বিজ্ঞানীদের শিক্ষা ছুটি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ

রকীবুল হক
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৬: ৪২

চাকরিবিধি অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের উন্নত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপের এ সুযোগ নিচ্ছেন অনেকে। কিন্তু সম্প্রতি এ ধরনের স্কলারশিপের জন্য অনেকের শিক্ষা ছুটি মন্ত্রণালয় থেকে নাকচ করা হচ্ছে। সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও বিভিন্ন অজুহাতে অযৌক্তিভাবে এসব শিক্ষা ছুটির আবেদনে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তরুণ বিজ্ঞানীরা।

স্কলারশিপের সুযোগ ধরে রাখতে কেউ কেউ যেমন বাধ্য হয়ে চাকরি ছাড়ছেন আবার ঝুঁকি মনে করে চাকরি বহাল রাখতে অনেকে স্কলারশিপ ত্যাগ করছেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মাঝে চরম অসন্তোষ ও হতাশা বিরাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটির অনুমোদন দেওয়া হলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে সদ্য যোগ দেওয়া সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তা বাতিল করা হচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ। এমনকি শিক্ষা ছুটি নিয়ে স্কলারশিপ নেওয়া অনেকের ছুটি বাতিলও করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে কর্মরত অনেকের শিক্ষা ছুটির আবেদন বাতিল করার ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকের শিক্ষা ছুটিতে থাকার অজুহাতেও নতুন করে আবেদন মঞ্জুর করা হচ্ছে না।

তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে মো. মোকাব্বির হোসেন আমার দেশকে বলেন, শিক্ষা ছুটি নিয়ে নতুন কোনো নিয়ম করা হয়নি। যাদের ‘ফুল ফান্ডেড’ স্কলারশিপ আছে, নিয়মানুযায়ী তাদের ছুটি অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। তবে যেসব আবেদন বাতিল করা হয়েছে, সেগুলো ফুল ফান্ডেড নয়, অ্যাসিস্ট্যানশিপ স্কলারশিপ। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা ছুটিতে থাকা ব্যক্তিদের কোয়ার্টারলি রিপোর্ট পাঠাতে হয়। কিন্তু যারা এ রিপোর্ট পাঠাননি, পাঠালেও তা ফেক বা গাইড অস্তিত্বহীনÑএমন ব্যক্তিদের ছুটি বাতিল করা হচ্ছে।

শিক্ষা ছুটির আবেদন নামঞ্জুর হওয়া বিসিএসআইআরের একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তার স্কলারশিপটি ফুল ফান্ডেড হওয়া সত্ত্বেও তা মঞ্জুর করা হয়নি। আসলে ফুল ফান্ডেড সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা নিয়েই জটিলতা দেখা দিয়েছে। বাস্তবে ফুল ফান্ডেড হওয়া সত্ত্বেও তা গ্রহণ করছে না মন্ত্রণালয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের কত শতাংশ কর্মী শিক্ষা ছুটিতে যেতে পারবেন, এ ধরনের কোনো নীতিমালা নেই। এর আগে এ ধরনের কোনো জটিলতা ছিল না।

জানা গেছে, শিক্ষা ছুটি না পেয়ে চলতি মাসে বিসিএসআইআরের দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে গত জুলাইয়ে শিক্ষা ছুটির আবেদন করেও তাতে অনুমোদন পাননি তিন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) এক কর্মকর্তারও আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি।

একই ভাবে শিক্ষা ছুটি নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একজন বিজ্ঞানী জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে চলতি মাসেই একজন চিকিৎসক ও তিনজন বিজ্ঞানীর উন্নত স্কলারশিপ থাকা সত্ত্বেও ছুটির আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। এছাড়া দুজনের পূর্বানুমতি দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, একসঙ্গে অনেকে দেশের বাইরে শিক্ষা ছুটিতে থাকায় দাপ্তরিক কাজ ব্যাহত হওয়ার অজুহাতে এসব আবেদন বাতিল করা হয়েছে। তবে এ ধরনের কারণ দেখানোর এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের নেই। কারণ কাজ ব্যাহত হবে কি না, তা দেখবেন কমিশন চেয়ারম্যান। তিনি অনুমোদন দিলেও মন্ত্রণালয় কেন বাধা দেবে?

তিনি আরো বলেন, গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষাকে উৎসাহিত করা হলেও বর্তমানে তা বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। কমিশনের ইতিহাসে কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

বিজ্ঞানীদের উচ্চশিক্ষায় বা প্রশিক্ষণে এ ধরনের বাধা প্রদান গবেষণার অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত