বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ইলেক্টিভ ভেন্টিলেটর সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। তাঁর ফুসফুসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে বিশ্রাম দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় মেডিকেল বোর্ড এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার হালনাগাদ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে জানায়, গত কয়েক দিনের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাঁর স্বাস্থ্যে বেশ কয়েকটি জটিলতা ধরা পড়ে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় শুরুতে তাকে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ও বাইপ্যাপ মেশিন এর মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ডা: শাহাবউদ্দিন তালুকদার জানান,সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডে (MDT) এর পক্ষ থেকে জানানো যাচ্ছে যে ম্যাডামের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সর্বশেষ অবস্থা নিম্নরুপ।
ভর্তি প্রেক্ষাপটঃ
৭৯ বছর বয়সী সম্মানিত বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে রয়েছে লিভার সংক্রান্ত জটিলতা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আরথ্রাইটিস ও ইনফেকশন জনিত সমস্যা যেগুলোর চিকিৎসা তিনি দীর্ঘদিন ধরে পেয়ে আসছেন।
এবার, নিজ বাস ভবনে অবস্থানকালে তার শ্বাসকষ্ট, কাশি, জ্বর ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা যায়। কিন্তু ক্রমান্বয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি-পরবর্তী পরীক্ষা নিরীক্ষায় তার ফসফস, হৃদযন্ত্র ও কিডনির অবস্থার দ্রুত অবনতি পরিলক্ষিত হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে কেবিন থেকে উন্নত চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের লক্ষে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এ স্থানান্তরিত করা হয়।
বর্তমান অবস্থাঃ
গত কয়েক দিনের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় তাঁর স্বাস্থ্যে বেশ কিছু জটিলতা পরিলক্ষিত হয়।
তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, রক্তে অক্সিজেন এর পরিমাণ কমে যাওয়া এবং কার্বন ডাই অক্সাইড এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাকে HIGH FLOW NASAL CANULA & BIPAP Machine এর মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তার ফুসফুস ও অন্যান্য অর্গান কে বিশ্রাম দেয়ার জন্য তাকে ইলেক্টিভ ভেন্টিলেটর সাপোর্টে নেওয়া হয়।
গত ২৭ তারিখে তার একিউট প্যানক্রিয়েটাইটিস ধরা পরে যেগুলোর নিবিড় চিকিৎসা এখনও চলছে।
শরীরে গুরুতর ইনফেকশন (Bacteria & Fungal Infection) এর কারণে তাকে উন্নত অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কিডনির কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার ডায়ালাইসিস শুরু করা হয়। এখনও নিয়মিত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে।
পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও 'ডি আই সি' (Disseminated Intravascular Coagulation) এর ফল সরূপ তাকে রক্ত ও রক্তের বিভিন্ন উপাদান (BLOOD and BLOOD PRODUCT) ট্রানফিউশন দিতে হচ্ছে।
সমস্ত চিকিৎসার পরও জ্বর না কমার কারণে এবং পাশাপাশি রেগুলার Echo Cardiography তে aortic valve এ কিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হওয়ায় TEE (Trans Oesophageal Echo) করা হয় এবং সেখানে Infective Endocarditis ধরা পরে। তৎক্ষণাৎ মেডিক্যাল বোর্ড এর দেশি--বিদেশি চিকিৎসকদের পরামর্শ ক্রমে এ রোগের চিকিৎসা গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা হয়।
চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণঃ
দেশি-বিদেশি MULTI DISCIPLINARY বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড (MDT) প্রতিদিন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।
আমরা আপনাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি-
কোনো অনুমান বা ভুল তথ্য প্রচার না করে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতি আস্থা রাখুন।
রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মর্যাদা রক্ষায় সকলে সহযোগিতা করুন।
আমাদের মেডিকেল টিম সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, সতর্কতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁর চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্মানিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে দোষা করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।

