লকডাউন নিয়ে বিভক্ত আ.লীগ, হামলার ছক কষছে এক পক্ষ

বিশেষ প্রতিনিধি, কলকাতা
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ২৮
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৭

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আগামী ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করার কথা রয়েছে। ওইদিনই ঢাকা ও বাংলাদেশে বড়সড় গোলমালের ছক কষছেন নিউ টাউনে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা।

দেশে থাকা সন্ত্রাসী, টোকাই, তরুণদের অর্থ দিয়ে এ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে তারা ছকও কষে ফেলেছেন। তবে এখানেও আওয়ামী লীগ দুটো ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একপক্ষ বলছে, ১৩ তারিখেই তারা ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরতে চায়। অন্যপক্ষ চায় গণতান্ত্রিক উপায়ে ধীরে ধীরে কাজ করতে। মানুষ যখন আওয়ামী লীগের অপকর্ম ভুলে যাবে তখন সুযোগ বুঝে তারা দেশে ফিরতে চান। নিউ টাউনে বসে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, তানভির হাসান মনির প্রমুখ নেতাদের সূত্রে এমনটাই খবর পাওয়া যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে ভারত। তিনটি ঘাঁটি তৈরি করেছে বলেও শোনা যাচ্ছে। এ অবস্থায় আসলেই কী পরিস্থিতি হতে পারে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ ও দেশত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি ভারতে ‘আত্মগোপনে’ বা ‘পলাতক’ হিসেবে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৩ নভেম্বর (আগামীকাল) রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হবে । এ মামলার সহ-অভিযুক্ত হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আরো কয়েকজন সাবেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাও পলাতক রয়েছেন।

অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। ফলে দলটির নেতারা বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন ও ক্ষমতাচ্যুত অবস্থায় রয়েছেন।

এ পরিস্থিতিতে ১৩ নভেম্বরকে ঘিরে ঢাকায় বড় ধরনের গোলযোগ ও পটপরিবর্তনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। নিউ টাউনে (কলকাতা) বসে থাকা পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি অংশ ১৩ নভেম্বর ব্যাপক সহিংসতার

মাধ্যমে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের ছক কষছে। উগ্র অংশটি রায় ঘোষণার দিনটিতেই বাংলাদেশে ব্যাপক সহিংসতা ঘটিয়ে পরিস্থিতিকে চরম অস্থিতিশীল করে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে চাইছে। এর জন্য তারা দেশে থাকা সন্ত্রাসী, টোকাই ও তরুণদের অর্থ দিয়ে ব্যবহার করার ছক কষছে বলে জানা গেছে। এটি মূলত সরকারের পতন ঘটিয়ে জোরপূর্বক প্রত্যাবর্তন বা ক্ষমতা দখলের একটি কৌশল।

তবে অন্য একটি পক্ষ মনে করছে, এ সময়ে সহিংসতায় হিতে বিপরীত হতে পারে। তারা গণতান্ত্রিক উপায়ে ধীরে ধীরে কাজ করে যাওয়ার পক্ষে। তাদের লক্ষ্য হলো, পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে বা মানুষ আওয়ামী লীগের এসব অপকর্ম ভুলে গেলে সুযোগ বুঝে দেশে ফেরা ও ক্ষমতার মূল স্রোতে যুক্ত হওয়া। এটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বনের ইঙ্গিত দেয়।

সূত্র মারফত জানা গেছে, পলাতক আওয়ামী লীগের নেতারা ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। এ কর্মসূচিতে ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ইতোমধ্যেই রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে এবং যেকোনো বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে।

এদিকে ভারতের বিশ্লেষকরা জানান, ভারতের সীমান্ত এলাকায় হাজার হাজার সেনা নামানো হয়েছে এবং তিনটি গ্যারিসন তৈরি হয়েছে। এর তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। বাংলাদেশ থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যাপকহারে শরণার্থীর আগমন বা জঙ্গি অনুপ্রবেশের ঝুঁকি থাকে। এত বড় সেনা মোতায়েন সেই ঝুঁকি মোকাবিলার একটি প্রস্তুতি হতে পারে।

মোদি সরকার তার নিকটতম প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতি সবসময়ই সংবেদনশীল। সীমান্তে এ বৃহৎ সামরিক প্রস্তুতি ঢাকার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের দিকে ভারতের গভীর উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। এ পরিস্থিতিতে ভারতের সামরিক তৎপরতার খবর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত