সিএনজি ইস্যুতে বিআরটিএ চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ১৪

ঢাকা মহানগরীর ২০ বছরের পুরোনো লক্কড়-ঝক্কর বাস উচ্ছেদে অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ঠেকাতে ফিটনেসবিহীন পুরোনো বাসগুলো রাতারাতি গোলাপি রং ধারণ করে চালাতে গিয়ে নগরজুড়ে প্রতিদিন গণপরিবহন সংকটে ভয়াবহ যাত্রী দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ অভিযোগ করেন। এ সময় সড়ক অবরোধ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের তাণ্ডবে ভয়াবহ যাত্রী দুর্ভোগ তৈরির জন্য দায়ী করে বিআরটিএ চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ঢাকা মহানগরীর ২০ বছরের পুরোনো বাস মে মাসের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার সব রুট বিলুপ্ত করে ৯টি রুটে ৯ কালারের উন্নত বাস পরিষেবা চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমন নির্দেশনা অপব্যবহার করে নতুন উন্নত বাসের বদলে ২০-৪০ বছরের মেয়াদোর্ত্তীণ লক্কড়-ঝক্কর ফিটনেসবিহীন বাস রাতারাতি গোলাপি রং করে চলানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব বাস মুখ তুবড়ে পরা ই-টিকিটিং পদ্ধতিতে কাউন্টারে ভাড়ার টাকা আদায় করে চালক-সহকারীর দৈনিক হারে ট্রিপভিত্তিক মজুরি নির্ধারণ ও সাপ্তাহিক, পাক্ষিক হারে মালিকের জমা বাস মালিক সমিতি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয় বলে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক চুক্তিতে চলা বাসগুলোর মালিকেরা সমিতি থেকে সঠিক হিসাবে তাদের বাসগুলোর জমাটাকা পাওয়া নিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে চুক্তিতে চলা বাসের আয় থেকে কম মজুরি নির্ধারণ করায় চালক ও সহকারীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। প্রান্তিক বিভিন্ন বাসের মালিক ও চালক-সহকারীরা তাদের কিছু কিছু বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। বাসের ভাড়া নির্ধারণের শর্ত লঙ্ঘন করে এহেন অব্যবস্থাপনায় গণপরিবহন সংকটে ভয়াবহ যাত্রী দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে নগরজুড়ে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সংকট নিরসনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ, ট্র্যাফিক বিভাগ ও সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের কোনোপ্রকার হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। নগরীতে যেকোনো উন্নত গণপরিবহন পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রো আরটিসির অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি। ২৬১০টি বাসের কালার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র পূর্ব অনুমোদন নেননি। এসব বাসের তালিকা বিআরটিএ বা ট্র্যাফিক বিভাগ কারো কাছে পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে এসব বাস-মিনিবাসের সিংহভাগই ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কর, অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নোংরা আবর্জনায় ভরপুর। কোনো কোন বাসের পেছনে লাইট-ইন্ডিকেটর আর লুকিং গ্লাস নেই। আসনে দুই পা মেলে বসা যায় না। কোন কোন বাসের পাদানি, ধরার হ্যান্ডেল ভাঙ্গা। ময়লা-আবর্জনা, ছাড় পোকা-তেলাপোকায় ভরপুর। কোন কোন বাসের সিট তেল চিটচিটে। কোন বাসের আসনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। উপরন্তু কোন কোন পথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব মেয়াদোর্ত্তীণ লক্কড়-ঝক্কর ফিটনেসবিহীন বাস উচ্ছেদ ঠেকাতে কেবলমাত্র উপরে গোলাপি রং ধারণ করেছে বলে পর্যবেক্ষণকালে অভিজ্ঞমহল মনে করেন। এমন পরিস্থিতিতে এসব মেয়াদোর্ত্তীণ ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কর বাস উচ্ছেদ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে মালিক সমিতির পরিবর্তে একটি কোম্পানির আদলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে রুট রেশনলাইজেশন পদ্ধতিতে করিডর ভিত্তিক চলাচল নিশ্চিত করে ৫,০০০ উন্নতমানের বাস নামানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

রোববার নগরজুড়ে সড়ক অবরোধ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের তাণ্ডরে ভয়াবহ যাত্রী দুর্ভোগ তৈরির জন্য বিআরটিএ’কে দায়ী করে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি বলছে, জনগণের অর্থে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা রুজুর প্রজ্ঞাপন বাতিল করে অসহায় যাত্রীদের ভাড়া নৈরাজ্যকারী অটোরিকশা চালকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত