উপদেষ্টা আসিফের বাবার গ্রেপ্তার চাইলো ট্রিপল মার্ডারের শিকার পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ২৩: ৫২
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ০২: ০১

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া রুমা আক্তার। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে রুমা আক্তার জানান, গত ৩ জুলাই উপদেষ্টা আসিফের বাবার মদদে তার মা, ভাই ও বোনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা। সেদিন তাকেও কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে আল্লাহ হায়াত রাখায় বেঁচে যান তিনি। তারা থানায় মামলা করলেও প্রধান আসামি উপদেষ্টার বাবার নামসহ কয়েকজনকে বাদ দেয় পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার দিন ট্রিপল নাইনে ফোন দিলেও পুলিশের কোনো সহযোগিতা করেনি অভিযোগ করে রুমা আক্তার বলেন, উল্টো পুলিশের উপস্থিতিতে হত্যা নিশ্চিত করা হয় এবং তার ওপরও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়। হত্যার ঘটনায় মামলা করা হলেও আসামিদের বিভিন্ন হুমকি ও জীবনের নিরাপত্তা না থাকায় পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

রুমা বলেন, এলাকায় আমাদের পরিবারের মানুষ বিশেষ করে আমার মা ছিলেন জনপ্রিয়। স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে দুইবার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করলেও বিএনপি সমর্থিত হওয়ায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই সন্ত্রাসীরা আমার মাকে বিজয়ী হতে দেয়নি। উল্টো জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তখন থেকেই হয়রানি করার জন্য বিভিন্ন মামলাও দিয়ে আসতেছিল। এমনকি মানহানি এবং জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য মাদক এবং চাঁদাবাজির মতো মামলাতেও আমার মায়ের নাম দিয়ে বদনাম করার অপচেষ্টা করেছিল। কারণ, নির্বাচিত না হলেও এলাকার মানুষ তাদের যেকোনো বিপদ-আপদ এবং বিচার সালিশের জন্য আমার মায়ের কাছেই আসতো, যা তাদের জন্য ছিল বড় ঈর্ষার কারণ।

মব তৈরি করে হত্যা করার বর্ণনা দিতে গিয়ে রুমা আক্তার বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার একদিন আগে মোবাইল চুরির ঘটনা নিয়ে শুরু হট্টগোল। মোবাইল চুরির কারণে একটা ছেলেকে আমাদের বাড়ির পাশের রবিউলের বাড়িতে মারধর করা হচ্ছিল, তার বাবা এসে তাদের হাত থেকে কোনোভাবেই ছেলেকে বাঁচাতে না পেরে আমার মায়ের কাছে সাহায্য চায়। তখন আমার মা সেখানে গিয়ে তাদের বলে, চোরটা যদি মরে যায় তাহলে আমরা আশপাশের সবাই ফেঁসে যাবো। হয় তাকে ছেড়ে দাও, না হলে পুলিশে দাও। এই কথা বলার সাথে সাথেই সেখানে থাকা বাচ্চু মেম্বার, রবি,শরিফ, বাছিদ, রফিক, আবু বক্কর, হারুনরা একযোগে বলে উঠে এই তুই চোরের পক্ষ নিচ্ছিস কেন? তুই নিজেও চোর এই বলে আমার মায়ের উপরও চড়াও হয়। আমার ভাই তা শুনে দৌড়ে গিয়ে আমার মাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

অপরদিকে সেই চোরকে সেখান থেকে নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যায় শরীফের লোকজন। ছেলের খোঁজ না পেয়ে চোরের বাবা বাঙ্গরা বাজার থানায় অভিযোগ করলে,বাচ্চু মেম্বার, রবিউল এবং শরীফের লোকজন আমার মাকে সন্দেহ করে যে আমার মা তাকে আইনের আশ্রয় নিতে সহায়তা করেছে। এই অভিযোগে দুই জুলাই রাতে কড়ইবাড়ি গ্রামের তারু মিয়ার বাড়িতে শিমুল চেয়ারম্যান, আনু মেম্বার বাচ্চু মেম্বার, রবিউল এর পরিস্থিতিতে শরিফের আহ্বানে আমার মাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এক গোগন বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে আমার মাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পরবর্তীতে আমরা বিচারপ্রার্থী হবো এই ভয়ে আমাদেরও শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।

