মিনিকেট চালে ভোক্তা অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত বাতিল, ক্যাব বলছে আত্মঘাতী

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৯: ৪৬

মিনিকেট-জিরাশাইল চাল নিয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর ফলে বাজারে মিনিকেট-জিরাশাইল নামেই বিক্রি হবে চাল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে আখ্যায়িত করেছে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)।

বিজ্ঞাপন

এবিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক এবং কনফিক্ট অব ইন্টারেস্ট। দেশের ১৭ কোটি মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনায় না নিয়ে কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে অচিরেই একটি সাংবাদিক সম্মেলনের কথা ভাবছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গত ২০ জুলাই দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় মিনিকেট ও জিরাশাইল চাল বাজারজাত বন্ধের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। এর আগে ১৩ জুলাই মিটিংয়ের কার্যবিবরণীতে এসব নামে চাল বিক্রি বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এতে বাজার থেকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে মিনিকেট বা জিরাশাইল নামে চালের বস্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দিয়েছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরপর বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানায় চাল বিপণনকারী কর্পোরেট কোম্পানিগুলো।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরের দিন (২১ জুলাই) বাংলাদেশ রাইস ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন ভোক্তা অধিদপ্তরের ওই সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়।

ব্যবসায়ীদের ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের কৃষকদের হাতে প্রায় ৫০ লাখ টন মিনিকেট ও জিরাশাইল ধান মজুত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মিলার এবং বাজারে ডিলারদের হাতে ওই জাতের প্রচুর ধান মজুত রয়েছে। এখন ভোক্তা অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তে চাল মিলগুলো কৃষকদের থেকে মিনিকেট ধান ক্রয় বন্ধ করছে, যাতে মিলগুলোর সঙ্গে কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ সিদ্ধান্তে ৫০ লাখ টন ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং দেশে খাদ্য সংকটের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলেও দাবি জানানো হয় ওই চিঠিতে।

এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ও ভোক্তা অধিদপ্তরের এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে মত দেয়।

এ প্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত মঙ্গলবার একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তরকে। তাতে বলা হয়েছে, বাজারে কোনো পণ্যের বিপণন বন্ধের নির্দেশনা অধিদপ্তরের নেওয়ার এখতিয়ার নেই। সেটা দরকার হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে করা হবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রাজ্জাক আমার দেশকে বলেন, ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর অধিদপ্তরকে একটা নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের উপসচিব প্রভাংশু সোম মহান ভোক্তা অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে তাদের দায়িত্ব যতটুকু তা পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খানের সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, মিনিকেট চালের নামে সস্তা চাল বেশি দামে বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ লাভ করে আসছেন মিলের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মিল মালিকরা ব্রি-২৮ এবং ব্রি-২৯ জাতের ধান থেকে পাওয়া চাল দিয়ে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল তৈরি করছেন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এই দুটি জাতের ধানই সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়।

মিনিকেট চাল নিয়ে গবেষণার জন্য বিগত কয়েক বছরে সরকার বেশকিছু কমিটি গঠন করলেও বাস্তবে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বন্ধ হয়নি চালের এই অসাধু ব্যবসা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা, খাদ্য পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ ইউনিট (এফপিএমইউ) ২০২০ সালে একটি জরিপ চালায়। জরিপে দেখা যায়, আধুনিক অটো রাইস মিলের মালিকরা মেশিনের মাধ্যমে চালের আকার পরিবর্তন করেন এবং পলিশ করে চালকে চকচকে রূপ দেন। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘রাইস মিলিং’। ফলে কোন চাল কোন ধান থেকে আসছে তা বোঝার কোনো উপায় থাকে না ক্রেতার।

দেখতে চিকন ও চকচকে হলেও রাইস মিলিংয়ের সময় চালে বিদ্যমান প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের মতো পুষ্টিগুণগুলো চলে যায়।

এফপিএমইউ প্রকাশিত ২৫ পৃষ্ঠার ওই গবেষণাতে বলা হয়, ‘যেহেতু রাইস মিলিং বা চালের আকার-আকৃতি বদলানো এবং ব্র্যান্ডিং নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি নেই; তাই তারা নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করে যাচ্ছে এবং ক্রেতাদের এই চাল কিনতে বাধ্য করছে।’ এদিকে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের নামে অন্যান্য জাতের চাল বিক্রি করার কথা স্বীকার করেছেন রাইস মিলাররা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মিল মালিক বলেন, বাজারে মিনিকেটের প্রচুর চাহিদা থাকায় এই পন্থা অবলম্বন করেন তারা। এমনকি কখনো কখনো চাহিদা পূরণ করতেই হিমশিম খেতে হয় তাদের।

সাধারণত ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে এই চাল বিক্রি হয়। অন্যদিকে, বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত