আমার দেশ

খালেদা জিয়াকে নিয়ে জনতার উচ্ছ্বাস, উজ্জীবিত বিএনপি

জাহিদুল ইসলাম
খালেদা জিয়াকে নিয়ে জনতার উচ্ছ্বাস, উজ্জীবিত বিএনপি

দীর্ঘ জল্পনার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সে দেশের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি জগতখ্যাত হাসপাতাল লন্ডন ক্লিনিকে এরই মধ্যে ভর্তি হয়েছেন তিনি। এতেই বিএনপি নেতাকর্মীরা নতুন করে আবার উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। তারা প্রাণশক্তি ফিরে পেয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

তারা বলছেন, দলীয় প্রধান ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্ত হলেও সুস্থ ছিলেন না। জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী দিবসে হাসিখুশি অবস্থায় দেখা গেলেও শারীরিক সক্ষমতা অর্জন না করায় বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি মেডিকেল বোর্ড। অবশেষে বিদেশে গেলেন তিনি। দলীয় প্রধান সুস্থ হয়ে আবার দলের হাল ধরবেন, মাঠে-ময়দানে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন, রাষ্ট্রের হাল ধরবেন- এরচেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

বিএনপি চেয়ারপারসন বিদেশ যাওয়ার নিশ্চিত খবরের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা পোস্ট ও ছবি দিয়ে খুশি প্রকাশ করছেন তারা। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার দিন বিমানবন্দরের রাস্তার দুই পাশে নেতাকর্মীসহ এত লোকের সমাগম হয়েছিল যে, গুলশান থেকে বিমানবন্দরের ৩০ মিনিটের পথ খালেদা জিয়ার গাড়িবহর পৌঁছাতে সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টা।

কারণ, উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশে দেশ ছেড়ে যাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদায় জানাতে এ সময় পথে পথে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ জনতা জড়ো হয়েছিলেন। ফলে ফ্লাইট ছাড়তেও বিলম্ব হয়ে যায়।

বিএনপি নেতাদের দাবি, খালেদা জিয়ার গাড়িবহর নির্বিঘ্নে বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের ভিড় না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এরপরও জনপ্রিয়তা ও তার প্রতি পতিত শেখ হাসিনা সরকারের নির্যাতনের জবাব দিতেই হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। এসব অন্যায়-নির্যাতনের জবাব দিতে পথে পথে বিদায় অভিবাদন জানান তারা।

তাদের অভিযোগ, খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে শেখ হাসিনা মিথ্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। এ সময় তাকে মানসিক নির্যাতনের কারণে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়ে যান। এই যাত্রায় তাকে দেখার মাধ্যমে নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

এ সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের আগে নেতাকর্মীদের একটি দল মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে এগোতে থাকে। পেছনে ছিলেন খালেদা জিয়া ও তার সফরসঙ্গীরা। পথে পথে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ান। অনেক ব্যানারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সফলতা কামনা করে প্লে-কার্ডে লেখা হয় ‘সেরে উঠুক বাংলাদেশ, সেরে উঠুক গণতন্ত্র’।

এ বিষয়ে দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহম্মেদ রবিন বলেন, নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ মনে করে দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার একমাত্র আস্থার প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া। তাই দলীয় নিষেধ সত্ত্বেও হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে তাকে বিদায় জানান।

নেতাকর্মীদের এমন স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি নিয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আমার দেশকে বলেন, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রার মাধ্যমে আমরা যেমন উজ্জীবিত, তেমনি সাধারণ মানুষও উজ্জীবিত। যার নেতৃত্বে গোটা দেশের মানুষ একত্রিত হয়। বেগম খালেদা জিয়া আগে যখন মিটিং ডাকতেন, তখন রাত ৮টার মিটিং ভোর রাতে হতো; সেখানেও মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। এ দেশের তিনিই একমাত্র নেত্রী যিনি একসঙ্গে তিন থেকে পাঁচটি আসনে নির্বাচন করেছেন; কিন্তু কখনো পরাজিত হননি।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সব মামলা ছিল মিথ্যার প্রতিবাদস্বরূপ। তাই সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে বলে মনে করেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ। তিনি আমার দেশকে বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে মানুষের ঢলই বলে দিচ্ছে কতটুকু জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন তিনি। তার এই জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে শেখ হাসিনা নির্যাতন শুরু করে। মানুষের এমন নেমে আসার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে খালেদা জিয়ার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা।

নেতাকর্মীদের আশা, বেগম খালেদা জিয় দ্রুত সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসবেন। দেশের গণতন্ত্র ও বিএনপির রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

এর আগে গতকাল নানান জটিলতার অবসান ঘটিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশে মঙ্গলবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন