দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অবিলম্বে পুনর্নির্মাণ ও ভূমিকম্প-সহনীয় করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সংগঠনটির নেতারা বলেন, আজকের ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও জীর্ণ ভবনের করুণ বাস্তবতা আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের একটি অংশ হেলে পড়া এবং নতুন করে ফাটল সৃষ্টি হওয়ার ঘটনা শিক্ষার্থীদের চরম আতঙ্কের মধ্যে ফেলেছে, যা তাদের বিক্ষোভে নেমে আসতে বাধ্য করেছে। একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে পাঁচটি হলে পলেস্তরা খসে পড়া, দুটি হলে দেয়ালের ইট ভেঙে পড়া এবং এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর আহত হওয়া—এটি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোর নিরাপত্তাহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার স্পষ্ট প্রমাণ।
বিবৃতিতে বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুল আজিজ, সভাপতি পরিষদ সদস্য আশরাফুল ইসলাম সাদ ও মাহদী হাসান শিকদার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী যেসব ভবনে বসবাস, অধ্যয়ন ও কার্যক্রম পরিচালনা করেন—সেসব ভবনের বড় একটি অংশ বহু বছর অবহেলা, সংস্কারহীনতা ও মেয়াদোত্তীর্ণ কাঠামোর কারণে এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক ভূমিকম্প-সহনীয় নির্মাণমান পূরণ করতে না পারায় এসব ভবন যেকোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। শিক্ষার্থীদের জীবননিরাপত্তা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না।
নেতারা আরও বলেন, দেশে দুর্যোগ-সহনীয় নির্মাণবিধি থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় হল ও একাডেমিক ভবন পুরোনো নকশা ও দুর্বল কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল—যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ভূমিকম্পপ্রবণ বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোকে নিরাপদ ও দুর্যোগ-সহনীয় করা সময়ের অপরিহার্য দাবি।
তারা চারটি জরুরি দাবি উত্থাপন করেন। সেগুলো হলো—
১. সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়াদোত্তীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও জীর্ণ ভবন অবিলম্বে পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।
২. প্রত্যেক আবাসিক হলের নিরাপত্তা মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করে দ্রুত রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে।
৩. সমস্ত আবাসিক হল, একাডেমিক ভবন ও প্রশাসনিক ভবনকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ভূমিকম্প-সহনীয় পর্যায়ে উন্নীত করতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করতে হবে।
৪. যেসব ভবন তাৎক্ষণিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত হবে, সেগুলোতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অস্থায়ীভাবে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে।
তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক, সাংবিধানিক ও মানবিক দায়িত্ব। দুর্ঘটনার পর ব্যবস্থা নয়—বরং আগাম ঝুঁকি মোকাবিলার কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ করতেই হবে।
তারা আহত শিক্ষার্থীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
এসআর