তিনি আরও বলেন, হত্যা করাতে বেশ কিছু টাকা লেনদেন এবং কিছু খুনি ভাড়া করা হয়। উপদেষ্টার বাবার কথা উল্লেখ করে তার পারমিশন আছে জানিয়ে শিমুল চেয়ারম্যান পুলিশ প্রশাসন ও মামলা দেখার কথা বলেন, হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য শরিফ, আনু মেম্বার, বাছির, রকি, বাচ্চু মেম্বার, বাবুল, রবিউল, রবিউলের ছেলেরা এবং মিডিয়ার দায়িত্ব নেয় মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল, আবু বক্কর, মোস্তফা, বিল্লাল। সারারাত তারা প্রস্তুতি নিয়ে পরের দিন ৩ জুলাই সকাল ৬টায় সন্ত্রাসী কায়াদায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ও এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। কি নির্মমভাবে ওরা আমার চোখের সামনেই প্রথমে আমার মা, এরপর আমার ভাই ও বোনকে মেরে ফেলে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।

রুমাকে ব্যাপকভাবে কোপানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমার মাথায় ৭২টি শেলাই আছে। শরীরের এমন কোন স্থান নেই যেখানে আঘাত করেনি তারা। তারা ভেবেছিল আমি মারা গেছি। আল্লাহ তার অলৌকিক শক্তি দিয়ে হয়তোবা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

রুমা বলেন, র‍্যাব কয়েকজন আসামি ধরলেও থেকে পরে আর কোন আসামি ধরা হয়নি। তবে, এই মামলা নিয়ে আমাদের আপত্তি থাকলেও থানা-পুলিশ তাতে কর্ণপাত করছে না। কারণ এ ঘটনায় আমার বোন রিক্তা আক্তারকে বাদি করলেও আসামি সাজিয়েছে পুলিশ নিজেই। তাই প্রধান আসামি হিসেবে বিল্লাল মাস্টারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা আসিফের বাবার মদদে এ হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়া শিমুল চেয়ারম্যানরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিছু আসামির জামিনও হয়েছে। অন্য আসামিরা প্রকাশ্যেই ঘুরছেন এলাকায়। আমরা শুনেছি এবং আমাদের বিশ্বাস চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা আসিফের বাসাতেই লুকিয়ে রেখেছে তার বাবা।

কয়েকটি দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। শিমুল চেয়ারম্যান এবং এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

তিনি বলেন, মামলার পুনঃবিন্যাস করতে হবে। সেই সময় পরিবারের তিনজনের হত্যাকাণ্ড এবং বাকিরাও আহত থাকায় আমার বোন রিক্তা আক্তার মামলায় আসামিদের নাম সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেনি এবং মামলার আসামি নির্ধারণ পুলিশ কর্তৃক হওয়ায় অপরাধীদের অনেকের নামই বাদ পড়েছে, যেগুলো নতুন করে লিপিবদ্ধ করতে হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। রুমা বলেন, আজকের পর থেকে আমাদের ওপর আর কোন আঘাত আসলে এর জন্য সব দায় থাকবে উপদেষ্টা আসিফ ও তার বাবা বিল্লাল হোসেনের।

রুমা বলেন, আমাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই সংবাদ সম্মেলনের পর তারা মানে (খুনিরা) আমাদের ওপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠবেন। সুতরাং এরপর আমাদের পরিবারের কারো ওপর কোন আঘাত বা কারো কিছু হলে আপনারা সাক্ষী থাকলেন এর সব দায় নিতে হবে আসিফ মাহমুদকে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের উদ্দেশে আমাদের একটাই কথা, আমাদের পরিবারের মা, ভাই, বোন সবাইকেই হারিয়ে আমরা শেষ। আমাদের আর শেষ করেন না। আমরা বাচঁতে চাই। আমাদের একটু বাচঁতে দিন প্লিজ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত