আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

হাদি, ইসকন ও একজন শাহেদ আলম

মেহেদী হাসান

হাদি, ইসকন ও একজন শাহেদ আলম

চব্বিশের জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশকে যে কজন নির্ভীক, দৃঢ়চেতা আর অকৃত্রিম দেশপ্রেমিক তরুণ নেতা উপহার দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলেন শরীফ ওসমান হাদি। ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী তার প্রতিটি সাহসী উচ্চারণ এ দেশের তরুণ সমাজ থেকে শুরু করে প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের মনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। ‘জান দেব জুলাই দেব না’, হাদির এই বজ্রঘোষণা বাধা হয়ে দাঁড়ায় ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ও ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশকে একটি প্রকৃত স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথে যারা বাধা, তাদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন হাদি। দ্রুত ওসমান হাদি পরিণত হন আওয়ামী ফ্যাসিবাদ, ভারতীয় সব ধরনের আধিপত্য ও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার বিরুদ্ধে নতুন প্রেরণায়। তরুণ হাদিই প্রথম ইনকিলাব মঞ্চের মাধ্যমে বাংলাদেশ ঘিরে ইসকনের গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবে সরাসরি ভারত ও দেশ-বিদেশে থাকা ভারতের এজেন্টদের টার্গেটে পরিণত হলেন হাদি।

চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের পরপরই ভারত প্রকাশ্যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শত্রুতা ও বিদ্বেষমূলক আচরণ করতে থাকে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের পতন ঘটিয়ে পতিত হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় ফেরাতে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ভারতের মদতে দেশের মধ্যে নতুন করে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে মাঠে নামে পালিয়ে থাকা আওয়ামী সন্ত্রাসী ও তাদের দোসররা। টার্গেট কিলিং নিয়ে মাঠে নামে অনেকে। এ অবস্থায় ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে শরীফ ওসমান হাদির নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ ঘটে ইনকিলাব মঞ্চ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের। জুলাই বিপ্লবের প্রেরণা নিয়ে এ সংগঠনটি গঠন করে বিপ্লবে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা।

৫ আগস্টের পর বিপ্লবে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা যখন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্নভাবে আলাদা হয়ে যায়, তখন দ্রুত এই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি পরিণত হয় জুলাই বিপ্লবের অন্যতম একটি বাতিঘর ও আশার আলো। বিপ্লব-পরবর্তী নতুন সরকার পথ চলার সঙ্গে সঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা একের পর এক চেষ্টা চালায় প্রতি-বিপ্লবের। এ ধরনের প্রতিটি চেষ্টার বিরুদ্ধে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির নেতৃত্বে তরুণ ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার মাধ্যমে এ সংগঠনটি দ্রুত পরিণত হয় আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি বলিষ্ঠ প্ল্যাটফর্মে।

বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও ভারতীয় ষড়যন্ত্রের অন্যতম একটি সেক্টর হলো এ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। এই অঙ্গনটি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার অবাধ বিচরণক্ষেত্র ও হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত। হাদির লড়াইয়ের একটি লক্ষ্য ছিল সাংস্কৃতিক ফ্যাসিস্টদের ‍রুখে দেওয়া।

যেহেতু হাদির মতো নেতা এ দেশে ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা, তাই এ ধরনের নেতারা প্রধান টার্গেট ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর । এর অংশ হিসেবে হাদি প্রথম শিকার হন দেশীয় সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদী ও ভারতের দালালদের। ভারতের মদতপুষ্ট এই ফ্যাসিস্টরা হাদির বিরুদ্ধে ঘৃণা উৎপাদন ও বয়ান তৈরি করেছে এবং হাদিকে হত্যার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। হাদিকে তারা ‘ডেভিল’, ‘বাটবার’ ‘শাউ-ছিঁড়া’ ‘শা/উ-য়া’ আখ্যায়িত করে এবং ইনকিলাব মঞ্চকে জুলাই বিপ্লবের ‘পুনমারা’ হিসেবে অভিহিত করে।

চব্বিশের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পরপরই বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার নামে হিন্দুদের কিছু সংগঠন আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও সংগঠক ছিলেন বিতর্কিত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইসকন পরিচালিত পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস তার সংগঠনের ব্যানারে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জনসমাবেশে দেশবিরোধী এবং উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন। তিনিসহ অন্য অনেক উগ্র হিন্দু নেতা বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ সব মিথ্যা অভিযোগ হাজির করেন এবং সাধারণ হিন্দুদের উসকানি দিয়ে মাঠে নামানোর চেষ্টা করেন। হিন্দুদের বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়। এছাড়া মন্দির ভাঙচুর দেব-দেবীদের অপমানের অভিযোগ করেন তারা। বস্তুত ইসকনসহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের এ ধরনের মিথ্যা প্রচারণা ও হিন্দুদের মাঠে নামানোর চেষ্টার পেছনে ছিল ভারতের গভীর ষড়যন্ত্র।

