জুলাই বিপ্লবের অগ্রসেনানী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যার ঘটনায় কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া দুজন এখনো অধরা। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ফয়সাল করিম ও আলমগীর ভারতে পালিয়ে গেছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
এ দুজন গ্রেপ্তার না হওয়ায় কী কারণে হাদিকে হত্যা করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে পারেননি মামলার তদন্তকারীরা। তদন্তকারীরা হাদি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়াদের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রথাগত সোর্স দিয়ে খুনের মোটিভ জানার চেষ্টা করছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ হত্যার কোনো ক্লু মেলেনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, হাদিকে হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ফয়সালকে তার নির্বাচনি প্রচারে দেখা গেছে। ফয়সাল কেন এবং কোন উদ্দেশ্যে এবং কার প্ররোচনায় গুলি করেছে, তার রহস্য উদ্ঘাটন করা যাচ্ছে না। তদন্তকারীরা জানান, কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ফয়সালের সঙ্গে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমের যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
আদাবর থানার একটি মামলায় ফয়সাল আটক হওয়ার পর নাছিম তাকে ছাড়ানোর জন্য পুলিশের কাছে তদরির করেন বলে মামলার তদন্তে উঠে এসেছে। হাদি ১২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হত্যাচেষ্টার যে মামলা হয়েছিল, তার মৃত্যুর পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন ডিবির মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহম্মেদ। হাদিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে মামলাটি করেছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। এজাহারে ফয়সাল করিম মাসুদসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। থানা পুলিশ মামলাটি তদন্তের জন্য পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওসমান হাদির মামলায় এ পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা।
হাদির মামলার বিষয়ে কোনো আপডেট নেই বলে জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম।
তবে মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাদি হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কারা লাভবান হবে এবং নেটওয়ার্কে কারা জড়িত এবং কারা অর্থ দিয়ে কীভাবে সহায়তা করেছে, সেসব তথ্য উদ্ধার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। খুনের প্রাথমিক মোটিভ হিসেবে মামলার তদন্তকারীরা জুলাই আন্দোলনে সামনের সারিতে হাদির অবস্থান নেওয়া, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান এবং ইনকিলাব মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের নেতা হওয়ার কারণে তিনি খুন হতে পারেন বলে মনে করছেন। তার ডিজিটাল কনটেন্টগুলোও পর্যালোচনা করছেন তদন্তকারীরা।
সূত্র জানায়, ফয়সালের তৃতীয় স্ত্রী সামিয়াকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি। তিনি ডিবিকে জানিয়েছেন, ফয়সাল বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত, বিয়ের পর তিনি তা বুঝতে পারেন। ফয়সালের কাছে একাধিক অবৈধ অগ্নেয়াস্ত্র ছিল। বিয়ের রাতেই তিনি ফয়সালের কাছে অস্ত্র দেখতে পান। ফয়সালকে যখন তিনি তালাক দেওয়ার উদ্যোগ নেন, তখন তাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, হাদিকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ইতোমধ্যে উদ্ধার করেছে র্যাব। নরসিংদীর একটি লেক থেকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রসহ তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

