জুলাইয়ে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান কোনো একটি গোষ্ঠী বা দলের একক প্রচেষ্টার ফল নয়, বরং এটি ছিল দলমতনির্বিশেষে দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলিত লড়াই—এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লেখেন, “দলীয় বা আদর্শিক বিরোধের জেরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত না।”
তিনি পোস্টে উল্লেখ করেন, ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের সংগঠিত জনশক্তি ও সুসমন্বয়ের মাধ্যমে অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। ছাত্রদল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ লড়াই করেছে, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ছাত্র অধিকার পরিষদ কোটা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সারাদেশে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, ছাত্রশক্তি মাঠে ও পর্দার পেছনে থেকে সিভিল সোসাইটি ও সাংস্কৃতিক বলয়ে আস্থা তৈরি করে।
তিনি আরও লেখেন, ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ, ছাত্র ফেডারেশনসহ অন্যান্য বাম ছাত্র সংগঠন মাঠ ও বক্তব্য ধরে রেখেছে। বামপন্থী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো জুলাইয়ের শেষ দিকে রাজপথে নেমে জনগণের মধ্যে সাহস সঞ্চার করেছে। আলেম সমাজ ও মাদ্রাসার ছাত্ররা, বিশেষ করে যাত্রাবাড়ীর মতো এলাকায়, দীর্ঘসময় রাজপথে প্রতিরোধ চালিয়ে গেছেন।
শ্রমজীবী মানুষ, রিকশাচালক, প্রাইভেট শিক্ষার্থী ও নিম্নবিত্তরা প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ স্পটে সক্রিয় ছিলেন। নারীরা শুধু প্রতিবাদে অংশ নেননি, বরং আহতদের সেবায় ও অভিভাবকদের সাহস জোগাতেও পাশে ছিলেন। বিশেষ করে মায়েরা ও বোনেরা কার্ফিউর মধ্যেও রাস্তায় নেমে সাহস জুগিয়েছেন।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অনেক জায়গায় নিজেরাই নেতৃত্ব দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নীরবে কিন্তু কার্যকরভাবে অভ্যুত্থানকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। ছাত্রলীগের একটি অংশ বিদ্রোহ করে অভ্যুত্থানে যুক্ত হয়েছে।
উঠতি মধ্যবিত্ত শ্রেণি জুলাইয়ের শেষ দিকে রাজপথে নেমে অভ্যুত্থানকে আরও ব্যাপকতা দেয়। চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এবং সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া কর্মীরা একাত্মতা প্রকাশ করে অভ্যুত্থানকে আরও শক্তিশালী করে তোলেন। প্রবাসী শ্রমিক, চাকরিজীবী ও পেশাজীবীরাও আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের আন্দোলনকে তুলে ধরেছেন।
সবশেষে মাহফুজ আলম বলেন, “কবি, সাহিত্যিক, পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল, সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার এবং র্যাপাররা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন। জনগণের লড়াইয়ের কার অবদান অস্বীকার করবেন?”

