আ.লীগের দুর্গ দখলে মাঠে বিএনপি, তৎপর জামায়াত ও গণঅধিকার

হারুন অর রশীদ, ভেদরগঞ্জ (শরীয়তপুর)
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৯: ৩৭

শরীয়তপুর জেলার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসন। শেখ হাসিনার পতনের পর দীর্ঘদিন ভোটাধিকার বঞ্চিত এ আসনের ভোটারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। এ আসনে জয়ী হতে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। তৎপর রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিশসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। তবে এখনো তৎপর নয় এনসিপি ও জাতীয় পার্টি।

নবম জাতীয় সংসদ পর্যন্ত শুধু নড়িয়া উপজেলা নিয়ে ছিল এ আসনের সীমানা। পরে দশম সংসদ নির্বাচনে সীমানা পরিবর্তন করে ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন (সখিপুর থানা) যুক্ত করায় ভোটের হিসাব বদলে যায়। আওয়ামী লীগের দুর্গে হানা দেয় বিএনপি। কারণ, নড়িয়া যেমন আওয়ামী লীগের প্রভাব, তেমনি সখিপুরে বিএনপির একক প্রভাব রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ায় এ আসনটিতে বিএনপি প্রার্থীর জয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নের প্রত্যাশায় বিএনপির পাঁচ প্রার্থী গণসংযোগ করছেন। পক্ষান্তরে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাদে প্রতিটি দলেই একজন করে প্রার্থী মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থীর এখনো দেখা মেলেনি। শোনা যাচ্ছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এনসিপির ছায়ায় এ আসনে পুনবার্সিত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য ও শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সফিকুর রহমান কিরণ, শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি এসএম মাহফুজুর রহমান বাচ্চু সরকার, কৃষকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি কর্নেল (অব.) এসএম ফয়সাল ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন আহম্মেদ জিন্টু এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত জামাল শরীফ হিরুর স্ত্রী জাতীয়তাবাদী মহিলা দল কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক শামিমা আক্তার সাথী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী ডা. মাহমুদ হোসেন বকাউল। তিনি চরভাগা বকাউল পরিবারের সদস্য। এ অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। তবে ভোটের হিসাবে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের বড় ব্যবধান থাকলেও তা ঘোচাতে প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই প্রার্থী।

ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের পক্ষে এ আসন থেকে গণসংযোগ করছেন দুজন অ্যাডভোকেট মানিক মিয়া ও মুফতি ইমরান হোসেন। সভা-সমাবেশ করে তারাও নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন হাফেজ মোহাম্মদ দবির উদ্দিন।

গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান সম্রাট মাঝি। তার পক্ষে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসে তারাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে সমাবেশ করে তাকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। ভোটারদের অনুরোধ করে গেছেন নির্বাচিত করার জন্য।

এ আসনে টানা পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য কর্নেল অব শওকত আলীর ছেলে দ্বাদশ সংসদের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. খালেদ শওকত আলীর নামও শোনা যাচ্ছে। তবে তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ায় আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সহজ হবে না বলে মনে করেন এলাকার মানুষ।

স্বাধীনতার পরে এ আসনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নুরুল হক, তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর উপনির্বাচনে নির্বাচিত হন ডা. এমএ কাশেম। এরপর মরহুম কর্নেল (অব.) শওকত আলী পাঁচবার এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। একবার ডেপুটি স্পিকারও হন তিনি। এরশাদ আমলে এ আসনে তিনটি সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম আলহাজ টিএম গিয়াস উদ্দীন আহম্মেদ, আর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ডা. কেএ জলিল নির্বাচিত হয়েছিলেন। সব শেষে একাদশ ও দ্বাদশ ভোটারবিহীন ও ডামি নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন একেএম এনামুল হক শামীম।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সখিপুর থানা যুবদলের সভাপতি মোস্তাক আহম্মেদ মাসুম বালা বলেন, শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনের নড়িয়ায় আওয়ামী লীগের ভোট বেশি হলেও সখিপুরে বিএনপির ভোট অনেক বেশি।

সফিকুর রহমান কিরণ দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে কাজ করছেন। তার সঙ্গে সব নেতাকর্মীর যোগাযোগ থাকায় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা তার বেশি- এমনটাই মনে করেন বিএনপি সমর্থকদের অনেকেই। তবে কেউ কেউ মনে করেন শেষ পর্যন্ত সফিকুর রহমান বিএনপির মনোনয়ন পেলেও বিজয় তত সহজ হবে না।

কারণ, তিনি সখিপুর এলাকার মানুষ। তার বিপক্ষের জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ডা. মাহামুদুল হোসেনের বাড়ি চরভাগায়। গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান সম্রাট মাঝির বাড়ি এ এলাকার উত্তর তারাবুনিয়ায়, আর ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনে প্রার্থী অ্যাডভোকেট মানিক মিয়া মনোনয়ন যদি পান তার বাড়িও এ আসনের ডিএমখালিতে। তাই এখানে বিভিন্ন প্রার্থীর মধ্যে ভোট ভাগ হয়ে যাবে, তখন যিনি বেশি ভোট পাবেন তিনিই বিজয়ী হতে পারেন।

নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রয়েল মাঝি জানান, এ আসনে বিএনপির সঙ্গে সব সময়ই আওয়ামী লীগই কারচুপির আশ্রয় নিয়ে জিতেছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ মাঠে নেই, তাই বিজয় বিএনপির দুয়ারে কাড়া নাড়ছে বলে এলাকার অনেক ভোটার মনে করেন।

শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৮১ হাজার ২৮৮ জন। পদ্মা নদী বিধৌত নড়িয়া উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন, এক পৌরসভা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা ৯ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনুষ্ঠিত ১২টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আটবার, জাতীয় পার্টি তিনবার, আর বিএনপি একবার এ আসনে জয় পায়।

জৈন্তাপুরে ‘বিজিবির’ গুলিতে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ

নির্বাচনের আগে উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যেও শুদ্ধি অভিযান জরুরি

দুদিনব্যাপী মেহেদী উৎসব ইবি ‘ছাত্রী সংস্থা’র প্রকাশ্য কার্যক্রম শুরু

বার্ষিক পরীক্ষার আগেই স্কুল-কলেজ ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের দাবি

‘মুসলমানদের মতো হইয়ো না’ বলা জাভেদকে ধুয়ে দিলেন লাকি আলী

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত