মুফতি আ. জ. ম. ওবায়দুল্লাহ
আশুরা! এক হৃদয়বিদারক ইতিহাসের নাম। কারবালার প্রান্তরে ঘটে যাওয়া অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ন্যায় এবং সত্যের আত্মত্যাগের জ্বলন্ত উদাহরণ। ইসলামের ইতিহাসে এ দিনটি গভীর বেদনার, একই সঙ্গে উদ্দীপনারও। এটি শুধু শোক আর স্মরণের দিন নয়; বরং এটি প্রতিবাদের, প্রতিরোধের এবং চেতনার দিন। যে চেতনা দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সত্যের ঝান্ডা উঁচিয়ে ধরতে শেখায়, অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে মাথা নত না করে শহীদ হতে শিক্ষা দেয়।
হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম, কারবালা প্রান্তরে নবীজি (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হুসাইন (রা.) ও তার পরিবারসহ ৭২ জন সাথি অন্যায় শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে শহীদ হন। তাদের অপরাধ ছিল একটিই, তা হলো জালিমের বায়াত না করা এবং সত্য ও ইনসাফকে সমর্থন করা। তারা রক্ত দিয়ে ইতিহাস লিখে গেছেন যে, সত্যের পথ কখনোই চুপ করে থাকার নয়, অন্যায়কে মেনে নেওয়া ঈমানের পরিপন্থী।
কারবালার শহীদরা আমাদের দেখিয়ে গেছেন, জীবন হারানো যায়, কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করা যায় না। তারা আমাদের শিখিয়েছেন, শুধু ভাষণে নয়, বাস্তব জীবনে সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগ করতে হয়। আর এই শিক্ষা গ্রহণ করেই গড়ে তুলতে হবে একটি দুঃশাসনমুক্ত সমাজ।
আজকের বাস্তবতা বড়ই করুণ। বিশ্বজুড়ে অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি, লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারে সাধারণ মানুষ দিশাহারা। শোষণ-নিপীড়নের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছে অসংখ্য নিরপরাধ জনগণ। গরিব-বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হয়ে পড়েছে কাগুজে কথা। ঠিক এমনি এক প্রেক্ষাপটেই আশুরার চেতনা আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
আশুরার বার্তা হলো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও। দুঃশাসন ও জুলুমের বিরুদ্ধে সত্যের আওয়াজ তোলো। হুসাইন (রা.) আত্মত্যাগ করে জানিয়ে গেছেন, ‘আমার মতো কেউ ইয়াজিদের মতো শাসকের কাছে মাথা নত করতে পারে না।’ অর্থাৎ, কোনো মুসলমানের পক্ষে জুলুমের সঙ্গে আপস করা, মুনাফেক নেতৃত্বকে সমর্থন করা বা নীরবতা পালন করা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার পরিপন্থী। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা জালিমদের প্রতি বিন্দুমাত্রও ঝুঁকো না, তাহলে আগুন তোমাদের স্পর্শ করবে।’ (সুরা হুদ : ১১৩)
এই আয়াত সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করে, জুলুম ও দুঃশাসনের প্রতি সামান্যতম নমনীয়তাও ঈমানের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ কারণেই হুসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ ইসলামের চেতনার এক আলোকবর্তিকা, যা যুগে যুগে অনুপ্রেরণার উৎস। আমরা যদি হুসাইনের উত্তরসূরি হতে চাই, আমাদের সমাজে অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইনসাফ ও আদর্শিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কারবালা শুধু শোক নয়, এটি প্রতিবাদ, চেতনা ও আদর্শিক বিপ্লবের প্রতীক।
একটি দুঃশাসনমুক্ত সমাজ গড়তে হলে ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও জনকল্যাণভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ইসলামি চিন্তা ও চেতনার আলোকে পরিচালিত হতে হবে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তর। শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা ও আল্লাহভীতি জাগাতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে হতে হবে আমানতদার, খোদাভীরু এবং জনগণের খেদমতে নিবেদিতপ্রাণ।
এখানে আশুরার শিক্ষা আমাদের পথ দেখায়। জুলুমের কাছে আত্মসমর্পণ নয়; বরং সত্য, ইনসাফ, আত্মত্যাগ ও আল্লাহভীতির ভিত্তিতে সংগ্রামই একমাত্র মুক্তির পথ। হুসাইন (রা.)-এর রক্তে লাল সেই পথই দুঃশাসনমুক্ত সমাজের একমাত্র আলো।
আসুন, আমরা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে আশুরার চেতনা বাস্তবায়ন করি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হই, ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের আলো জ্বালাই। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করি। শেষ কথা হলো, আশুরা আমাদের শুধু অতীত স্মরণ নয়, বরং বর্তমান সংশোধনের ও ভবিষ্যৎ নির্মাণের এক বাস্তব শিক্ষা। ‘আশুরার চেতনায় নির্মিত হোক দুঃশাসনমুক্ত সমাজ’—এটাই হোক আমাদের প্রত্যয়।
লেখক : মুহাদ্দিস, ছারছীনা দারুস্সুন্নাত জামেয়া নেছারিয়া দীনিয়া, পিরোজপুর
আশুরা! এক হৃদয়বিদারক ইতিহাসের নাম। কারবালার প্রান্তরে ঘটে যাওয়া অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ন্যায় এবং সত্যের আত্মত্যাগের জ্বলন্ত উদাহরণ। ইসলামের ইতিহাসে এ দিনটি গভীর বেদনার, একই সঙ্গে উদ্দীপনারও। এটি শুধু শোক আর স্মরণের দিন নয়; বরং এটি প্রতিবাদের, প্রতিরোধের এবং চেতনার দিন। যে চেতনা দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সত্যের ঝান্ডা উঁচিয়ে ধরতে শেখায়, অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে মাথা নত না করে শহীদ হতে শিক্ষা দেয়।
হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম, কারবালা প্রান্তরে নবীজি (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হুসাইন (রা.) ও তার পরিবারসহ ৭২ জন সাথি অন্যায় শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে শহীদ হন। তাদের অপরাধ ছিল একটিই, তা হলো জালিমের বায়াত না করা এবং সত্য ও ইনসাফকে সমর্থন করা। তারা রক্ত দিয়ে ইতিহাস লিখে গেছেন যে, সত্যের পথ কখনোই চুপ করে থাকার নয়, অন্যায়কে মেনে নেওয়া ঈমানের পরিপন্থী।
কারবালার শহীদরা আমাদের দেখিয়ে গেছেন, জীবন হারানো যায়, কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করা যায় না। তারা আমাদের শিখিয়েছেন, শুধু ভাষণে নয়, বাস্তব জীবনে সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগ করতে হয়। আর এই শিক্ষা গ্রহণ করেই গড়ে তুলতে হবে একটি দুঃশাসনমুক্ত সমাজ।
আজকের বাস্তবতা বড়ই করুণ। বিশ্বজুড়ে অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি, লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারে সাধারণ মানুষ দিশাহারা। শোষণ-নিপীড়নের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছে অসংখ্য নিরপরাধ জনগণ। গরিব-বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হয়ে পড়েছে কাগুজে কথা। ঠিক এমনি এক প্রেক্ষাপটেই আশুরার চেতনা আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
আশুরার বার্তা হলো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও। দুঃশাসন ও জুলুমের বিরুদ্ধে সত্যের আওয়াজ তোলো। হুসাইন (রা.) আত্মত্যাগ করে জানিয়ে গেছেন, ‘আমার মতো কেউ ইয়াজিদের মতো শাসকের কাছে মাথা নত করতে পারে না।’ অর্থাৎ, কোনো মুসলমানের পক্ষে জুলুমের সঙ্গে আপস করা, মুনাফেক নেতৃত্বকে সমর্থন করা বা নীরবতা পালন করা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার পরিপন্থী। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা জালিমদের প্রতি বিন্দুমাত্রও ঝুঁকো না, তাহলে আগুন তোমাদের স্পর্শ করবে।’ (সুরা হুদ : ১১৩)
এই আয়াত সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করে, জুলুম ও দুঃশাসনের প্রতি সামান্যতম নমনীয়তাও ঈমানের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ কারণেই হুসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ ইসলামের চেতনার এক আলোকবর্তিকা, যা যুগে যুগে অনুপ্রেরণার উৎস। আমরা যদি হুসাইনের উত্তরসূরি হতে চাই, আমাদের সমাজে অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইনসাফ ও আদর্শিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কারবালা শুধু শোক নয়, এটি প্রতিবাদ, চেতনা ও আদর্শিক বিপ্লবের প্রতীক।
একটি দুঃশাসনমুক্ত সমাজ গড়তে হলে ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও জনকল্যাণভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ইসলামি চিন্তা ও চেতনার আলোকে পরিচালিত হতে হবে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তর। শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা ও আল্লাহভীতি জাগাতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে হতে হবে আমানতদার, খোদাভীরু এবং জনগণের খেদমতে নিবেদিতপ্রাণ।
এখানে আশুরার শিক্ষা আমাদের পথ দেখায়। জুলুমের কাছে আত্মসমর্পণ নয়; বরং সত্য, ইনসাফ, আত্মত্যাগ ও আল্লাহভীতির ভিত্তিতে সংগ্রামই একমাত্র মুক্তির পথ। হুসাইন (রা.)-এর রক্তে লাল সেই পথই দুঃশাসনমুক্ত সমাজের একমাত্র আলো।
আসুন, আমরা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে আশুরার চেতনা বাস্তবায়ন করি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হই, ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের আলো জ্বালাই। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করি। শেষ কথা হলো, আশুরা আমাদের শুধু অতীত স্মরণ নয়, বরং বর্তমান সংশোধনের ও ভবিষ্যৎ নির্মাণের এক বাস্তব শিক্ষা। ‘আশুরার চেতনায় নির্মিত হোক দুঃশাসনমুক্ত সমাজ’—এটাই হোক আমাদের প্রত্যয়।
লেখক : মুহাদ্দিস, ছারছীনা দারুস্সুন্নাত জামেয়া নেছারিয়া দীনিয়া, পিরোজপুর
মক্কার মসজিদুল হারামের অন্যতম পবিত্র স্থান হাতিম। কাবার মূল কাঠামোর অংশ হিসেবে বিবেচিত এ স্থানটি মুসল্লিদের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত ও নামাজ আদায়ের আকাঙ্ক্ষিত জায়গা। এখানে শৃঙ্খলাপূর্ণ উপায়ে ইবাদত নিশ্চিত করতে পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
২০ ঘণ্টা আগেখাদ্যগ্রহণ যেমন ক্ষুধা মেটানোর জন্য অপরিহার্য, প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হিসেবে খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে উত্তম সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার অনুসরণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যা খায়, যেভাবে খায়—তা তার চরিত্র, নীতি ও রুচির পরিচয় বহন করে। তাই ইসলাম আমাদের খাওয়ার উত্তম সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার শিখিয়েছে।
২ দিন আগেসম্প্রতি ইসলামি আলোচক আমীর হামজা আল্লাহর রাসুল (সা.)–কে ‘সাংবাদিক’ বলেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, যেহেতু নবী (সা.) ছিলেন আল্লাহর বার্তাবাহক, তাই রূপক অর্থে তাঁকে সাংবাদিক বলা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এই তুলনা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বিভ্রান্তিকর এবং রাসুলের মর্যাদার পরিপন্থী।
৫ দিন আগেআমাদের সমাজে বেশ পরিচিত দুটি শব্দ হলো অলি-আওলিয়া। বাঙালি মুসলমান সমাজে সাধারণত মুসলমানদের একটি বিশেষ শ্রেণিকে অলি-আওলিয়া মনে করা হয়। অলি-আওলিয়াদের বিশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতা আছে এমন বিশ্বাসও সাধারণ মুসলমানদের রয়েছে।
৫ দিন আগে