জুলাই বিপ্লবের পর ভারত আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাঠে নামে হিন্দু কার্ড নিয়ে। ভারতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও ফোরামে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ভয়াবহ হত্যা, গণহত্যা এবং নির্যাতনের মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করা হয় । ভারত প্রমাণের চেষ্টা করে বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের নেতৃত্বে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের নিধন করা হচ্ছে । এমনকি ভারতীয় লবি শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়ে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে টুইট পর্যন্ত করাতে সক্ষম হয়। ভারতীয় এই হিন্দু কার্ড ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বাংলাদেশে ইসকন নেতাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা মাঠে নামে হিন্দুদের নিরাপত্তার নামে।

এছাড়া ইসকন নেতা চিন্ময় দাস গ্রেপ্তারের পর ভারতের বিজেপি সরকার, দল হিসেবে বিজেপি, বিরোধী দল কংগ্রেসসহ বিভিন্ন দল যেভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে, তাতে এটি বুঝতে কারো বাকি নেই, ইসকান নেতা চিন্ময় দাসসহ অনেকেই ছিলেন ভারতীয় ষড়যন্ত্রের সুতায় বাঁধা।

ইসকনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইনকিলাব মঞ্চ। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি ইসকনের মুখোশ উন্মোচন করেন। তিনি বলেন, গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ইসকন একদম স্পষ্টভাবে বাংলাদেশে একটি দাঙ্গা লাগাতে চায়। আমি আবার নিশ্চিত করে বলছি, ইসকন বহির্বিশ্বে দেখাতে চায়, বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। সামনে আমেরিকান নির্বাচন। এই আমেরিকান লবিকে ভারত সব থেকে অগ্রাধিকার দিয়ে চেষ্টা করছে যেন আমেরিকান লবিকে তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে আনতে পারে। সেই ভারতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেছেন। ট্রাম্প তার টুইটে বলেছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বড়মাত্রায় নির্যাতন চলছে।

হাদি বলেন, এই অভিযোগকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ইসকন হাজার হাজার সনাতনী নাম ব্যবহার করে রাজপথ দখল করেছে। আমরা ইসকনের আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা বিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে এখন আমরা সরকারের কাছেই দাবি জানালাম। তারা যদি অতিদ্রুত ইসকনের ব্যাপারে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন না করে, তাদের সব অর্থনৈতিক উৎস প্রকাশ না করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যদি পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে প্রথমত, আমরা তাদের বিরুদ্ধে রিট করব এবং একই সঙ্গে আমরা রাজপথে বড় আকারে আমাদের কর্মসূচি গ্রহণ করব।

হাদি বলেন, ‘ইসকন আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বের নানা দেশে তাদের শাখা রয়েছে এবং কার্যক্রম চলছে। সে হিসেবে তারা একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোনো এনজিও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারে না। যদি তারা এনজিও না হয়, তবে ইসকন রাজনৈতিক না ধর্মীয় সংগঠন—তা স্পষ্ট করতে হবে। তাদের সব অর্থনৈতিক উৎস জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। সরকারের কাছে জানতে চাই, ইসকন কোন আইনে, কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং কী পরিচয়ে কাজ করার অনুমতি পেয়েছে?’

২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। এ নিয়ে ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খুবই আগ্রাসী আচরণ প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায়, ইসকন ও ভারত এক, অভিন্ন। ভারতের পক্ষ থেকে শুধু কড়া বিবৃতি নয়; বরং রীতিমতো বিক্ষোভ আয়োজন করা হয় কলকাতাসহ অনেক স্থানে। হামলার ঘটনা ঘটে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন অফিসে। বাংলাদেশে প্রবেশের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সীমান্তে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হয় অনেক উগ্র হিন্দুরা।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আটকের বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিবৃতি দেয় ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন)। চিন্ময়ের গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ভারত সরকারের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার ও জামিন নাকচ করার বিষয়টি আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি। বাংলাদেশে চরমপন্থিদের দ্বারা হিন্দু এবং অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলার পর এখন এ ঘটনা ঘটল।

হাদি এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে তাকে ইসকন থেকে হুমকি দেওয়া হয়। প্রেস ক্লাবে ইনকিলাব মঞ্চের এক আলোচনা সভায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রধান অতিথি হলে তার বিরুদ্ধেও ইসকন বিষোদগার করে।

হাদির বিরুদ্ধে ঘৃণা উৎপাদন

ইসকন ও ভারতের হয়ে হাদির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যে কজন ব্যক্তি ঘৃণা উৎপাদন করেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইউটিউবার শাহেদ আলম।

ওসমান হাদিকে ডেভিল বা শয়তান আখ্যায়িত করে শাহেদ আলম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। হাদি ও হাসিনার ছবি পোস্ট করে শাহেদ আলম লিখেছেন-‘দুই ডেভিল নিপাত যাক। এরা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার শত্রু। এদের কারা কারা পৃষ্ঠপোশকতা দিয়েছে নজর রাখুন। তিক্ত কথা। আইনের আওতায় আনুন। বিচার করুন।’

শাহেদ আলম আরো একটি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “জয়বাংলা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ‘পুন’ মারছিল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ২৪-এর বিজয়ের ‘পুন’ মারছে ইনকিলাব মঞ্চ। অর্জন ধূলিসাৎ হওয়ার আগে হাদি পোলাটারে জবাবদিহিরি মধ্যে রাইখেন।’

শাহেদ আলম আরেক পোস্টে লিখেছেন-‘শাওয়া হাদিই ভরসা এখন’।

বিএনপির অ্যাকটিভিস্টি হিসেবে পরিচিত এমডি এম রাশেদ নামে একজন তার ফেরিভায়েড ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন-“আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল পার্টি নিজের ক্যান্ডিডেড দেবে এবং তাদের একটা ভোটও অন্য কোথাও যাবে না। মাঝখান থেকে ‘শাউ-ছিঁড়া’ হাদি বাটপারটাকে দাঁড় করাইছে মির্জা আব্বাসের ভোট খাওয়ার জন্য। এরা এই স্ট্র্যাটেজি অলমোস্ট প্রতিটি আসনে ডেপ্লয় করবে।”

এমডি এম রাশেদ হাসনাত আবদুল্লাহকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই ভণ্ড, ও শা/উয়া মাউয়া ছিঁড়ে ফেলব।’ ...যারা ঢাকার রাজনীতির খবর রাখে, তারা সবাই জানে হাসনাত কত বড় ফ্রড।’

হাদির বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘৃণা উৎপাদনকারী সবাই বর্তমানে বিএনপির পক্ষ নিয়ে বিএনপির প্রতিপক্ষকে এভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছে। অথচ জুলাই বিপ্লবের আগেও শাহেদ আলমসহ অনেকে বিএনপি ও তারেক রহমান সম্পর্কে খুবই অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। সেই পাপ ঢাকতে এখন তারা বিএনপির বিরাট বড় ত্রাণকর্তা, উদ্ধারকারী ও বুদ্ধিদাতা সেজেছেন।

কোনো সন্দেহ নেই ওসমান হাদি ও ইনকিলাব মঞ্চের বিরুদ্ধে যারা এ ধরনের ঘৃণা উৎপাদন করছে, তারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পক্ষের লোক।

ইসকন ও চিন্ময় দাস নিয়ে বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা বিষয়ে শাহেদ আলম বলেছেন, ইসকন কোনো জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নয়। ইসকন বিষয়ে মগজ ধোলাই করা হয়েছে। এটি ভারতের কোনো সংগঠন নয়। ইসকন শুধু ভারতের হিন্দুদের সংগঠন নয়। সারা বিশ্বে যারা শ্বেতাঙ্গ আছে, এটা তাদেরও একটা নিজস্ব জায়গা, ইতোমধ্যে কয়েক মিলিয়ন শ্বেতাঙ্গ ইসকনের আদর্শ গ্রহণ করেছে।

শাহেদ আলম বলেন, ধরুন ভারতে আপনি একজন মুসলিম। আপনি তাবলিগ-জামাতে বেরিয়েছেন। রাস্তায় পথিমধ্যে আপনি ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছেন এবং দাওয়াত দিতে দিতে আপনি একজন হিন্দুকেও দাওয়াত দিয়ে ফেললেন। একবার বুঝেন তো কাণ্ডটা কী হবে? উগ্র হিন্দুরা আর এসএসের হিন্দুরা পিটিয়ে মেরে ফেলবে, তাই তো? ঠিক একই কাজটা হয়েছে বাংলাদেশে। ইসকন যখন বাচ্চাদের প্রাসাদ খাওয়াচ্ছে এবং হরে কৃষ্ণ বা জয় কৃষ্ণ বলে স্লোগান দেওয়াচ্ছে, সেটা নিয়েই যত আপত্তি তৈরি হয়েছে। এর বাইরে আমি দেখি না ইসকন কোনো জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত। ইসকনকে শাহেদ আলম মুসলমানদের তাবলিগ-জামাতের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ইসকন হলো হিন্দু ধর্মের একটি তাবলিগ-জামাতের মতো বড়জোর।

চব্বিশের জুলাই বিপ্লব শেষ হয়নি। জুলাই বিপ্লবের প্রধান দুটি চেতনা ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে চেপে বসা মাফিয়াতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটানো এবং ভারতীয় আধিপত্যের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করা। জুলাই বিপ্লবের প্রায় দেড় বছর হতে চলছে; কিন্তু দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। অসম্পন্ন জুলাই বিপ্লব সম্পন্ন করতে না পারলে দেশ আবার ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যের কবলে চলে যেতে পারে। হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় তাই আবার আমাদের নতুন করে শপথ নিতে হবে জুলাই বিপ্লব সফল করার। বাংলাদেশের যে অঙ্গনে যারাই এখনো ফ্যাসিবাদের পক্ষে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, তাদের প্রতিহত করা ছাড়া জুলাই বিপ্লবের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা যাবে না। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশকে একটি প্রকৃত স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের আজীবন ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেই টিকে থাকতে হবে এবং সেই আলোকে আমাদের সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।

লেখক : সহকারী সম্পাদক, আমার দেশ

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর

খুঁজুন