ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি সারা দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদবিরোধী এই যোদ্ধাকে এভাবে প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
গত সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বদলীয় ঐক্য সমাবেশ করে লাখো জনতা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। সারা দেশে মসজিদ ও মাদরাসায় হাদির জন্য দোয়া করা হয়। অনেকে রেখেছেন রোজা। তবে অভিযুক্তরা এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক তোলপাড় চলছে। সেই সঙ্গে শরীফ ওসমান হাদির জন্য কাঁদছে সারা দেশের মানুষ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল হাশেম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘কোনো এক সফরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন সাহাবি ইন্তেকাল করলেন। লাশ কবরে রেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করলেন; হে আল্লাহ আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলাম, তুমিও তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকো। পাশ থেকে সাহাবির আফসোস শোনা গেল, আহ! কবরে শায়িত ব্যক্তি যদি আমি হতাম। খোদ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম দোয়া পেতে কার না লোভ হয়।’
‘সম্প্রতি বাংলাদেশের দৃশ্য : দুটো স্রোতস্বিনী বয়ে যাচ্ছে। একটি খালেদা জিয়ার দিকে অন্যটা স্নেহধন্য হাদির দিকে। স্রোতস্বিনী দুটির উৎস বাংলাদেশের মানুষের দুটি চোখ। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতির কথা শুনে এ দেশের মানুষ প্রশান্তি লাভ করেছে। অশ্রুর দুটি স্রোতধারা এখন শুধুই হাদির জন্য। মানুষের এমন পাগলপারা ভালোবাসা আর দোয়া পেতে কার না লোভ হয় ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা লেখেন, ‘ভাইকে নিয়ে বা ইনকিলাব নিয়ে সমালোচনা হলে আমি খুব রিঅ্যাক্ট করতাম। ভাই আমাকে বলত-এসব নিয়ে চিন্তা কইরো না, কথাও কবা না। সব দলের বাংলাদেশপন্থি অংশ আমাদের অসম্ভব ভালোবাসে, বুঝবা একদিন। আজকে আসলেই বুঝছি। কিন্তু আমরা এভাবে এমন সময়ে বুঝতে চাইনি ভাই।’
রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ তার ফেসবুকে লেখেন, ‘ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ। সন্ত্রাসীরা জানে না, বিপ্লবীদের গুলি করে থামানো যায় না।’
ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম লেখেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই রাজধানীতে একজন প্রার্থীকে গুলি করা হলো। খুবই অশনিসংকেত। পতিত ফ্যাসিস্টরা এই নির্বাচন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি ও হুমকি দিয়েছে। ফ্যাসিস্টদের দেশি-বিদেশি দোসররাও আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দিতে চায় না। এমতাবস্থায় প্রার্থীর ওপর হামলায় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া এবং প্রার্থীদের নিরাপত্তা প্রশ্নে আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, অতিসত্বর এই গুলিকারীকে চিহ্নিত করতে হবে এবং একই সঙ্গে এই ঘটনার পেছনের রাজনৈতিক মোটিভ উদ্ঘাটন করে জাতিকে জানাতে হবে। একই সঙ্গে আহ্বান জানাব, দলমত নির্বিশেষে যেসব প্রার্থী নির্বাচনি প্রচারের জন্য মাঠে থাকবেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
মেহেদী হাসান আরিফ নামে একজন লেখেন, ‘হে আল্লাহ, হে আমার রব! তুমি আমার ভাইটাকে আমাদের মাঝে আবার পরিপূর্ণ সুস্থভাবে ফিরিয়ে দাও।’
রকি চৌধুরী নামে একজন লেখেন, ‘যেখানে নেওয়া হোক হাদিকে এই দেশে বড্ড প্রয়োজন, আল্লাহর কাছে দোয়া করি হাদি সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসুক আমাদের মাঝে।’
আকমল হোসেন গুজার নামে একজন ফেসবুকে লেখেন, ‘হাদি ভাই ফিরবে বীরের বেশে ইনশাল্লাহ।’
সোহাগ খান নামে একজন ফেসবুকে লেখেন, ‘হাদি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে জনগণের মাঝে, লক্ষ-কোটি মানুষের দোয়া বৃথা যাবে না ইনশাল্লাহ...।’
গুলিবিদ্ধ শরীফ ওসমান হাদির পক্ষে অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘হাদি হয়তো ফিরবে, আরো জোরালো গর্জনে। আর যদি না ফেরে, তার নামটাই হয়ে যাবে নতুন প্রজন্মের যুদ্ধ ঘোষণা।’
শরীফ ওসমান হাদি গত শুক্রবার পল্টন এলাকায় নির্বাচনি প্রচারের সময় গুলিবিদ্ধ হন। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সোমবার দুপুরে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

