টেকসই কৃষি পরিসংখ্যানের তথ্য

উৎপাদন খরচ ওঠে না ৫৬ শতাংশ কৃষকের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৫, ১০: ৪৫

ফসল ঘরে নেওয়ার পরও দেশের ৫৬ শতাংশ কৃষকের উৎপাদন খরচ ওঠে না। অবশিষ্ট ৪৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ চাষি মুনাফা করতে পারেন। অন্যদিকে চাষিদের এক-তৃতীয়াংশ সরকারের আর্থিক সুরক্ষার বাইরে রয়েছেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট খাতের ৬০ শতাংশ জমিতে অদক্ষ শ্রমিকরা কাজ করেন। যাদের অনেকেই সার ও কীটনাশক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন।

গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ‘উৎপাদনশীল ও টেকসই কৃষি জরিপ-২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদন এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আওতাধীন টেকসই কৃষি পরিসংখ্যান (এসএএস) প্রকল্পের আওতায় জরিপটি পরিচালনা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বিবিএসের মহাপরিচালক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল হক পাটোয়ারী, পরিসংখ্যান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী।

জরিপে দেখা গেছে, দেশের টেকসই কৃষির ৪৪ দশমিক ৩৭ শতাংশের মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ২০ শতাংশ কৃষিজমি ‘প্রত্যাশিত’ স্তরে এবং ৪৩ দশমিক ১৭ শতাংশ ‘গ্রহণযোগ্য’ স্তরে পৌঁছেছে। এতেই প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশের কৃষিজমির বিশাল অংশ এখনো টেকসই চাষের আওতায় আনতে আরো প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

টেকসই কৃষি সূচকের কাঠামো ও পরিমাপ পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয় তিনটি ক্যাটাগরিতে। তার একটি হলো- অর্থনৈতিক টেকসই। এই ক্যাটাগরির মধ্যে কৃষিজমির উৎপাদনশীলতায় বলা হয়, কৃষিজমির প্রতি হেক্টরে আউটপুট মান বা উৎপাদনের আর্থিক মূল্য কৃষির প্রকৃত উৎপাদনক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপক। জরিপ অনুযায়ী, দেশের মাত্র ৪৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ কৃষিজমি এই সূচকে টেকসই হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, অর্থাৎ এই অংশের জমি একযোগে উৎপাদনশীল এবং টেকসইভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

মোট খামারভিত্তিক আয়ের ক্ষেত্রে বলা হয়, অর্থনৈতিক টেকসইয়ের সবচেয়ে শক্তিশালী সূচক হিসেবে বিবেচিত ‘নেট ফার্ম ইনকাম’ বা মোট খামারভিত্তিক আয় প্রতিফলিত করে কৃষিকাজ থেকে প্রকৃত লাভের চিত্র। জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ কৃষিজমি গত তিন বছর অর্থাৎ ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে অন্তত একটি বছরে লাভজনকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ এসব জমিতে কৃষকরা উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রকৃত অর্থে আয় করেছেন।

ঝুঁকি প্রশমন ব্যবস্থাগুলোতে বলা হয়, একটি টেকসই কৃষি ব্যবস্থা শুধু উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল নয়। বরং কৃষকের আর্থিক সুরক্ষা ও বিপর্যয় মোকাবিলার সক্ষমতাও এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। জরিপে দেখা যায়, দেশের ৬৯ দশমিক ১৬ শতাংশ কৃষিজমি এমন কৃষক পরিবারের অধীনে রয়েছে, যারা কোনো না কোনো ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সুবিধা নিচ্ছেন। এ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে কৃষি ঋণ গ্রহণের সক্ষমতা, কৃষি বিমা কাভারেজ অথবা খামারের বৈচিত্রায়ন যেমন- একাধিক ফসল চাষ, মাছ চাষ, গবাদিপশু পালন ইত্যাদি। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কৃষক এখনো এসব সুরক্ষা বলয়ের বাইরে রয়ে গেছে।

দেশের ৭২ দশমিক ৭৫ শতাংশ কৃষিজমি এমন পরিবারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যাদের জমির অন্তত ৫০ শতাংশ মাটির অবক্ষয়ের শিকার। এ তথ্য দেশের কৃষিজমির গুণগত মানের অবনতি এবং দীর্ঘ মেয়াদে উৎপাদনের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত। এটি টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনায় মাটির সঠিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরে।

পানির প্রাপ্যতার বৈচিত্র্যে বলা হয়, দেশের ৮১ দশমিক ৬৬ শতাংশ কৃষিজমি পর্যাপ্ত বা শ্রেণিবদ্ধপর্যায়ে পানি প্রাপ্যতার আওতায় রয়েছে, যা কৃষির পরিবেশগত টেকসইতার জন্য একটি ইতিবাচক দিক।

সার ব্যবস্থাপনায় বলা হয়, মাত্র ৫৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ কৃষিজমি এমন পরিবারের অধীনে রয়েছে, যারা সার ব্যবস্থাপনায় প্রস্তাবিত আটটি পদ্ধতির মধ্যে কমপক্ষে দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করছেন। এটি দেখায় যে একটি বড় অংশ এখনো রাসায়নিক ব্যবহারে সচেতন বা দক্ষ নয়, ফলে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের ঝুঁকি রয়ে যাচ্ছে।

কীটনাশক ব্যবস্থাপনায় বলা হয়, ৫১ দশমিক ৩৭ শতাংশ কৃষিজমি কীটনাশক ব্যবহারে টেকসই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করে। এটি আশঙ্কাজনকভাবে কম, যা পরিবেশগত ভারসাম্য ও কৃষকের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নিরাপদ ও প্রশিক্ষণভিত্তিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

এ ছাড়া জীববৈচিত্র্য-সহায়ক কৃষি চর্চায় বলা হয়, ৭১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ কৃষিজমি এমন কৃষক দ্বারা ব্যবস্থাপিত হয়, যারা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়ক চাষাবাদ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। এটি পরিবেশবান্ধব কৃষির দিকে একটি বড় পদক্ষেপ, যা প্রজাতি, জিনতাত্ত্বিক ও বাস্তুসংস্থানগত স্তরে কৃষির টেকসই উন্নয়নকে সহায়তা করে।

সামাজিক টেকসইতার ক্যাটাগরিতে কৃষি খাতে মজুরি হারে বলা হয়, দেশের ৬০ দশমিক ১২ শতাংশ কৃষিজমি এমন অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে অদক্ষ শ্রমিকরা জাতীয় কৃষি মজুরি হারের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পান।

খাদ্য অনিরাপত্তা অভিজ্ঞতা সূচকে বলা হয়, এই সূচকটি সবচেয়ে চমকপ্রদ ও আশাব্যঞ্জক। জরিপে দেখা যায়, ৯৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ কৃষি পরিবার গত বছর খাদ্যের ঘাটতি বা সংকটের গুরুতর অভিজ্ঞতা পায়নি। এ ছাড়া জমির নিরাপদ ব্যবহার ও মালিকানার অধিকারে বলা হয়, জমির মালিকানা বা ব্যবহারাধিকারের টেকসইতা কৃষি উৎপাদনের জন্য একটি মৌলিক ভিত্তি। জরিপ অনুযায়ী, ৮৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ কৃষিজমি এমন কৃষক পরিবারের অধীনে রয়েছে, যারা জমির ওপর স্থায়ী ও নিরাপদ অধিকার ভোগ করছেন।

অসদাচারণের দায়ে টঙ্গী পাইলট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত