আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

পাঠ্যবইয়ে এরশাদের পতন ও শহীদ নূর হোসেন-মিলনের আত্মত্যাগের কাহিনী

সরদার আনিছ

পাঠ্যবইয়ে এরশাদের পতন ও শহীদ নূর হোসেন-মিলনের আত্মত্যাগের কাহিনী

নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন-পরিমার্জনে প্রথমবারের মতো যুক্ত করা হয়েছে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান ও স্বৈরাচার এরশাদের পতন কাহিনী। এতে সংক্ষিপ্ত আকারে এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ থেকে শুরু করে তার শাসনামলের দুর্নীতি, দমন-পীড়ন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ২৪টি ছাত্রসংগঠনের সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য, ৫, ৭ ও ৮দলীয় জোটের আন্দোলনসহ বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে শহীদ নূর হোসেন ও ডা. শামসুল আলম খান মিলনের আত্মত্যাগের কথাও তুলে ধরা হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি কর্তৃক ২০২৬ সালের অষ্টম শ্রেণির জন্য ছাপানো ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবই পর্যালোচনায় দেখা যায়, এর তৃতীয় অধ্যায়টির নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম’। আগে এ অধ্যায়ের শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’।

বিজ্ঞাপন

পাঠ্যবইটির ৩৪ ও ৩৫তম পৃষ্ঠায় নতুন শিরোনামে এ অধ্যায়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় গণঅভ্যুত্থান পাঠে রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং হাসিনার পতন ও ফ্যাসিবাদ অবসানের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ইতোপূর্বে এ অধ্যায়ে শুধু পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছিল।

তবে রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত কোনো ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা ছাড়াই হঠাৎ করেই নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এ অধ্যায়ের ১২তম পাঠের শুরুতেই বলা হয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাসে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান ও চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান তাৎপর্যপূর্ণ দুটি ঘটনা। গণতন্ত্র, সুশাসন ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার দাবিতে জনগণের ঐক্যবব্ধ আন্দোলনের সফল প্রতিফলন হচ্ছে এ দুটি গণঅভ্যুত্থান।

এতে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের বর্ণনায় বলা হয়, ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে এক সম্মিলিত প্রতিবাদ। তিনি ১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সীমিত করেন। ফলে গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। দুর্নীতি, দমন-পীড়ন ও দুঃশাসনের বিস্তার ঘটে। দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে ছাত্রসমাজ, পেশাজীবী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ আন্দোলনে নামে।

শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগের কথা তুলে বলা হয়, ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ‘স্বৈরাচার নীপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ শ্লোগান লেখা বুকে পুলিশ গুলি চালালে নূর হোসেন শহিদ হন। এর ফলে আন্দোলন গতি পায়। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে এ আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অক্টোবর মাসে এরশাদের শাসন-বিরোধী ২৪টি ছাত্রসংগঠনের ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ গঠন এবং নভেম্বর মাসে ৮ দলীয় জোট, ৭ দলীয় জোট ও ৫ দলীয় জোটের সমন্বয়ে প্রণীত ‘তিন জোটের রূপরেখা’ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখে। ফলে সারাদেশে হরতাল, বিক্ষোভ, মিছিল ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে।

একইভাবে ডা. শামসুল আলম খান মিলনের আত্মত্যাগের বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, ২৭ নভেম্বর এরশাদের দলীয় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. শামসুল আলম খান মিলন নিহত হলে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন-বিক্ষোভে সর্বস্তরের জনগণও যোগ দেয়। এই গণবিক্ষোভের মুখে অবশেষে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন। পরবর্তী সময়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ফিরে আসার পথ উন্মুক্ত হয়।

সবশেষে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের উল্লেখযোগ্য পাঁচটি কারণের কথা তুলে ধরে বলা হয়, সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসন; বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুপস্থিতি; সুশাসনের অভাব; ব্যাপক দুর্নীতি এবং শাসনব্যবস্থায় জনগণের আস্থাহীনতার কারণেই এ গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।

প্রসঙ্গত, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগী ছিল স্বৈরশাসক এরশাদের জাতীয় পার্টি। ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট ভারত সফর শেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে আমার খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কার সঙ্গে এবং কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারব না। আলাপ সেভাবে হয়েছে। সেই আলাপ নিয়ে ভারত কিছু বলতে চাইলে বলতে পারে, কিন্তু তাদের অনুমতি ছাড়া কিছু বলতে পারব না।’

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ

এলাকার খবর
Loading...