সিভিল এভিয়েশনের ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৪৯
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৫২

অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তির পরও শাহজালালসহ কয়েকটি বিমানবন্দরের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল করছে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। এসব প্রকল্প শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে নেওয়া হয়েছিল। কোনো কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল জোরপূর্বক।

সূত্র জানায়, গত ১৬ জানুয়ারি সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত চিঠি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দাপ্তরিক, আবাসিক, মসজিদ, কলেজ একাডেমিক ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত কাজ বাস্তবায়নের বিষয়ে বিমান মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্দেশনা চাওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

চিঠিতে বলা হয়, ২০২৩-২৪ আর্থিক সালে ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত ১০টি কাজ (ইএম-আংশিক পূর্তকাজ ব্যতীত) হাতে নেওয়া হয়। সিএএবির বর্ধিত জনবলের দাপ্তরিক আবাসন, ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষালয় প্রভৃতি সুবিধাদি সৃষ্টির প্রয়োজনে আংশিক দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে; অর্থাৎ ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মঞ্জুর কবীর আমার দেশকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেওয়া এসব প্রকল্প যখন আমরা সশরীরে ভিজিট করি, তখন এগুলোর কোনো অস্বিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এসব উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাধ্যবাধকতা, ডিপিডি না মানা, ফিজিবিলিটি স্টাডি না হওয়া এবং বিমা-সংক্রান্ত কাজগপত্র জমা না দেওয়ায় প্রকল্পগুলো বাতিল করা হয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, সিভিল এভিয়েশনকে আরও গতিশীল করা, রেভিনিউ বৃদ্ধি করা এবং সার্বিক কার্যক্রম অপারেশনাল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সময়োপযোগী ও কল্যাণকর সব ধরনের কার্যকর কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

সংস্থাটির বর্ধিত জনবলের দাপ্তরিক, আবাসন, ধর্মীয় উপাসনা, শিক্ষালয় প্রভৃতি সুবিধার জন্য কাজগুলো জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় কাজ এখনো শুরু হয়নি। এছাড়া এসব কাজের ডিপিপি অনুমোদনের জন্য গেল বছর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেয়; কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

এছাড়া চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পরিচালন বাজেটের আওতাধীন ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত কাজের অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিধিনিষেধ রয়েছে। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সাধারণ বিমা করপোরেশনের ইন্স্যুরেন্স ডকুমেন্টস পাওয়া যায়নি। দাপ্তরিক, আবাসিক, মসজিদ, কলেজ একাডেমিক ভবন সংশ্লিষ্ট কাজগুলো ফিজিবিলিটি স্টাডি করা জরুরি। প্রশাসনিক অনুমোদনসহ সরকার নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ঠিকাদারদের অভিযোগ, কাজ চলমান রয়েছে- এমন কিছু কাজের চুক্তিও বাতিল করা হচ্ছে।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ব্যতীত নতুন আবাসিক-অনাবাসিক ভবন এবং অন্যান্য ভবন স্থাপনা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে চলমান নির্মাণকাজ ন্যূনতম ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হলে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। ফলে চলতি অর্থবছরে ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত কাজের অর্থ ব্যয়ে মন্ত্রণালয়ের বিধিনিষেধ রয়েছে।

ফলে কাজ বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে বেবিচক মনে করছে।

এছাড়া ঠিকা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ঠিকাদার কর্তৃক কাজ শুরুর আগে বাংলাদেশ সাধারণ বীমা কর্পোরেশন থেকে ইন্স্যুরেন্স ডকুমেন্টস বেবিচকের কাছে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তালিকায় বর্ণিত কাজগুলোর ইন্স্যুরেন্স ডকুমেন্টস অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।

অপর এক কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনার আমলে যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয়। কোনো কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল গায়ের জোরে। ওই প্রকল্পগুলোই বাতিলের পদক্ষেপ নিয়েছে সিভিল এভিয়েশন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত