দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা বরাদ্দ না দেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতি বিরূপ মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ বলে অভিযোগ করেছে দলটি। প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একরোখা কার্যকলাপে সংস্থাটির নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে উল্লেখ করে এনসিপি বলছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সব দলের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
শুক্রবার বিকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বরাত দিয়ে ফেসবুকে নিজের আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এ কথা বলেছেন।
‘শাপলা প্রতীক বরাদ্দ প্রশ্নে এনসিপির ব্যাখ্যা’ শিরোনামে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের তালিকায় প্রতীক যুক্ত করতে কমিশন একটি কমিটি গঠন করে এবং সংশ্লিষ্ট কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে। ওই কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল গত ৪ জুন নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি চূড়ান্ত তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক থাকার বিষয়টি আশ্বস্ত করেন। এরপর গত ২২ জুন এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন দাখিল করে এবং দলের অনুকূলে ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের জন্য আবেদন জানায়।
নাহিদ ইসলাম জানান, তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করার সাথে সাথে সারা দেশের আপামর জনসাধারণ এনসিপির প্রতীক হিসাবে ‘শাপলা’-কে চিনতে শুরু করে। গণমানুষের সাথে এনসিপির শাপলা প্রতীক কেন্দ্রীক এক অভূতপূর্ব আত্মিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। কিন্তু গত ৯ জুলাই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে এনসিপি জানতে পারে, নির্বাচন কমিশন শাপলাকে নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে তফশিলভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এরপর গত ১৩ জুলাই এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের আলোচনায় এবং একটি লিখিত আবেদনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেন যে, শাপলাকে জাতীয় প্রতীক হিসাবে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত ব্যাখ্যা আইনানুগভাবে সঠিক নয় এবং এই বিষয়ে কমিশনের গৃহীত অবস্থানের আইনি ভিত্তি নেই।
এনসিপির যুক্তি, শাপলা জাতীয় প্রতীকের চারটি স্বতন্ত্র উপাদানের একটি মাত্র উপাদান। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে বিএনপিকে জাতীয় প্রতীকের চারটি উপাদানের একটি উপাদান ‘ধানের শীষ’ বরাদ্দ দিয়েছে এবং জেএসডিকে আরেকটি উপাদান ‘তারা’ প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে। সেহেতু নির্বাচন কমিশন ‘শাপলা’-কে প্রতীকের তালিকাভুক্ত করে রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দিতে পারে। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন জাতীয় ফল ‘কাঁঠাল’-কে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে এবং তৃণমূল বিএনপি নামের আরেকটি দলকে ‘সোনালি আঁশ’ প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। সুতরাং ‘শাপলা’ জাতীয় ফুল হলেও দলের প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে আইনগত কোনো বাধা নেই।
এনসিপির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘এনসিপির প্রতিনিধিদল দফায় দফায় কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয় এবং কমিশনের কাছে থেকে উক্ত ১৩ জুলাই আবেদনের অগ্রগতি জানতে চাইলেও কমিশন উক্ত বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা ও অবস্থান স্পষ্ট করে নাই। উল্লেখ্য ১৩ জুলাইয়ের বৈঠকের পরবর্তী কোনো বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে শাপলা প্রতীক বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আইনি বাধার বিষয়টি আর উল্লেখ করা হয় নাই, এবং সংবাদমাধ্যমেও আইনি বাধার বিষয়ে কমিশন কোনো বক্তব্য প্রদান করেননি। অর্থাৎ শাপলাকে প্রতীক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কোনো আইনি ভিত্তি দ্বারা গঠিত নয় বরং এনসিপির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতীয়মান হয়।’
নাহিদ অভিযোগ করে বলেন, ৩ আগস্টের বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে শাপলাকে প্রতীক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও আশ্চর্যজনকভাবে ডিজিএফআইসহ আরো বেশ কিছু সংস্থার লোগোতে শাপলা রয়েছে এবং কারণে আইনগত কোনো বাধা না থাকলেও এনসিপিকে শাপলা বরাদ্দ না দেয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের মনোভাবের কথা ব্যক্ত করেন। কিন্তু উক্ত বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দল স্পষ্ট করে উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ পুলিশের লোগোর উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে ধানের শীষ প্রতীক বর্তমান থাকা, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর লোগোর উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে ঈগল প্রতীক বর্তমান থাকা এবং মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের লোগোর পুরোটা অংশ জুড়ে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন ইতঃপূর্বে বিএনপি প্রতীক হিসাবে ধানের শীষ, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) প্রতীক হিসাবে ঈগল এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতীক হিসাবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু মাত্র ডিজিএফআই এর লোগোর সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য থাকার কারণ দেখিয়ে এনসিপি-কে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়া বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী। নির্বাচন কমিশনের ধরনের মনোভাব প্রকাশের ফলে তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রীয় কোনো বাহিনীর কাছে নতি স্বীকার করছে কিনা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে এবং তাদের কারো কারো কথায় প্রভাবিত হয়ে পরিচালিত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন জনমনে তৈরি হয়। উল্লেখ্য এনসিপি-কে যেন প্রতীক হিসাবে শাপলা বরাদ্দ না দেওয়া হয় এ বিষয়ে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের তৎপরতা জনপরিসরে দৃশ্যমান এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত রয়েছে।’
গত ২৩ সেপ্টেম্বর কমিশনের সিনিয়র সচিব সংবাদমাধ্যমকে জানান, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার প্রতীক তালিকায় শাপলা-কে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই এবং এ কারণে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। এই বক্তব্য তুলে ধরে নাহিদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের এমন স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত এবং উক্তরূপ বক্তব্য অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশনের এহেন একরোখা কার্যকলাপে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সকল দলের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
সবশেষে নাহিদ বলেন, সার্বিক বিবেচনায় আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে জাতীয় নাগরিক পার্টির অনুকূলে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা, এবং ৩. লাল শাপলা থেকে যে-কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে এবং এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইতঃপূর্বে স্বেচ্ছাচারী ও একরোখা মনোভাব পরিত্যাগ করবে এবং এমনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সকল দলের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।’


শিগগিরই প্রতি আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করবে বিএনপি