাঁকে ঘিরে এক অলৌকিক বিভা। সারা দুনিয়ার সংবাদমাধ্যম ছোঁক ছোঁক করছে একান্ত সাক্ষাৎকারের জন্য।
সেই ভনভনে ভিড়ে আমিও গিয়ে সেঁধিয়েছি। এবং কিমাশ্চর্যম, একান্ত সাক্ষাৎকারের একটা সময়ও পেয়ে গিয়েছি। আসলে গিয়েছিলাম ঢাকায় ফরাসি ফুটবলার জিনেদিন জিদানের সফর কভার করতে। কিন্তু সেই গঙ্গাকে মর্ত্যে আনার ‘ভগীরথ’ তো তিনিই। জিদানের সফর সংক্রান্ত রোজকার ডেসপ্যাচ না-হয় কলকাতায়। কিন্তু নোবেলজয়ীর সাক্ষাৎকারের একটা খাপ খুলে রাখব না? হাজার হোক, অমর্ত্য সেনের পরের বাঙালি নোবেলজয়ী তো তিনিই।
কেন জানি না, বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসকে সকলেই স্যার বলে ডাকেন। তাঁর বয়স এবং সামাজিক উচ্চতার কারণেই সম্ভবত। কিন্তু তখন স্যারকে পাওয়া এক দুর্ঘটনার ব্যাপার। একে নোবেলজয়ী। তার উপর জিদানের পোঁচ। কিন্তু ওই যে বলে না, সাতশো শকুন মরে একটা রিপোর্টার হয়! খুব উঁচু থেকে লক্ষ্যবস্তুর উপরে কড়া নজর রাখে। ফাঁক পেলেই ঝপ করে এসে বসবে। তো জিদান সংক্রান্ত একটা অনুষ্ঠানে ধরে ফেলা গেল ইউনূসের ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে। লম্বাটে চেহারা এবং কাঁধে ঝোলা ব্যাগের জাহাঙ্গীর পরামর্শ দিলেন, তার পরদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে মিরপুরের গ্রামীণ ব্যাংকে ‘অ্যাভেলেব্ল’ থাকতে।
সেই ‘অ্যাভেলেব্ল’ হয়েই ইউনূসের সাক্ষাৎকার নেওয়া। প্রায় উনিশ বছর আগের কথা। সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত মনে থাকার কথা নয়। তবু একটা বিষয় ভুলিনি। তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের কাজকর্ম নিয়ে বেশ কিছু অপ্রিয় এবং চোখা প্রশ্ন করেছিলাম। কিন্তু ইউনূস এক ছটাকও রাগেননি। মুখে হাসি ধরে রেখে জবাব দিয়েছিলেন। বলা বাহুল্য, সে জবাব তাঁর সংস্থা সম্পর্কে যাবতীয় অভিযোগকে নস্যাৎ করেই দেওয়া। কিন্তু রেগে যাননি। আরও যেটা মনে পড়ে, প্রত্যেকটি জবাব দেওয়ার আগে পানের ছোপ-লাগা দাঁত বার করে একগাল হেসেছিলেন। সে প্রশ্ন তাঁর প্রিয় হোক বা অপ্রিয়।
শেখ হাসিনা তাঁকে জেলে পাঠানোর বন্দোবস্ত প্রায় করেই ফেলেছিলেন। সেখান থেকে খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছেন। হাসিনা উৎখাতের পর তিনিই বাংলাদেশের তদারকি (অন্তর্বর্তী) সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। বকলমে প্রধানমন্ত্রীই। ভাবা যায়! কিন্তু এহ বাহ্য, তার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের প্রধান ব্যবসায়ীও। ইউনূস সম্পর্কে এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে নানা কথাও প্রচলিত আছে।
হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) ইউনূস প্রথম গ্রামীণ ফোনের লাইসেন্স পেয়েছিলেন। নামমাত্র ফি দিয়ে। কারণ, সরকারকে তিনি বলেছিলেন, ওই ফোন গ্রামের মহিলাদের জন্য, গ্রামের মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য। কিন্তু হাসিনার সঙ্গে ক্রমশ তাঁর সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। তার কারণ হিসেবে অনেকে আমেরিকার সঙ্গে ইউনূসের সদ্ভাবের কথা বলেন। কারণ বা ব্যাখ্যা যা-ই হোক, ঘটনা হল, হাসিনা-ইউনূস সম্পর্কে ক্রমশ এক অনপনেয় দূরত্ব তৈরি হয়। সে দূরত্ব এতটাই ছিল যে, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে ইউনূসকে শোকজ করে বাংলাদেশ সরকার।
গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের খাতায় নথিভুক্ত। অর্থাৎ, বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকে তাদের মনোনীত চেয়ারম্যান বসানোর ক্ষমতা রাখে। কিন্তু ইউনূস ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ পদ থেকে সরতে চাননি। সেই কারণে সরকার তাঁকে শোকজ করেছিল। কিন্তু ইউনূস, ওই যাকে বলে, মহামহর্ষি। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এজিএম ডাকেন। ব্যাংকের গ্রহীতারা সব অজগ্রামের মহিলা। তাঁদের দিয়ে প্রস্তাব পাস করিয়ে ইউনূস শীর্ষপদে থেকে যান। শুধু তা-ই নয়, উল্টো সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে যান। যদিও আদালত বলেছিল, সরকার তাদের আইন অনুযায়ীই চলেছে। তার পর থেকেই নাকি ইউনূসের সঙ্গে আমেরিকার ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে।
নিন্দকেরা আরও বলে, অমর্ত্য সেন নোবেল পাওয়ার পর আমেরিকার কাছে ইউনূসের একটা ‘বাড়তি গুরুত্ব’ তৈরি হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, তার কয়েক বছরের মধ্যেই ইউনূস নোবেল পান। মনে পড়ছে, তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, কাজ করেন অর্থনীতি নিয়ে। পেলেন ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’। অবাক হননি? ইউনূস হেসেছিলেন (যেমন কথার আগে হাসেন)। তার পর বলেছিলেন, ‘‘গত ১৪-১৫ বছর ধরেই শুনছি নোবেল পাব। বাজারে কথাটা চালুই ছিল। কেউ বলছিল, অর্থনীতিতে পাব। কেউ বলছিল, শান্তিতে। জানি না, কারা শান্তিতে নোবেলের জন্য নমিনেট করেন আর কারা অর্থনীতিতে। আমার ধারণা, দু’দিক থেকেই মনোনীত হয়েছি। তবে শান্তি কমিটি আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। হতে পারে, অর্থনীতিতে এখন যখন দেয়নি, তখন ভবিষ্যতেও কখনও দেবে না। কিন্তু দু’দিকেই আমার নমিনেশন আছে।’’
দু’দিকেই তাঁর ‘নমিনেশন’ আছে কথাটা যেভাবে বলেছিলেন, তার ভিতর থেকে একটা আত্মবিশ্বাস (না কি আত্মম্ভরিতা?) ঠিকরে বেরোচ্ছিল। যা তাঁর পরনের হাতি-পা পাজামা আর খোপ কাটা কুর্তার সঙ্গে একটুও খাপ খায় না। তখনই মনে হয়েছিল, ইনি কঠিন লোক।
নোবেল পেয়ে তিনি যে আপ্লুত, সেটা বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি এটাও বুঝিয়েছিলেন যে, তাঁর নোবেলপ্রাপ্তিতে আসলে পাদপ্রদীপের আলোয় এলো বাংলাদেশ। নইলে কি আর বলতেন, ‘‘বাংলাদেশের যত লোক, বাংলা ভাষাভাষী যত লোক, তারা সব আনন্দে লাফাচ্ছে। আবার জাপান, কোরিয়া, চীনেও লোকে ঘিরে ধরল। বললো, একজন এশীয় নোবেল পেয়েছে! কাজেই নোবেল পাওয়ার আনন্দের মাত্রাটা সর্বব্যাপী। যাঁরা লেখাপড়া জানেন, তাঁরাই শুধু নন। রাস্তা দিয়ে গেলে রিকশাওয়ালা থেমে যাচ্ছে, বাসওয়ালা বাস থামিয়ে গলাগলি করছে। কেন? না বাংলাদেশে একটা নোবেল পুরস্কার এসেছে। এটা তো একটা বিরাট ঘটনা। বাংলাদেশের সকলের জীবনেই।’’ তার পরে একটু থেমে, ‘‘পুরস্কার ঘোষণার পরেই চীনে গেলাম। মনে হলো, যেন একটা হেড অফ স্টেট এসেছে। সকলে আমার কথা জানতে চায়, বুঝতে চায়, পরামর্শ চায়। আগে হলে হয়তো কেউ খেয়ালই করত না। এসেছে, চলে গিয়েছে। এখন ফার্স্ট পেজ নিউজ!’’
শুনতে শুনতে আরও মনে হয়েছিল, ইউনূসের দৃষ্টি অনেক দূরে নিবদ্ধ। তিনি নিজেকে নিছক একজন নোবেলপ্রাপক বা গ্রামীণ ব্যাংকের সর্বেসর্বা হিসেবে দেখেন না। তিনি চান তাঁর পরিধি আরও বিস্তৃত হোক। হেড অফ স্টেট। যাঁর কথা লোকে জানতে চায়, বুঝতে চায়। যাঁর কাছে লোকে পরামর্শ চায়।
আদতে চট্টগ্রামের মানুষ। বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। ইউনূসও কালক্রমে তা-ই হয়েছেন বলে বাংলাদেশের অনেকে মনে করেন। চট্টগ্রামে ‘বাইন্যা’ বলে একটা শব্দ আছে। মানে ‘বেনিয়া’। ‘ব্যবসায়ী’। চট্টগ্রামের লোকেরা বলেন, ইউনূস হলেন গিয়ে সেই ‘বাইন্যা’। মামুলি বেনিয়া নন, তিনি এক সার্থক এবং সফল বেনিয়া। একে তো ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম। তার পরে আবার অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনাও করেছেন। ফলে ব্যবসা সম্পর্কে পারিবারিক জ্ঞানের সঙ্গে পুঁথিগত বিদ্যাও অর্জন করেছেন। বাণিজ্যসফল ‘গ্রামীণ’ সংস্থা তাঁর সেই অর্জিত বিদ্যার ফল।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু মহর্ষি নন, তিনি মহামহর্ষি। তাকে নিয়ে এ মন্তব্য করেছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা। সাংবাদিক অনিন্দ্য জানা’র লেখা নিবন্ধটি রোববার অনলাইন ভার্সনে প্রকাশ করা হয়েছে।
ড. ইউনূস সম্পর্কে নিবন্ধে বলা হয়, ‘বিজ্ঞজনেরা বলে গিয়েছেন, কথার আগে যাঁরা হাসেন এবং কোনও কথাতেই রেগে যান না, তাঁরা মহর্ষি স্তরের হন। সেটা সেই ২০০৬ সালে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই মনে হয়েছিল। উনিশ বছর পরে এসে মনে হচ্ছে, মহর্ষি তো বটেই। মহামহর্ষি বললেও বাড়াবাড়ি হবে না।’
নিবন্ধটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরা হলো-
মিরপুরের সেই সকালটা এখনও মনে পড়ে। ছবির মতো। ২০০৬ সালের নভেম্বর। বাংলাদেশে হালকা-হালকা শীত পড়েছে। কিন্তু বহুতল গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্চকোটির ঘরে আতিথেয়তার ওম ঘুরঘুর করছে পোষা বেড়ালের মতো। টেবিলের উল্টোদিকে যিনি বসে আছেন, তাঁর পরনে হাতি-পা পাজামা এবং চেক চেক কুর্তা। উপরে একটা অফ হোয়াইট জহরকোট চাপানো। জন্ম ১৯৪০ সালে। এখন তিনি চুরাশি। আগামী ২৮ জুন পঁচাশিতে পদার্পণ করবেন। হিসাব করে দেখছি, মিরপুরের সেই সাক্ষাতের সময় তিনি ছিলেন ছেষট্টি। সদ্য নোবেল পেয়েছেন। তখন তাঁকে ঘিরে এক অলৌকিক বিভা। সারা দুনিয়ার সংবাদমাধ্যম ছোঁক ছোঁক করছে একান্ত সাক্ষাৎকারের জন্য।
সেই ভনভনে ভিড়ে আমিও গিয়ে সেঁধিয়েছি। এবং কিমাশ্চর্যম, একান্ত সাক্ষাৎকারের একটা সময়ও পেয়ে গিয়েছি। আসলে গিয়েছিলাম ঢাকায় ফরাসি ফুটবলার জিনেদিন জিদানের সফর কভার করতে। কিন্তু সেই গঙ্গাকে মর্ত্যে আনার ‘ভগীরথ’ তো তিনিই। জিদানের সফর সংক্রান্ত রোজকার ডেসপ্যাচ না-হয় কলকাতায়। কিন্তু নোবেলজয়ীর সাক্ষাৎকারের একটা খাপ খুলে রাখব না? হাজার হোক, অমর্ত্য সেনের পরের বাঙালি নোবেলজয়ী তো তিনিই।
কেন জানি না, বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসকে সকলেই স্যার বলে ডাকেন। তাঁর বয়স এবং সামাজিক উচ্চতার কারণেই সম্ভবত। কিন্তু তখন স্যারকে পাওয়া এক দুর্ঘটনার ব্যাপার। একে নোবেলজয়ী। তার উপর জিদানের পোঁচ। কিন্তু ওই যে বলে না, সাতশো শকুন মরে একটা রিপোর্টার হয়! খুব উঁচু থেকে লক্ষ্যবস্তুর উপরে কড়া নজর রাখে। ফাঁক পেলেই ঝপ করে এসে বসবে। তো জিদান সংক্রান্ত একটা অনুষ্ঠানে ধরে ফেলা গেল ইউনূসের ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে। লম্বাটে চেহারা এবং কাঁধে ঝোলা ব্যাগের জাহাঙ্গীর পরামর্শ দিলেন, তার পরদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে মিরপুরের গ্রামীণ ব্যাংকে ‘অ্যাভেলেব্ল’ থাকতে।
সেই ‘অ্যাভেলেব্ল’ হয়েই ইউনূসের সাক্ষাৎকার নেওয়া। প্রায় উনিশ বছর আগের কথা। সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত মনে থাকার কথা নয়। তবু একটা বিষয় ভুলিনি। তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের কাজকর্ম নিয়ে বেশ কিছু অপ্রিয় এবং চোখা প্রশ্ন করেছিলাম। কিন্তু ইউনূস এক ছটাকও রাগেননি। মুখে হাসি ধরে রেখে জবাব দিয়েছিলেন। বলা বাহুল্য, সে জবাব তাঁর সংস্থা সম্পর্কে যাবতীয় অভিযোগকে নস্যাৎ করেই দেওয়া। কিন্তু রেগে যাননি। আরও যেটা মনে পড়ে, প্রত্যেকটি জবাব দেওয়ার আগে পানের ছোপ-লাগা দাঁত বার করে একগাল হেসেছিলেন। সে প্রশ্ন তাঁর প্রিয় হোক বা অপ্রিয়।
শেখ হাসিনা তাঁকে জেলে পাঠানোর বন্দোবস্ত প্রায় করেই ফেলেছিলেন। সেখান থেকে খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছেন। হাসিনা উৎখাতের পর তিনিই বাংলাদেশের তদারকি (অন্তর্বর্তী) সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। বকলমে প্রধানমন্ত্রীই। ভাবা যায়! কিন্তু এহ বাহ্য, তার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের প্রধান ব্যবসায়ীও। ইউনূস সম্পর্কে এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে নানা কথাও প্রচলিত আছে।
হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) ইউনূস প্রথম গ্রামীণ ফোনের লাইসেন্স পেয়েছিলেন। নামমাত্র ফি দিয়ে। কারণ, সরকারকে তিনি বলেছিলেন, ওই ফোন গ্রামের মহিলাদের জন্য, গ্রামের মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য। কিন্তু হাসিনার সঙ্গে ক্রমশ তাঁর সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। তার কারণ হিসেবে অনেকে আমেরিকার সঙ্গে ইউনূসের সদ্ভাবের কথা বলেন। কারণ বা ব্যাখ্যা যা-ই হোক, ঘটনা হল, হাসিনা-ইউনূস সম্পর্কে ক্রমশ এক অনপনেয় দূরত্ব তৈরি হয়। সে দূরত্ব এতটাই ছিল যে, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে ইউনূসকে শোকজ করে বাংলাদেশ সরকার।
গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের খাতায় নথিভুক্ত। অর্থাৎ, বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকে তাদের মনোনীত চেয়ারম্যান বসানোর ক্ষমতা রাখে। কিন্তু ইউনূস ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ পদ থেকে সরতে চাননি। সেই কারণে সরকার তাঁকে শোকজ করেছিল। কিন্তু ইউনূস, ওই যাকে বলে, মহামহর্ষি। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এজিএম ডাকেন। ব্যাংকের গ্রহীতারা সব অজগ্রামের মহিলা। তাঁদের দিয়ে প্রস্তাব পাস করিয়ে ইউনূস শীর্ষপদে থেকে যান। শুধু তা-ই নয়, উল্টো সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে যান। যদিও আদালত বলেছিল, সরকার তাদের আইন অনুযায়ীই চলেছে। তার পর থেকেই নাকি ইউনূসের সঙ্গে আমেরিকার ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে।
নিন্দকেরা আরও বলে, অমর্ত্য সেন নোবেল পাওয়ার পর আমেরিকার কাছে ইউনূসের একটা ‘বাড়তি গুরুত্ব’ তৈরি হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, তার কয়েক বছরের মধ্যেই ইউনূস নোবেল পান। মনে পড়ছে, তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, কাজ করেন অর্থনীতি নিয়ে। পেলেন ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’। অবাক হননি? ইউনূস হেসেছিলেন (যেমন কথার আগে হাসেন)। তার পর বলেছিলেন, ‘‘গত ১৪-১৫ বছর ধরেই শুনছি নোবেল পাব। বাজারে কথাটা চালুই ছিল। কেউ বলছিল, অর্থনীতিতে পাব। কেউ বলছিল, শান্তিতে। জানি না, কারা শান্তিতে নোবেলের জন্য নমিনেট করেন আর কারা অর্থনীতিতে। আমার ধারণা, দু’দিক থেকেই মনোনীত হয়েছি। তবে শান্তি কমিটি আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। হতে পারে, অর্থনীতিতে এখন যখন দেয়নি, তখন ভবিষ্যতেও কখনও দেবে না। কিন্তু দু’দিকেই আমার নমিনেশন আছে।’’
দু’দিকেই তাঁর ‘নমিনেশন’ আছে কথাটা যেভাবে বলেছিলেন, তার ভিতর থেকে একটা আত্মবিশ্বাস (না কি আত্মম্ভরিতা?) ঠিকরে বেরোচ্ছিল। যা তাঁর পরনের হাতি-পা পাজামা আর খোপ কাটা কুর্তার সঙ্গে একটুও খাপ খায় না। তখনই মনে হয়েছিল, ইনি কঠিন লোক।
নোবেল পেয়ে তিনি যে আপ্লুত, সেটা বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি এটাও বুঝিয়েছিলেন যে, তাঁর নোবেলপ্রাপ্তিতে আসলে পাদপ্রদীপের আলোয় এলো বাংলাদেশ। নইলে কি আর বলতেন, ‘‘বাংলাদেশের যত লোক, বাংলা ভাষাভাষী যত লোক, তারা সব আনন্দে লাফাচ্ছে। আবার জাপান, কোরিয়া, চীনেও লোকে ঘিরে ধরল। বললো, একজন এশীয় নোবেল পেয়েছে! কাজেই নোবেল পাওয়ার আনন্দের মাত্রাটা সর্বব্যাপী। যাঁরা লেখাপড়া জানেন, তাঁরাই শুধু নন। রাস্তা দিয়ে গেলে রিকশাওয়ালা থেমে যাচ্ছে, বাসওয়ালা বাস থামিয়ে গলাগলি করছে। কেন? না বাংলাদেশে একটা নোবেল পুরস্কার এসেছে। এটা তো একটা বিরাট ঘটনা। বাংলাদেশের সকলের জীবনেই।’’ তার পরে একটু থেমে, ‘‘পুরস্কার ঘোষণার পরেই চীনে গেলাম। মনে হলো, যেন একটা হেড অফ স্টেট এসেছে। সকলে আমার কথা জানতে চায়, বুঝতে চায়, পরামর্শ চায়। আগে হলে হয়তো কেউ খেয়ালই করত না। এসেছে, চলে গিয়েছে। এখন ফার্স্ট পেজ নিউজ!’’
শুনতে শুনতে আরও মনে হয়েছিল, ইউনূসের দৃষ্টি অনেক দূরে নিবদ্ধ। তিনি নিজেকে নিছক একজন নোবেলপ্রাপক বা গ্রামীণ ব্যাংকের সর্বেসর্বা হিসেবে দেখেন না। তিনি চান তাঁর পরিধি আরও বিস্তৃত হোক। হেড অফ স্টেট। যাঁর কথা লোকে জানতে চায়, বুঝতে চায়। যাঁর কাছে লোকে পরামর্শ চায়।
আদতে চট্টগ্রামের মানুষ। বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। ইউনূসও কালক্রমে তা-ই হয়েছেন বলে বাংলাদেশের অনেকে মনে করেন। চট্টগ্রামে ‘বাইন্যা’ বলে একটা শব্দ আছে। মানে ‘বেনিয়া’। ‘ব্যবসায়ী’। চট্টগ্রামের লোকেরা বলেন, ইউনূস হলেন গিয়ে সেই ‘বাইন্যা’। মামুলি বেনিয়া নন, তিনি এক সার্থক এবং সফল বেনিয়া। একে তো ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম। তার পরে আবার অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনাও করেছেন। ফলে ব্যবসা সম্পর্কে পারিবারিক জ্ঞানের সঙ্গে পুঁথিগত বিদ্যাও অর্জন করেছেন। বাণিজ্যসফল ‘গ্রামীণ’ সংস্থা তাঁর সেই অর্জিত বিদ্যার ফল।
পরে অন্য সিনিয়র রিপোর্টারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এ্যানি। এ সময় আমার দেশ-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, বার্তা সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, ভারপ্রাপ্ত চিফ রিপোর্টার বাছির জামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১০ মিনিট আগেসেন্টমার্টিন দ্বীপে নৌযান চলাচলের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। বুধবার মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
১ ঘণ্টা আগেতিনি আরো বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ও এসেম্বলিতে তামাকের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সময়েও এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এ সময় উপদেষ্টা তামাকমুক্ত বিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
২ ঘণ্টা আগেআগামী শুক্র ও শনিবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম পুরোদমে চলবে। এ জন্য ঢাকা কাস্টমস হাউসের সব শুল্ক দলের অফিস খোলা থাকবে। বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এসংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে।
৩ ঘণ্টা আগে