তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে নতুন আপিলের অনুমতি

  • ফিরিয়ে দিলে কবে কার্যকর হবে- প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির
  • সাবেক প্রধান বিচারপতির সাত বছর জেল হতে পারে: অ্যাটর্নি জেনারেল
  • খায়রুল হকের বিরুদ্ধে আরো মামলা হবে: এড. জয়নুল আবেদীন
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ২১: ০০

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনায় (রিভিউ) আপিলের অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারকের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ অনুমতি দেয়। আগামী ২১ অক্টোবর এ বিষয়ে পূনাঙ্গ শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে রাজনৈতিক দল ও ছয় ব্যক্তির করা চারটি আবেদনের শুনানি হয়।

শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দিয়ে সাময়িক সমাধান দিতে চায় না আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কার্যকর সমাধান চায়, যাতে এটি বারবার বিঘ্নিত না হয়। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে এটি যাতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখে, সেটাই করা হবে। এ সময় তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিলে তা কখন থেকে কার্যকর হবে সে প্রশ্নও রাখেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে অংশ নেন। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ। পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া শুনানি করেন।

অন্য রিভিউ আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী এএস এম শাহরিয়ার কবির উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মামলায় ইন্টারভেনার (ব্যাখ্যাকারী) হিসেবে যুক্ত আছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক ।

শুনানি শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় লেখা থেকে শুরু করে স্বাক্ষর করা পর্যন্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এর জন্য তার সাত বছর সাজা হতে পারে।

তিনি বলেন, খায়রুল হক জানতেন, একটা রায় ঘোষণার পর তা একমাত্র রিভিউ ফোরামে পরিবর্তন করা যাবে। এরপরও ক্ষমতা না থাকলেও রায় বদলেছেন, এটা অপরাধ। আমরা এটা আদালতের নজরে আনবো ।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, গেল দেড় দশকে দেশের মানুষ শাসিতের পরিবর্তে শোষিত হয়েছে নানাভাবে। মানুষ গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যেসব সিস্টেম ছিল সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে এবং মানুষ বিচার পায়নি।

তিনি বলেন, খায়রুল হকের দেয়া রায় বাতিল হলে দেশের গণতন্ত্র সুসংহত করার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হবে। আপিলে আমাদের প্রার্থনা থাকবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে যে রায় হয়েছে, সেই রায় বাতিল করে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের দ্বার উন্মোচন করে দেয়া।

ব্রিফিংয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, বিচারপতি খায়রুল অবসরে যাবার পরও রায় লিখে মারাত্মক অপরাধ করেছেন। তার বিরুদ্ধে আরো মামলা হওয়া উচিত।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে ১৪ বছর আগে বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) বিষয়ে শুনানি হয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত