বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য

ভ্যাপসা গরমে ছটফট করছে সারাদেশের মানুষ

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৪

বৃষ্টি কমে গিয়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য আর ভাদ্রের প্রখর রোদে সারাদেশে ভ্যাপসা গরম বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা খুব বেশি না থাকলেও বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। ঘরে-বাইরে সবখানেই এতটা ভ্যাপসা গরম যে মনে হচ্ছে গ্রীষ্মের তাপমাত্রাকেও হার মানিয়েছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গরমের তীব্রতায় ছটফট করছে সারাদেশের মানুষ। সহসা এই গরম কমার কোনো লক্ষণ নেই। এই অবস্থা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া-বিদরা।

বিজ্ঞাপন

আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।

এদিকে থেকে চলতি মাসের প্রথম দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সিলেটে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাজধানীতে ওই দিন তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমেছে। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৩ থেকে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে । তবে কোনো দিন হয়তো কোনো নিদিষ্ট এলাকায় দিনের কখনো বা সেটা ৩৫ ডিগ্রি কিংবা এর কিছুটা বেশি উঠছে। আবহাওয়ার এ অবস্থা শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, সারাদেশেই মোটামুটি একই রকম তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রাজধানী ঢাকায় শনিবার দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৫৮ শতাংশ। এর আগের দিন শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সারাদেশে মধ্যে লক্ষীপুরের রামগতিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন সারাদেশের ৫১টি স্টেশনের আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এর মধ্যে ৩৭টি স্টেশনে কোনো বৃষ্টিই হয়নি। গতকাল শুক্রবার সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় কিশোরগঞ্জের নিকলিকে মাত্র ২৯ মিলিমিটার। এছাড়া যে ১৩টি এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে তা খুবই সামান্য।

গতকাল শুক্রবার থেকে আজ বিকাল ৩টা নাগাদ রাজধানীতে কোনো বৃষ্টি হয়নি এবং বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা না থাকায় দিনের সময় গড়ানোর সঙ্গে-সঙ্গে গরম আরও তীব্র থেকে তীব্র হয়েছে। দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টায় টানা ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

কয়েকদিন ধরে গরমের তীব্রতা বাড়লেও দেশে যে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তাতে কোনো তাপপ্রবাহ নেই।এরপরও কেন এতো গরম অনুভূত হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান আজ আমার দেশের এই প্রতিবেদককে বলেন, সাধারণত এপ্রিল ও মে মাসে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকলেও তখন বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ থাকে কম। প্রচণ্ড গরমে মানুষ তখনো অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, কিন্তু এতটা ঘাম কিংবা জনজীবনে অসহনীয় অবস্থা হয় না, এখন যতটা হচ্ছে। এর মূল কারণটা বৃষ্টি কমে বাতাসে আর্দ্রতার আধিক্য।

তিনি বলেন, বাতাসে আর্দ্রতা বা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে তাপমাত্রা কম থাকলেও বেশি গরম অনুভূত হয়।বিচ্ছিন্নভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও আবহাওয়ার এই অবস্থা আরো ২-৩দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, আগামী ২-৩ দিন রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রামে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টির কোনো লক্ষণ নেই। সেহেতু এ অবস্থা আরো কয়েকদিন দিন অব্যাহত থাকবে। এছাড়া দেশজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে গরমের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে।

আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকদিন ধরে দেশে বৃষ্টির পরিমাণ কমে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকছে। এতে তাপমাত্রা খুব বেশি না হলেও গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। ভ্যাপসা গরম এতোটাই তীব্র যে দিনরাতে ২৪ ঘণ্টায় মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।

ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী পট্রির শ্রমিক আবুল কালাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে গরমের তীব্রতা এতোটাই বেশি যে দিনেরাতে সমানতালে গরম অনুভূত হচ্ছে। কোথাও গিয়ে স্বস্তি পাচ্ছি না। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না, আবার দিনেও প্রখর রোদের কারণে বেশি সময় কাজ করতে পারছি না। দিনেরাতে ভ্যাপসা গরমে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

সদরঘাট এলাকার নৌকার মাঝি শফিকুল ইসলাম বলেন, রোদের প্রখরতা এতোই বেশি যে বেশিক্ষণ নৌকা চালাতে পারছি না। গরমের কারণে মানুষ নৌকায় কম পারাপার হচ্ছে। এতে আমাদের ইনকামও কমে গেছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আগস্ট মাসে দেশের চার বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। বাকি চার বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে আগস্টে স্বাভাবিকের চেয়ে মাত্র ১ শতাংশ বেশি হলেও চলতি মাসে স্বাভাবিক কিংবা স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সেপ্টেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া আগস্ট মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতির তথ্য বিশ্লেষণে তাতে দেখা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে গত মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৯, ১১ দশমিক ১, ১৬ দশমিক ৫ এবং ১২ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি কম হয়েছে। তবে ময়মনসিংহ বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৪ দশমিক ৩, সিলেটে ৪৩ দশমিক ৩, রাজশাহীতে ২৫ দশমিক ৮ এবং রংপুরে ৪১ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি বেশি হয়েছে। সার্বিকভাবে ১ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি বেশি হয়েছে আগস্টে।

চলতি মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এ মাসে দুই থেকে তিনটি লঘুচাপের সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আবার এ মাসে এক থেকে দুটি মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত