আদালতের আদেশ মানতে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে গেজেট জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এছাড়া এনআইডি সংশোধন আরো দ্রুত ও সহজ করা হবে বলেও জানান তিনি। সেই সঙ্গে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা চিহ্নিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে বাদ দেওয়া হবে বলেও জানান নির্বাচন কমিশনার।
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন অন্য চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
গত মঙ্গলবার জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির এক নেতা বলেছেন, ইশরাক হোসেনকে মেয়র করে গেজেট জারি ইস্যুতে ইসিকে পক্ষ করে যে আপিল হয়েছে সেখানে পক্ষ হয়নি এবং আপিলও করেনি এবং এবং আইন উপদেষ্টা বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের আগেই ইসি গেজেট প্রকাশ করেছে এ দুটির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আদালত হলো আমাদের অনুভূতির জায়গা। সেখান থেকে আসা নির্দেশও দ্রুত বাস্তবায়ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসব নানা কারণ বিবেচনা করে আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার অপেক্ষা না করে গেজেট প্রকাশ করেছিলাম। আপনাদের বুঝতে হবে, দশ দিনের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করার কথা ছিল, আমরা নিষ্পত্তি করেছি। এটা হচ্ছে আমাদের মতামত। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছিলাম। প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যে না আসায় আদালতের আদেশ যাতে ব্যত্যয় না হয় এজন্য আমরা সেটা পালন করেছি। আমরা তো সংক্ষুব্ধ নই। রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ হলে আদালতে যেতাম।
গত রোববার ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে পরামর্শ চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো এবং তাঁদের আদেশের বাধ্যবাধকতা প্রতিপালন করতে ইসি এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে আমার দেশকে নিশ্চিত করেন। বলেন, নিদের্শনা যথাসময়ে বাস্তবায়ন না করলেও তাঁরা আদালত অবমাননার কারণে দোষী সাব্যস্ত হতেন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ করে ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের ফলাফল বাতিল চেয়ে আদেশন করেছিল। গত গত ২৭ মার্চ রায় দেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল।
এনআইডি সংশোধন সহজ হচ্ছে
এদিকে, আবুল ফজল মো সানাউল্লাহ বলেন, যারা আমাদের সেবা নিয়ে থাকে, সেই আইনটা সহজ করা, যেন সেবাটা সহজে দেওয়া যায়- এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষত জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন সংক্রান্ত আবেদন দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে, এটাকে কী করে সহজীকরণ করা যায় সে আলোচনা হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনো ব্যক্তি বা নাগরিকদের যদি অসৎ উদ্দেশ্যে না থাকে সেগুলোকে সহজভাবে সমাধান করে দেওয়া হবে। অনেকে দ্বৈত কার্ড বা এনআইডি নিয়েছে। এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। এদের ক্ষেত্রে ভুলভাবে কেউ দুইবার নিলে প্রথমটা থাকবে, দ্বিতীয়টা বাদ যাবে। এছাড়া বয়স বেশি কিন্তু তা কমিয়ে একটা চাকরি নিয়েছে এমন হলে আমরা নিরুৎসাহিত করবো। এমন হলে সেটা কমিশন পর্যন্ত আসবে। আবার পুরো পরিচয় পরিবর্তন করতে চাইলে আমরা কঠোর হবো। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আবেদন নিষ্পত্তিতে সময় লাগলেও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এটা করতে হবে। ডাটা সেন্টারের স্বচ্ছতার জন্যও এটা করতে হবে।
মো. সানাউল্লাহ বলেন, ডাটাবেজে ম্যাচ ফাউন্ড ভোটার আছে ২ লাখ ৯ হাজার। যেটা পুরো ডাটা সেন্টারের দশমিক ১৬ শতাংশ। অনেক সময় শ্রমিক ভাই বা মা-বোনদের কারও কারও আঙ্গুলের ছাপ পরিষ্কার থাকে না। অনেক সময় এ কারণে ফলস ম্যাচ আসে। এগুলো যেন দ্রুত করা যায়- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রোহিঙ্গা ভোটার প্রসঙ্গে বলেন, গত বছর কক্সবাজারের একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এক ব্যক্তি রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অভিযোগ নিয়ে আদালতে একটি রিট করেছিলেন। তিনি নির্বাচন বন্ধ চেয়েছিলেন। নির্বাচন তো বন্ধ হয়নি। তবে আদালত রোহিঙ্গা ভোটার অন্তর্ভুক্তির বিষয় তদন্ত করতে বলেছিলেন। আমরা বিশেষ এলাকা হিসেবে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভোটার তালিকায় যাতে রোহিঙ্গা ঢুকতে না পারে সেজন্য নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করে থাকি। তারপরও প্রতারণা করে কেউ ঢুকে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে।
আশু বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার সুপারিশ চূড়ান্ত
আশু বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ। তিনি জানান, রাজনৈতিক বিতর্ক ও আর্থিক সংশ্লেষ নেই- বাস্তবায়নযোগ্য এমন নির্বাচনি সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। ১০ থেকে ১২টি সুপারিশ হবে সব মিলিয়ে।
এটা এখন পাঠিয়ে দেবো। এখানে তিন ধরনের ক্যাটাগরি ছিল। যেটা আশু বাস্তবায়নযোগ্য কিন্তু রাজনৈতিক কোনো বিতর্ক নাই, সেগুলো আমরা অনুমোদন দিয়ে দিয়েছি। যেগুলো ঐক্যমত্যের বিষয় আছে- সেগুলো নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করিনি। আবার যেগুলো আগে দিয়েছি, সেগুলো বলেছি।
আখতার আহমেদ বলেন, কিছু আছে নির্বাচন কমিশন নিজেই বাস্তবায়ন করবে। বিধি সংশ্লিষ্ট যেগুলো, সেগুলো ইসি করতে পারবে। রাজনৈতিক দলগুলো যে বিষয়গুলোতে একমত হবে সেগুলো নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই।

