সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ মঙ্গলবার ঢাকার বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ কনভেনশন সেন্টারে মহিলার অগ্রগতি ও লিঙ্গসমতা বিষয়ক লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপ ও জাতিসংঘ আয়োজিত ২০২৫ সালের বৈশ্বিক ‘১৬ ডেজ অব অ্যাক্টিভিজম এগেইনস্ট জেন্ডার-বেইজড ভায়োলেন্স’-এর উদ্বোধন করেন।
‘নারী ও কন্যাদের প্রতি ডিজিটাল সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই’ স্লোগানে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সরকার, জাতিসংঘ, কূটনৈতিক মিশন, সিভিল সোসাইটি, তরুণ নেতৃত্ব ও প্রযুক্তিখাতের প্রতিনিধিরা প্রযুক্তি-নির্ভর সহিংসতা মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, সাইবার জগতে নারীরা অনিরাপদ পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন। আগে রাস্তায় ইভ টিজিং-এর ভয় ছিল, এখন সাইবার স্পেসে গেলেই বুলিং-এর মুখোমুখি হতে হয়। সাইবার বুলিং বৈশ্বিক মাত্রায় বেড়েছে এবং প্রযুক্তি তার গতিতে চললেও মনোভাব পরিবর্তনই এসব মোকাবিলার মূল উপায়। তিনি জানান, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫৯ শতাংশ নারী অনলাইনে হয়রানির শিকার হন এবং ভুক্তভোগীদের ৯০ শতাংশ অভিযোগ করেন। দেশে ভালো আইন থাকলেও প্রয়োগের ঘাটতি অপরাধ বাড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, সাইবার সহিংসতা রোধ কোনো একক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নয়; রাষ্ট্রের সব স্তরের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। মেয়েরা বিপদে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিতে পারেন, আর মন্ত্রণালয়ের কুইক রেসপন্স টিম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভিকটিমের কাছে পৌঁছাবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি বলেন, শক্তিশালী আইন, প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ এবং জনসচেতনতা জরুরি।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ বলেন, ডিজিটাল সহিংসতা বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বব্যাংকের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বের ৪০ শতাংশেরও কম দেশে সাইবার হ্যারাসমেন্ট বা সাইবারস্টকিং থেকে নারীদের সুরক্ষার আইন রয়েছে। ফলে ৪৪ শতাংশ নারী ও কন্যা—প্রায় ১.৮ বিলিয়ন মানুষ—আইনগত সুরক্ষা বঞ্চিত। অনলাইন হয়রানি, সাইবারস্টকিং, ডিপফেক, জেন্ডারড ডিসইনফরমেশনসহ বিভিন্ন অপরাধ নারীর অধিকার ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সুসান রাইল বলেন, এটি শুধু নারীর সমস্যা নয়, সবার সমস্যা। সরকার, সংগঠন ও নারীদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইক্স বলেন, ভুক্তভোগীদের বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ।
ইউএন উইমেন প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিংহ বলেন, ডিজিটাল সহিংসতা সীমান্তহীন এবং এটি নারীর কণ্ঠ স্তব্ধ করে জনজীবনে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করে।
উদ্বোধনের পর ‘বাংলাদেশে প্রযুক্তি-নির্ভর সহিংসতা প্রতিরোধ: ঘাটতি, চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পরিচালনা করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দিলারা বেগম। আলোচনায় অংশ নেন বিটিআরসির মাহমুদ হোসেন, ইউজিসির নাসিমা আখতার, উম্মে শরাবান তাহুরা এবং লাবণ্য বিনতে হাফিজ।
প্যানেলিস্টরা প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণের ঘাটতি, আইন প্রয়োগের দুর্বলতা, নারীদের ডিজিটাল সক্ষমতা ও রিপোর্টিং ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং সমন্বিত জাতীয় কাঠামোর অভাব তুলে ধরেন।
সমাপনী বক্তব্যে ইউএনএফপিএ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, প্রযুক্তি-নির্ভর জিবিভি বাস্তব এবং গুরুত্ব পাওয়া উচিত। তদন্ত জোরদারে আইনি কাঠামো প্রয়োজন, এবং প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়া অবশ্যই ভুক্তভোগীকেন্দ্রিক হতে হবে।
বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশনের ৩০ বছর পূর্তিতে ২০২৫ সালের এ প্রচারণা বাংলাদেশে প্রযুক্তিনির্ভর সহিংসতা নির্মূলে সরকার, বেসরকারি খাত, সিভিল সোসাইটি, তরুণ সংগঠন ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানায়।

