ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ইস্যুতে আগামীকাল রোববার হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সেখানে সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বাধা কাটবে বলে আশাবাদী তিনি।
শনিবার নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মান্না এসব কথা বলেন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরে আমার নামে খেলাপি ঋণ এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা খবর ছড়িয়েছে। আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করতে আজ আপনাদের ডেকেছি।’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘২০১০ সালে বগুড়ায় আমার নিজ উপজেলা শিবগঞ্জে আকাফু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করি। আমার ব্যবসায়িক অংশীদার এ বি এম নাজমুল কাদির চৌধুরী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, যিনি পরে তথাকথিত নির্বাচনে চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন। ২০১০ সালে আমরা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বড়গোলা শাখা থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালসহ ২২ কোটি টাকা ঋণ নিই।’
তিনি বলেন, ‘২০১২ সাল নাগাদ প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করে এবং এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কারণে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক চূড়ান্ত অবনতির দিকে যায়। এই সুযোগে ২০১৪ সাল নাগাদ নাজমুল কাদির ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেন। এমনকি আমার নিয়োগকৃত কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও চাকরিচ্যুত করেন। ২০১৫ সালে শেখ হাসিনা সরকার আমাকে গ্রেপ্তার করে এবং ২২ মাস কারাগারে রাখে।’
মান্না বলেন, নাজমুল কাদির ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে ব্যবসার আয় থেকে নিজে আরেকটি কোল্ড স্টোরেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমার প্রতিষ্ঠান আকাফু কোল্ড স্টোরেজ তো দূরের কথা, আমাকে শিবগঞ্জে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে তিনি পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা এবং মানি লন্ডারিং মামলা রয়েছে। আমি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ পাই। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ঋণের পরিমাণ সুদ, বিলম্ব মাসুলসহ প্রায় ৩৮ কোটি টাকায় পৌঁছায়।’
এই রাজনীতিক বলেন, ‘কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশের মালিকানা থাকায় এই ঋণের বোঝা আমার ওপরে পড়েছে। আমি গত এক বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। বাংলাদেশের ব্যাংককে অবহিত করার পর তারা আমার প্রতিষ্ঠানকে নীতি সহায়তার আওতায় ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য ইসলামী ব্যাংককে নির্দেশ দেয়।’
তিনি বলেন, ‘সেই অনুযায়ী গত ১০ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভায় ঋণ পুনঃতফসিল অনুমোদন করা হয়। নির্বাচনে অংশ নিতে আমাকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণখেলাপি তালিকা থেকে অব্যাহতি নিতে হবে। সেই বিবেচনায় আমি উচ্চ আদালতে আমার সিআইবি রিপোর্টের ওপর স্টে অর্ডারের জন্য রিট করি। ২২ ডিসেম্বর দুপুর দেড়টায় হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ আবেদন আমলে নিয়ে আমার পক্ষে রায় দেয়।’
আশ্চর্যজনকভাবে কোনো অদৃশ্য কারণে সন্ধ্যার আগে সেই স্টে অর্ডার রিকল করা হয় উল্লেখ করে মান্না বলেন, ২৪ ডিসেম্বর আরেকটি বেঞ্চে শুনানি হয়। এই শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, যে রাষ্ট্রযন্ত্র শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পর অভ্যুত্থানের ওপরে দাঁড়িয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আদালতে সেই রাষ্ট্রপক্ষ ফ্যাসিবাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ শেখ হাসিনার নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণেই প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে বিতাড়িত করা হয়ছিল, ঋণ পরিশোধ না করে দখল করে রাখা হয়েছিল।
আগামীকাল রোববার হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আবারও আবেদন করতে যাচ্ছেন জানিয়ে মান্না বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করি, রায় আমার পক্ষে আসবে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো বাধা থাকবে না। আমি বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ), সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর সদরের একাংশ) এবং ঢাকা-১৮ আসন থেকে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব ইনশাআল্লাহ।’
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না নাগরিক ঐক্যের মান্না
মান্নাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে দুদককে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