আমার দেশ

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড : উন্নয়নের বাহন

লাবিন রহমান
ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড : উন্নয়নের বাহন

একটি দেশের জনসংখ্যার বয়স-কাঠামোর পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে সাধারণভাবে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ বলা হয়। কোনো দেশের জনসংখ্যার বড় অংশ কর্মক্ষম বয়সের (১৫-৫৯ বা ১৫-৬৪) থাকলে সেটাই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। কারণ শিশু ও বৃদ্ধরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল, তারা উৎপাদনমুখী কোনো কাজের জন্য উপযুক্ত নয়।

উন্নয়নের চাকাকে সচল রাখা বা বেগবান করার জন্য বরং প্রয়োজন হয় উদ্যমী, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর কর্মক্ষম একটি জনগোষ্ঠীর। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি কর্মক্ষম স্তরে রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের মধ্যে অবস্থান করছে।

বিজ্ঞাপন

তবে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য, এ দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর অবশ্যই মানসম্পন্ন শিক্ষা, পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যের সুযোগ থাকতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের সুযোগ।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার চিত্র

বাংলাদেশের ষষ্ঠ ও সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা হয় ২০২২ সালে। এর প্রাথমিক ফল ওই বছরের ২৭ জুলাই ঘোষণা করা হয়। এতে দেখা যায়, দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ১২ হাজার ৬২৯ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ।

বয়স অনুযায়ী জনসংখ্যার হার

বয়স হার পুরুষ নারী

০-১৪ বছর ২৬.৪৮ শতাংশ ২১,৯১৮,৬৫১ ২১,১৫৮,৫৭৪

১৫- ২৪ বছর ১৮.৫৬ শতাংশ ১৫,১৮৬,৪৭০ ১৫,০০১,৯৫০

২৫- ৫৪ বছর ৪০.৭২ শতাংশ ৩১,৬৯৪,২৬৭ ৩৪,৫৩৫,৬৪৩

৫৫- ৬৪ বছর ৭.৪১ শতাংশ ৫,৯৪১ ৬,১১৫,৮৫৬

৬৫ বছর ও এর বেশি ৬.৮২ শতাংশ ৫,২১৮,২০৬ ৫,৮৭৯,৪১১

এই ছক থেকে দেখা যায়, ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সের জনসংখ্যার হার প্রায় ৫০ শতাংশ যা সবচেয়ে বেশি। ফলে বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের মধ্যে রয়েছে। আর এমন সময় প্রস্তাবিত বাজেটে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে তরুণদের জন্য। আর সেই সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের থ্রি জিরো থিওরি বা তিন শূন্যতত্ত্বের প্রধান চালিকা শক্তিও এই তরুণরাই।

স্বাধীনতার পর থেকে জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সেক্টরগুলোয় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। জন্মহার কমানো, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা, জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা, দেশের জনসাধারণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিষয়কে বিশেষ নজর দেওয়া, গড় আয়ু বৃদ্ধি, জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো ইত্যাদি বিষয়ে নানা ধরনের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখন সময় এসেছে আমাদের পরিশ্রমী, কর্মক্ষম তরুণদের কাজে লাগানোর জন্য এ ধরনের বিনিয়োগে আরো বেশি মনোনিবেশ করা।

জাপান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পেরেছিল বলেই বিশ্ব অর্থনীতিতে এতটা সাফল্য প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছিল। ইতোমধ্যে, জাপান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা অতিক্রম করে এসেছে। ফলে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। চীন ইতোমধ্যেই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুযোগ পেয়েছে এবং তারা জাপানকে অতিক্রম করে বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে।

সব সুবর্ণ সুযোগের মতো এই সুযোগও বারবার আসে না। আর অনন্তকাল থাকবেও না। একটি দেশের ইতিহাসে একবারই আসে এ ধরনের সুযোগ এবং থাকে প্রায় ৩ দশকের মতো। বাংলাদেশ এই পর্যায়ে প্রবেশ করেছে ৯০ দশকের শুরুতে আর শেষ হবে ২০৩০ সাল নাগাদ।

এই পর্যায়ের পর বেশির ভাগ কর্মক্ষম মানুষ গিয়ে দাঁড়াবেন বৃদ্ধের কাতারে। আর দেশে তখন বৃদ্ধ লোকের সংখ্যা বেড়ে যাবে। বর্তমানে জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, বৃদ্ধদের দেখাশোনা নিয়ে বেশি ব্যস্ত। সে সময় লভ্যাংশের ফসল ঘরে তুলতে পারাতেই আজ তারা পৃথিবীর উন্নত দেশ।

লেখক : সাব-এডিটর, আমার দেশ

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন