নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে: সাকি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৫, ২১: ৫৪

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন,'আমাদের পক্ষ থেকে বলেছি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যেখানে একদিকে হত্যাকারীদের বিচার এবং জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করার জন্য যে গণতান্ত্রিক সংস্কারে যাওয়ার প্রয়োজন, এতে যে দায়িত্ব নেওয়ার দরকার সেটা আপনার সরকারকেই নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় আর কোন সুযোগ নাই।'

বিজ্ঞাপন

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সাকি বলেন, 'আজকে উনি (ড. ইউনুস) আমাদের যে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকেছেন সেখানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। সকল রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন জায়গায় যে গোপন আলাপ থেকে শুরু করে আমাদের রাজনীতির পাশাপাশি দেশীয় দেশের সকল কিছু নিয়ে যে ষড়যন্ত্র চলছে।'

তিনি বলেন, 'ডক্টর ইউনুসকে যেহেতু জনগণ একটা ভরসার জায়গা রেখেছে, সে কারণে তাকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে আপনার উপর যত চাপই থাকুক না কেন। আপনি যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তা পালন করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন যাতে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে।'

সাকি বলেন, 'আমরা বলেছি এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নানা জায়গায় যেই অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, যা কিনা একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এই অনাস্থার জায়গা থেকে এবং দূরত্বের জায়গাটা আমাদের কমিয়ে আনতে হবে, যে কারণে আমাদের আলাপ আলোচনা দরকার। এখানে তো আমরা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে পারি যে কে কি চায়।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা প্রধান উপদেষ্টা কে বলেছি জনগণ একটা দৃশ্যমান বিচার দেখতে চাই। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন কারের পক্ষ থেকে বিচারবিভাগকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। বিচারব্যবস্থা যে গতিতে এগোচ্ছে সেখানে যাতে কোন দীর্ঘ না হয় এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকে, সে বিষয়ে তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন।'

সাকি বলেন, 'সংস্কারের ক্ষেত্রেও আমরা বলেছি ঐক্য মত কমিশন যেহেতু ১৫ জুলাই পর্যন্ত সময় নিয়েছে, তাই এই ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে যে সকল ঐক্য হয়, ফরমাল, নানা আলোচনায় যে ঐক্যগুলো হয়, সেগুলোকে জাতীয় সনদ আকারে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশিত করতে হবে। এটাই সংস্কারের পদ্ধতি। প্রধান উপদেষ্টা ও বলেছেন এর বাইরে অন্য কোন পদ্ধতি গ্রহণের সুযোগ নেই। এখানে যদি কোন কন্ঠ সৃষ্টি হয় তাহলে আমাদের সংস্কারের ক্ষেত্রে অনেক রকমের বাধা আসবে।'

গণতন্ত্র মঞ্চের এই শীর্ষ নেতা বলেন, 'নির্বাচনের বিষয়ে সরকার বলেছেন যে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে। তবে আমরা বলেছি এ বিষয়ে যদি একটি সুনির্দিষ্ট সময় বলা যায় তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো একটি প্রস্তুতি নিতে পারবে। এছাড়া অনেকে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে, নির্বাচনের যদি একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ না থাকে তাহলে সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উনারা বারবার বলেছেন যে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে, জুনের ৩০ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হবে, এর একদিনও বাইরে যাবে না। পাশাপাশি এনেও বলেছেন, নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সে প্রতিষ্ঠানগুলো যখন পরিপূর্ণভাবে কাজ করা শুরু করবে, তখনই তারা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবেন এবং প্রশাসনকে গোছানোর পরেই তারা সিদ্ধান্ত নিবেন যে নির্বাচনটা কবে নাগাদ সুনির্দিষ্টভাবে দেওয়া যায়।'

আমাদের পক্ষ থেকে এটাও বলা হয়েছে যে সকল বিষয়গুলো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে সরকার গুরুত্ব দেবে। একই সঙ্গে যে সকল স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে সরকার বিবেচনা করবে। আমরা শুরুতেই বলেছিলাম যে একটা রাজনৈতিক ঐক্য কাঠামো গঠন করতে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো বসে যে কোন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে মোকাবেলা করতে পারে।

জুলাই অভ্যুত্থানের বিষয়ে কথা হয়েছে, আমরা বলেছি, 'জুলাইয়ের অবস্থান সকলের অবদানে সম্মিলিত অবদানে তৈরি হয়েছে। তবে কোন একটি পক্ষ এমনভাবে জুলাইয়ের ক্রেডিট দাবি করছে, তারা এমনটা বোঝাতে চাচ্ছে যে একদল জুলাইকে ধারণ করে আরেক দল ধারণ করে না। এ সকল বিষয়ে আমরা সরকারকে সচেতন থাকতে বলেছি।'

আমরা সরকারকে বলেছি, 'নূন্যতম ঐক্যমত ছাড়া গণতান্ত্রিক উত্তোলন সম্ভব না। প্রশাসনসহ নির্বাচন ক্লান্ত যে সকল প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর বিষয়ে আরো কমফোর্টেবল হতে চাচ্ছি। সবাই যে মনে করছে নির্বাচনের বিষয়টা বিলম্ব করা হচ্ছে, সেটা তারা মানছেন না।'

বিএনপি তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, 'জুলাই আন্দোলনের প্রতিনিধিত্বকারী তিনজন এখানে উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন, তার মধ্যে একজন একটা রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বাকি দুইজন উপদেষ্টা এখনো বিদ্যমান। আমরা বলেছি বাকি যে দুইজন, সে তাদের কোন রাজনৈতিক পরিকল্পনা আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে তাদের একটা সময় এখান থেকে সরে যেতে হবে। যেহেতু এটার রাজনৈতিকভাবে গঠিত সরকার না, তাই রাজনৈতিক মোটিভ নিয়ে এখানে থাকাটা নিয়ম অনুযায়ী ঠিক হবে না।'

আমরা মনে করি বাংলাদেশ একটা জাতীয় পুনর্গঠনের কালে আছে। আমাদের এখানে জাতীয় নির্বাচনটাই মুখ্য, তাই জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটা রোডম্যাপ হওয়া প্রয়োজন। তবে এক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচন পরে হলেও সমস্যা নেই।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত