পশ্চিমা ১১ দেশের যৌথ বিবৃতি

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়

কূটনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ১৮

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের পথ খুঁজে বের করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে ঢাকায় অবস্থিত ১১টি কূটনৈতিক মিশন। আগামী মাসে নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা বিষয়ে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একসঙ্গে কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আট বছরপূর্তিতে পশ্চিমা বিশ্বের এই ১১ দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিশ্রুতির কথা জানায়। গতকাল সোমবার ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস তাদের এক্স হ্যান্ডেল ও ফেসবুক পেজে এই যৌথ বিবৃতিটি দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিবৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আট বছর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কারণে রোহিঙ্গাদের ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। ১১ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণের চলমান উদারতার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই, যারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রত্যাবাসনের পথ খুঁজে বের করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সীমান্তবর্তী স্থানচ্যুতি অব্যাহত রয়েছে, রাখাইনে অনেক রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রয়েছে। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি তাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেয় না। এ পরিস্থিতিতে কেবল তাদের বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ মোকাবিলা করেই সমাধান করা যেতে পারে। এর জন্য একটি শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল মিয়ানমার প্রয়োজন।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা স্বীকার করি যে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি সময়সীমা এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি এবং সব পক্ষকে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছি। আমরা সামরিক শাসন এবং অন্যান্য সশস্ত্র পক্ষের দ্বারা সংঘটিত ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানাই। সব সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করার এবং নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক প্রবেশাধিকারের জন্য আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করি। আমরা সামরিক শাসনকে অন্যায়ভাবে আটক হওয়াদের মুক্তি দেওয়ার জন্য আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করি। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন এবং অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহির আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থনে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

১১ দেশের ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে আসন্ন উচ্চ-স্তরের সম্মেলনসহ মিয়ানমারের পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশে সম্পর্কিত মানবিক সংকটের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব। আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আরো টেকসই সমাধানের পক্ষে, যেমনÑ রোহিঙ্গাদের জন্য স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি করা এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রস্তুত করা।

আমরা রোহিঙ্গাদের অর্থপূর্ণ সম্পৃক্ততা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দিচ্ছি, যাতে তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং বাংলাদেশে থাকাকালীন নিরাপদ, উদ্দেশ্যমূলক ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। আট বছর পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে। আমরা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধান খুঁজতে এবং এর মূল কারণগুলো সমাধান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত