মুজিবের ডাবল ফ্যাসিস্ট হাসিনা: সালাহউদ্দিন আহমেদ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৫, ২১: ৪২
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, ২২: ২২

ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থানের বাঁক বদলের দিন’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে ছাত্রদল, ডান-বাম ছাত্রসংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।

আলোচনাসভায় বক্তারা অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ভূমিকা খাটো করার অভিযোগ তুলে বলেন, এই ঐতিহাসিক ঘটনায় ছাত্রদলের অবদান স্পষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা অস্বীকার করার অপচেষ্টা চলছে।

আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্দোলনের মূলে ছিল ছাত্রসমাজের চেতনা। আজ সেই চেতনাকে বিকৃত করার চেষ্টা হচ্ছে, যা আত্মত্যাগের অবমূল্যায়ন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য ১৯৭১ সালে লক্ষ শহীদ জীবন দিয়েছিল, তা ভুলে গিয়ে শেখ মুজিব ৪ বছরের মাথায় গণতন্ত্রকেই ভ্যানিশ করে দিল। এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করলো। এটা তারাই করেছে যারা ফ্যাসিবাদের প্রবক্তা। শেখ মুজিবুর রহমান ফ্যাসিস্ট ছিল, তার কন্যা (শেখ হাসিনা) তো ডাবল ফ্যাসিস্ট হয়েছে। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কখনো প্রত্যাবর্তন করুক তা বাংলাদেশের মানুষ চায় না।

তিনি আরও বলেন, বিগত ফ্যাসিস আমলে আন্দোলনকারীদের রক্তদানকে যারা কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে ফাটল ধরাতে চাচ্ছে করছে, বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনায় বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতৃস্থানীয় নেতৃবৃন্দের নামে কুৎসা রটানোর চেষ্টা করছে ,বিভিন্ন রকমের স্লোগানের মধ্যে দিয়ে বিভক্তি চেষ্টা করছে তারা ফ্যাসিবাদের আগমনকে স্বাগত জানায়। 

সালাউদ্দিন বলেন, বিগত ১৭ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ এর জুলাইয়ের ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সংগঠিত হয়েছে। কেননা মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে একটি ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “মিটফোর্ডের ঘটনার জেরে একটি গুপ্ত সংগঠন রাজনৈতিক ইন্ধন দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা বুয়েট ও চুয়েটে আমাদের সর্বোচ্চ নেতাদের নিয়ে নোংরা স্লোগান দিয়েছে। জামায়াতের এক নায়েবে আমিরের ভাগ্নি জামাইর নেতৃত্বে তারেক রহমান বিরোধী অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমরা সমালোচনা গ্রহণ করি, তবে মনে রাখা উচিত- আমাদেরও সহ্যের সীমা আছে। ৭১ ও ২৪-এর পরাজিত শক্তি ছাড়া বাকি সবার সাথে আমাদের ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা রয়েছে।”

আলোচনাসভায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, “জুলাই গণহত্যার বিচার নিয়ে শহীদ পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। অথচ আমরা বিচার নিশ্চিত না করে বিভাজনের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছি।”

ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি মাসুদ রানা জুয়েল অভিযোগ করে বলেন, “ছাত্রদলের শহীদদের নাম ও পরিচয় আড়াল করা হচ্ছে, যা ইতিহাস বিকৃতির সামিল।”

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেত্রী মুক্তা বাড়ই বলেন, “আজ রাজাকারদের পুনর্বাসন ও নরমালাইজেশন শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে গোটা দেশে ‘মবতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে।”

ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান, ইসলামি ছাত্র মজলিসের দপ্তর সম্পাদক নূর মোহাম্মদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুভাষিশ চাকমা, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি সাইদুল হক নিশান, ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসু ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার সকলেই ছাত্র রাজনীতির মধ্যে বিভাজন এবং অপপ্রচারের রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানান।

আবু বাকের মজুমদার বলেন, “ছাত্রদলের সহযোদ্ধারা প্রথম দিন থেকেই আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিলেন। ১৫ জুলাই একাত্তর হলে প্রথম হামলাতেও ছাত্রদলের ভাইয়েরা আহত হয়েছিলেন। এখানে এককভাবে কোনো সংগঠনের কৃতিত্ব দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি বলেন, “এই অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব শহীদদের, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। আমাদের গণতান্ত্রিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।”

সব সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ছাত্রশিবিরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান বলেন, “ছাত্রদল শহিদদের দলীয় সম্পত্তিতে পরিণত করে জুলাইয়ের সার্বজনীন আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিস্যাৎ করছে। তাদের মিথ্যাচার ও অপরাধপ্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানাই।”

ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজনীতিতে সহনশীলতা এবং অংশগ্রহণমূলক ঐক্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে, তবে জামাত-শিবির বা তাদের সমর্থিত কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো ঐক্য সম্ভব নয়।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত