দেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি বরাবরই আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে জাতীয় পার্টি তা সমর্থন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি একজোট হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং জাতীয় পার্টি তার অংশ ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট অংশগ্রহণ করেনি। ১৫৩টি আসনে বিনাভোটে এমপি নির্বাচিত হন। বাকি আসনগুলোয় নামকাওয়াস্তে নির্বাচন হয়। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দল হয়। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশ দূত নিযুক্ত হন। ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত অংশগ্রহণ করে এবং জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নেয়। সেই ভোট আগের রাতে সম্পন্ন হয়। নির্বাচনে যথারীতি আওয়ামী জোট বিজয়ী হয়। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দল হয়। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বয়কট করে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করে এবং জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দল হয়।
জাতীয় পার্টি কখনো আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার অংশ, আবার কখনো বিরোধী দল। জাতীয় পার্টির নেতারা সরকারের কাছ থেকে সবসময় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে যে সিস্টেম চালু করেছে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের ইতিহাসে নেই। এমনকি রাজনীতি বিজ্ঞানেও নেই।
ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ২০২৩ সালের ২০-২২ আগস্ট জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ভারত সফর করেন। সফর শেষে ঢাকায় এসে জিএম কাদের বলেন, ভারতে কার সঙ্গে বৈঠক এবং কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা ভারত সরকারের অনুমতি ছাড়া তিনি প্রকাশ করতে পারবেন না। জাতীয় পার্টি কার স্বার্থে রাজনীতি করেছে, তা এ থেকেই সহজেই বোঝা যায়।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এ সময় বিএনপি-জামায়াতের শত শত নেতাকর্মী খুন হয়েছেন এবং হাজারো নেতাকর্মী বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। লাখ লাখ নেতাকর্মী হয়েছেন বাড়িছাড়া। অনেক নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে এবং কয়েকশ নেতাকে গুম করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ৮ হাজার ১০৫টি মামলা রয়েছে এবং প্রায় ৫০ লাখ মানুষ আসামি। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের সব অপকর্ম ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের একান্ত সহযোগী ছিল এই জাতীয় পার্টি।
সরকার ২০২৪ সালের ১২ মে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। একই দিন নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও স্থগিত করেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা এখন খুন, গুম এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতাদেরও বিচার করতে হবে। তাদেরও সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে। জাতীয় পার্টির সহযোগিতার কারণেই আওয়ামী লীগ ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে এবং ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের শাসনামলে সংঘটিত সব ধরনের খুন, ঘুম, নির্যাতন, অর্থপাচার, ব্যাংকলুট এবং ভোট চুরিসহ সব ফ্যাসিবাদী কাজের সহযোগী হিসেবে এর দায়ভার জাতীয় পার্টিকেও বহন করতে হবে। সুতরাং তাদের ও বিচারের আওতায় আনা হোক।
লেখক : প্রকৌশলী


চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন কট্টর-ডানপন্থি অ্যান্তোনিও কাস্ত
ফ্যাসিবাদের টার্গেট নির্বাচন বানচাল