রাজনৈতিক দলের নেতারা চান আরো আলোচনা

বাছির জামাল
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫, ১১: ০১

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে একমত থাকলেও ‘প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতিতে’ ভোটারের মতামত প্রতিফলিত হবে কি না- তা নিয়ে আরো চিন্তাভাবনার দরকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা।

তারা মনে করেন, দেশের নাগরিক হিসেবে প্রবাসীরা অবশ্যই ভোট দেওয়ার অধিকার রাখেন। তবে ভোট প্রয়োগ পদ্ধতিটা কী হবে, তা নিয়ে আরো চিন্তাভাবনা করতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করাটা যদি নিশ্চিত করা যায়, তা হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে দেশে ১২ কোটি ৩৭ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছে। জুনের মধ্যে আরো ৩০ লাখের বেশি ভোটার যুক্ত হবে এতে। দেশের প্রায় কোটি নাগরিক প্রবাসে থাকেন, যাদের উল্লেখযোগ্য অংশ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকারের বিষয়টি আলোচনায় আছে। কিন্তু এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।

তবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে তৎপর হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে। গত ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে চাই। অতীতে আমরা এ ব্যাপারে অনেকবার আশ্বাসের কথা শুনেছি। এ সরকারের আমলে এটা যেন প্রথমবারের মতো বাস্তবায়িত হয়, এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এজন্য একটা নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করতে হবে।

এরপর ১৮ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা। এ বিষয়ে আইন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, এই দায়িত্ব মূলত নির্বাচন কমিশনের। আর এ কাজে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা প্রস্তুতির মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের বিষয়ে বর্তমান কমিশনরও (ইসি) তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ইসি প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতির উপায় খুঁজছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, এনআইডি উইংসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সামনে নির্বাচন কমিশনে প্রবাসীদের জন্য ‘প্রক্সি ভোট’ নিয়ে প্রেজেন্টেশনও উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, যিনি ইসির এনআইডি ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয় কমিটিরও প্রধান।

ইসির তৃতীয় কমিশন সভা শেষে গত ৩০ জানুয়ারি এ নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া কীভাবে সহজ করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন তারা। প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগে কোন পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে, তা খতিয়ে দেখতে একটি কারিগরি কমিটিও গঠন করা হয়।

কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন ইসি সচিবালয়ের আইসিটি উইংয়ের সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল হক আর আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন এনআইডি উইংয়ের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী অধিশাখা) আব্দুল মমিন সরকার। এই কমিটিই প্রবাসীদের প্রক্সি ভোটিং নিয়ে কমিশনের সামনে প্রেজেন্টেশন দেয়।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল সানাউল্লাহ গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে জানান, তারা এ ইস্যুতে আগামী এপ্রিলের ৭ থেকে ৮ তারিখে ওয়ার্কশপ করবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে মতবিনিময় করবে কমিশন। এছাড়া এর বাইরে বিকল্প দুটি পদ্ধতির একটি পোস্টাল ব্যালট এবং অন্যটি ই-ভোটিং বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের কমিটি আগামী নির্বাচনের জন্য প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতির সুপারিশ করেছে। কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে চাইলে প্রক্সি ভোটিং চালু করতেই হবে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় শুধু সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রক্সি ভোটিং ব্যবস্থা রয়েছে। সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য প্রক্সি ভোটিং সিস্টেমের উন্নয়ন, আইনি কাঠামোর পরিবর্তন, পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন ও অডিটিংয়ের মাধ্যমে ধাপে ধাপে এটি চালু করা হবে। কমিশনার আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, সবার সম্মতি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারলে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমিত পরিসরে প্রক্সি ভোটিং চালু করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমদ বলেন, প্রবাসীদের ভোটিং নিশ্চিত করতে পারাটা হবে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে কীভাবে তা হবে- তা নিয়ে এখনই মন্তব্য না করাই ভালো।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে আমরা ইতিবাচক। আমরা যখন ইসির সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম, তখন বলেছিলাম যে, প্রবাসীরা যাতে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে। তবে তারা কোনো ম্যাকানিজমে ভোট প্রয়োগ করতে পারবে, তা ইসি বের করবে। প্রক্সি ভোট পদ্ধতি বোধহয় ও রকম একটা ম্যাকানিজম। এর মাধ্যমে যদি প্রবাসীর ভোট দিতে পারে, তাতে আমাদের কোনো অসু্বিধা নেই। তবে এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করে দলীয় অবস্থানের কথা জানাব।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নীতিগতভাবে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিপক্ষে নই। দেশের নাগরিক হিসেবে প্রবাসীদের অবশ্যই ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। যারা অন্য দেশে কাজ করেন, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর সদস্য, কূটনীতিক তাদের পোস্টাল ব্যালট ব্যবহার করে বা অনলাইনে ভোট দেওয়ার রীতি রয়েছে কোনো কোনো দেশে। প্রক্সি ভোট একটা নতুন বিষয়।

দেখা যাচ্ছে, এই পদ্ধতিতে ভোট দিলে যার ভোট দেওয়া হচ্ছে, তার মতামত প্রতিফলিত হচ্ছে কি না তা প্রমাণ করা হবে কীভাবে। যদি প্রমাণ করা যায় যে, প্রক্সি ভোটে ওই ভোটারের মতামত প্রতিফলিত হচ্ছে, তাতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত