কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬২% কমবে দুই দশক পর

আজাদুল আদনান
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৫, ১১: ২৬

দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছেই চলেছে। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশই কর্মক্ষম। এর মধ্যে ২৮ ভাগই তরুণ। দেশের ইতিহাসে এত কর্মক্ষম জনবল অতীতে কখনো ছিল না। তবে দুই দশক পর এই ধারা কমতে শুরু করবে। বাড়বে শিশু ও বয়স্ক লোকের সংখ্যা। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ধরে রাখতে যে বিনিয়োগ দরকার, সেখানে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ। কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি, বাল্যবিয়ে ও ১৮ বছরের আগে গর্ভধারণের হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমাতে হবে। এজন্য সর্বোচ্চ বিনিয়োগ ও সরকারের আন্তরিকতা দরকার।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ শুক্রবার বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য, ‘ন্যায্য ও সম্ভাবনাময় বিশ্বে পছন্দের পরিবার গড়তে প্রয়োজন তারুণ্যের ক্ষমতায়ন।’

দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, দক্ষ জনগোষ্ঠী দেশের সম্পদ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী ও তরুণ। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, জীবনমান এবং ক্ষমতায়নের ওপর নির্ভর করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন। শুধু স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা কিংবা পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে পছন্দমতো সিদ্ধান্ত গ্রহণই যথেষ্ট নয়, টেকসই উন্নয়ন, উন্নত জীবন ব্যবস্থা এবং সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে প্রজন্মান্তরে ন্যায্যতা ও ন্যায়-নীতিবোধ ধরে রাখা একান্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ছেলেমেয়ের মধ্যে কোনো বৈষম্য না করে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তথা ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সি ১০ কোটি ৫০ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর ৬২ শতাংশ। এর মধ্যে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি তরুণ ৪ কোটি ৭৪ লাখ, শতকরায় যা ২৮ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান আমার দেশকে বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে যত কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী, তা ভারত, পাকিস্তানসহ আমাদের মতো অর্থনীতির দেশগুলোতেও রয়েছে। এই জনগোষ্ঠী দেশের পুরো অর্থনীতিকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্যে যে ধরনের পদক্ষেপ দরকার, ভয়ংকরভাবে সেখানে ঘাটতি রয়েছে। তাদের স্বাস্থ্যবান রাখার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি, স্ক্রিনিংয়ে নজর দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছর পর আজকের কিশোর-কিশোরীরা অর্থনীতির জোনে ঢুকবে। কাজেই কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যে এখনই গুরুত্ব না দিলে অন্যান্য দেশের থেকে মানসিক, শারীরিক ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে থাকবে। তাই অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হলে সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান জনসংখ্যায় গুরুত্ব দিতে হবে।

কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরির প্রধান বাধা বাল্যবিয়ে ও অকালে গর্ভধারণ। সম্প্রতি ‘মনিটরিং দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব এসডিজিস ফল এনশিওরিং গার্লস অ্যান্ড চাইল্ড রাইটস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের পরিবারে প্রায় ৩৯ শতাংশ নারী জানেন না যে, তারা ১৮ বছর বয়সের আগেই গর্ভধারণ করেন। এই হার সবচেয়ে বেশি ৪৯ শতাংশ উত্তরের জেলা রংপুরে। অপরিকল্পিত এসব গর্ভধারণের ফলে প্রতি বছর প্রায় পৌনে ৬ লাখ অপরিণত শিশুর জন্ম হচ্ছে। এর মধ্যে পাঁচ বছরের আগেই মারা যাচ্ছে ২২ শতাংশ।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মো. মনজুর হোসেন আমার দেশকে বলেন, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর কথা আসলেই সবার আগে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবাকে সামনে রাখতে হবে। ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সি এসব কিশোর-কিশোরীর মানসিক, পুষ্টি, প্রজনন স্বাস্থ্য ও তাদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ইতোমধ্যে ন্যাশনাল অ্যাডোলেসেন্ট হেলথ স্ট্র্যাটেজি ২০১৬ থেকে ২০৩০ নির্ধারণ করেছে সরকার। সে আলোকে জাতীয় পর্যায়ে তিনটি সেবাকেন্দ্র, জেলা পর্যায়ে এমসিডব্লিউসি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ প্রায় ৫৩ হাজার কেন্দ্রে কৈশোরবান্ধব সেবা চালু রয়েছে।

তিনি বলেন, তরুণদের নিয়ে কাজ করতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের কার্যক্রম ছিল ১৯ বছর পর্যন্ত। দেশে এখনো ১৮ বছরের আগেই ৫১ ভাগ কিশোরীর বিয়ে হচ্ছে। এর মধ্যে আবার ২০ ভাগই ১৮ বছরের আগেই গর্ভধারণ করছে। এ দুটি সংকট মাতৃমৃত্যুর হারে প্রভাব ফেলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুধু সেবা দিতে পারে।

এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে তরুণদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতায় কমিউনিটি, পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের বড় একটি অংশের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এজন্য আমরা এখন চিন্তা করছি, তরুণদের মাধ্যমেই তাদের প্রজননসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কীভাবে উন্নত করা যায়। ইতোমধ্যে মেডিকেল স্টুডেন্ট সোসাইটি, বিএনসিসি, স্কাউটসহ যারা তরুণ-তরুণীদের নিয়ে কাজ করে তাদের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু, শিক্ষা, সমাজ কল্যাণসহ ১৪টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় দরকার বলে জানান তিনি।

বিষয়:

জনসংখ্যা

জৈন্তাপুরে ‘বিজিবির’ গুলিতে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ

নির্বাচনের আগে উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যেও শুদ্ধি অভিযান জরুরি

দুদিনব্যাপী মেহেদী উৎসব ইবি ‘ছাত্রী সংস্থা’র প্রকাশ্য কার্যক্রম শুরু

বার্ষিক পরীক্ষার আগেই স্কুল-কলেজ ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের দাবি

‘মুসলমানদের মতো হইয়ো না’ বলা জাভেদকে ধুয়ে দিলেন লাকি আলী

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত