আবারো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঝুঁকি

আনছার হোসেন, কক্সবাজার
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ৩৩

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত ও সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনী আরাকান আর্মির নির্যাতনের মুখে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে অপেক্ষায় আছে। সুযোগ পেলেই তারা যে কোনো সময় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আরাকান রাজ্যের বুথিডং থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা সেলিম উল্লাহ নামে এক যুবক জানান, আরাকান আর্মির নির্যাতনে তিনি মাসহ পরিবারের তিনজনকে হারিয়েছেন। যদিও নিজে প্রাণে বেঁচে আছেন। কিন্তু চোখের সামনেই পরিবারের সদস্যদের হারানোর বেদনা তাকে আজীবন তাড়া করবে।

এদিকে টেকনাফের কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে এসে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারীদের অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, কারও হাত কেটে নেয়া হয়েছে, আবার কেউ কেউ আর কখনো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরাই করতে পারবেন না।

অপরদিকে শুক্রবার রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত টানা গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তে। স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা চৌধুরী বলেন, হঠাৎ করেই ওপারের গ্রামগুলোতে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে নাফ নদে থাকা জেলেসহ সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

তার মতে, এর আগেও দীর্ঘসময় সীমান্তে মর্টার শেলের বিকট শব্দে মানুষ আতঙ্কে দিন কাটিয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত ছিল। হঠাৎ নতুন করে গোলাগুলির শব্দে বাংলাদেশী বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, কিছু লোক সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন। কিন্তু কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, অনুপ্রবেশের সম্ভাব্য পয়েন্টগুলোতে টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

অন্যদিকে সীমান্তে পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় কোস্টগার্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সতর্কাবস্থানে আছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন।

গোয়েন্দা সূত্র গুলো বলছে, গত এক বছরে নতুন করে প্রায় দু’লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এখনও অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা সীমান্তে অপেক্ষা করছে।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও অর্ধলাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা রয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ড. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্তে এখন বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বর্ডার দিয়ে প্রতিনিয়ত মাদক, অস্ত্রসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম বাড়ছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ সর্বদা তৎপর থাকলেও চ্যালেঞ্জ ক্রমেই বাড়ছে।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, সামরিক জান্তা বা নির্বাচিত সরকার যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, মিয়ানমারের নীতির পরিবর্তন না হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।

amar desh_CTG_Division_Coxbazar_Border_Rohingya_Crisis 2

তিনি উল্লেখ করেন, আফগানিস্তান, প্যালেস্টাইন বা ইউক্রেনের শরণার্থীরা তৃতীয় দেশে আশ্রয় পেলেও রোহিঙ্গারা সে সুযোগ পায়নি। ফলে বাংলাদেশে তাদের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। সীমান্তে অস্থিরতার মধ্যে বিজিবি সম্প্রতি আরাকান আর্মির এক সদস্যকেও আটক করেছে, যিনি অস্ত্রসহ পালিয়ে এসেছিলেন। নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে আরো দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সূত্র মতে, এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজন মিয়ানমারের নাগরিক।

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও রাখাইনদের নির্যাতনে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। নাফ নদের ওপারে মংডু এলাকা থেকে শুরু হওয়া সেই ঢল অব্যাহত রয়েছে। এবারও একই ধরনের সংকটের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কার্যকর না হলে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নামা কেবল সময়ের ব্যাপার।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত