ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’

আজ আত্মপ্রকাশ

মাহফুজ সাদি
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ৫২
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৩৩

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আজ শুক্রবার নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটছে। নতুন দলের নাম হবে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ বা ‘ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি’ (এনসিপি)। নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে আহ্বায়ক কমিটি হচ্ছে, যার শীর্ষ পাঁচটি পদ ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। নতুন দলের নেতৃত্ব জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতদের কাছে গণশপথ নেবে এবং গণহত্যার বিচার, সংবিধান পুনর্লিখন, গণপরিষদের জোর দাবি নিয়ে ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, আজ শুক্রবার বিকালে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করতে চলা এনসিপির আহ্বায়ক হচ্ছেন নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন। এ ছাড়া নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারীকে প্রধান সমন্বয়কারী, হাসনাত আবদুল্লাহকে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক ও সারজিস আলমকে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক পদে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটিতে আবদুল হান্নান মাসউদকে যুগ্ম সমন্বয়ক ও সালেহ উদ্দিন সিফাতকে দপ্তর সম্পাদক করা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌথ টানা বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে শীর্ষপদে মনোনীত নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে। এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় সেটির বিষয়ে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ৮টা) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এই পদের ক্ষেত্রে তাসনিম জারা, নাহিদা সারোয়ার নিভা, মনিরা শারমিন ও নুসরাত তাবাসসুমের নাম আলোচনায় রয়েছে।

একাধিক সূত্র আমার দেশকে নিশ্চিত করেছে, নতুন দলের ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে আজ শুক্রবার আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে। সেটিও টানা কয়েকদিনের ধারাবাহিক বৈঠকে অনেকটা চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল রাতে বাকিটাও চূড়ান্ত হয়। এতে মূল বিষয় হিসেবে থাকছে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো গণহত্যার দ্রুত ও ন্যায়বিচার, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপে কার্যকর রাষ্ট্রসংস্কার নিশ্চিত, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য কর্মসূচি নেওয়া, বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী সংবিধান পুনর্লিখন, নতুন সংবিধান তৈরি করতে গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন, গণপরিষদ নির্বাচন আইনসভা নির্বাচনের সঙ্গে একসঙ্গে অথবা আলাদাও হতে পারে। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সূত্রমতে, জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতদের সামনে রেখে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। দলের নাম ঘোষণার পর কমিটির ঘোষণা আসবে। তারপর গণশপথ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য বিলুপ্ত জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ার আমার দেশকে বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করে এই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটছে। আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে এই দল কাজ করবে। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার ও গণঅভ্যুত্থানের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে এই দল সফল হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

একাধিক ছাত্রনেতা জানান, গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার বিলোপ, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণাপত্র-এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে। আবার জনমত জরিপে সর্বাধিক মতামত এসেছে-একটি দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ এবং সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মার্যাদাভিত্তিক দেশ গড়ার পক্ষে। ফলে আমাদের রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য ও কর্মসূচিতে বিষয়গুলো সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে।

নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য খান মুহাম্মদ মুরসালীন আমার দেশকে বলেন, ‘যেহেতু একটি গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করছি, তাই এই অভ্যুত্থানের মধ্যে জনগণের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা উঠে এসেছিল, সেগুলোকেই আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। এ ছাড়া আমরা একটি জনমত জরিপ করেছিলাম। সেই জরিপের মধ্য দিয়েও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। বিষয়গুলো আমাদের রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।’

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত