আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

বোনদের পৈতৃক সম্পত্তি দিতে গড়িমসি জঘন্য পাপ

ওমর ফারুক ফেরদৌস
বোনদের পৈতৃক সম্পত্তি দিতে গড়িমসি জঘন্য পাপ

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুটি ভিডিও নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন প্রতিবন্ধী নারীর বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে তার আপন বড় ভাই। তার বাড়িতে ঢোকার বা বাড়ি থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় এখন মই বেয়ে ওঠানামা করা। প্রতিবন্ধী হওয়ায় তিনি মই বেয়ে ওঠানামা করতে পারছেন না। ফলে মাসের পর মাস তিনি বাড়ির বাইরে যেতে পারেন না। আরেক বোন যিনি বেশ বয়স্ক, তিনি বাইরে আসা-যাওয়া করেন, তিনিও কয়েকবার মই থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই ভিডিওতেই।

বিজ্ঞাপন

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের একজন সুপরিচিত অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলের দুই বোন জানাচ্ছেন, তার ভাই তাদের উত্তরাধিকারের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছেন। বোন-জামাইদের জীবনের হুমকি দিয়ে জিম্মি করেছেন। এরপর ওই অভিনেতার বক্তব্যও দেখানো হয়েছে, তিনি বলছেন, তাদের প্রয়োজন থাকলে আমার কাছে এলো না কেন? কত মানুষকে সাহায্য করি আর ওরা তো আমার বোন। অর্থাৎ অভিনেতা এটাকে দয়া-দাক্ষিণ্য হিসেবে দেখছেন। অন্যদের তিনি দান করেন, বোনদেরও দান করবেন, এ রকমই তার বক্তব্য।

ইসলামে মিরাস বা উত্তরাধিকার সম্পত্তি নারীর ন্যায্য অধিকার, কারো দয়া-দাক্ষিণ্য নয়। বাবার মৃত্যুর পরপর ছেলেরা যেমন বাবার সম্পদের নির্দিষ্ট অংশের মালিক হয়, মেয়েরাও বাবার নির্দিষ্ট অংশের মালিক হয়। মিরাসপ্রাপ্তির দিক থেকে ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে পার্থক্য নেই। আল্লাহতায়ালা কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘বাবা-মা এবং আত্মীয়দের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে পুরুষদের অংশ রয়েছে আর বাবা-মা এবং আত্মীয়দের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ রয়েছে, তা অল্পই হোক আর বেশিই হোক, এক নির্ধারিত অংশ।’ (সুরা নিসা : ৭)

এই আয়াত থেকে পরিষ্কার যে, নারী ও পুরুষ প্রত্যেকে বাবার সম্পদের নির্দিষ্ট অংশের হকদার, সেই সম্পদ কম হোক বা বেশি হোক। এটা নারীর প্রয়োজন বা চাওয়ার ওপর নির্ভরশীল নয়। বাবার সম্পদের প্রাপ্য অংশ বোনদের বুঝিয়ে দেওয়া ভাইদের দায়িত্ব, অনুগ্রহ নয়।

আমাদের সমাজে দ্বীনবিমুখ পরিবারগুলোয় তো বটেই, অনেক দ্বীনদার পরিবারেও দেখা যায় ‘বোনদের প্রয়োজন নেই’, ‘ভাইয়ের বাসাতেই তো আসবে’, ‘সারা জীবন তো ভাই-ই দেখবে’ ইত্যাদি আবেগপূর্ণ কথাবার্তা বলে বোনদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। বোনরাও অনেক সময় চক্ষুলজ্জায় চুপ করে থাকে, নিজের ন্যায্য হক ছেড়ে দেয়। আর বোনরা নিজেদের সম্পত্তির দাবিতে কঠোর হলে উপরোক্ত দুই ঘটনার মতো পরিস্থিতি হয়। এ রকম ভাইদের মনে রাখা উচিত, দুনিয়ায় বোনদের ঠকিয়ে কোনোভাবে পার পেলেও আখিরাতে আল্লাহর আদালতে তারা পার পাবে না। এসব কর্মকাণ্ড আল্লাহর বিধানের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে, অবৈধ সম্পদ আত্মসাৎ হিসেবে গণ্য হবে।

পবিত্র কোরআনে মিরাসের সম্পদ বণ্টনের বিধান বর্ণনা করার পর আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহাসফলতা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নাফরমানি করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক আজাব।’ (সুরা নিসা : ১৩-১৪)

নবীজি (সা.) থেকে বর্ণিত বিভিন্ন হাদিসেও অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করার ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা এসেছে। জমিজমা আত্মসাৎ করার ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘কেউ যদি কারো সামান্য পরিমাণ জমিজমা দখল করে, কিয়ামতের দিন ওই জমি সাত স্তরসহ তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি) এই আয়াত ও হাদিস পড়ার পর একজন মুসলমান কোনোভাবেই নিজের বোনদের বা যে কারো সম্পদ আত্মসাৎ করার কথা ভাবতে পারে না। ন্যায্য পাওনা থেকে কাউকে বঞ্চিত করার কথা ভাবতে পারে না।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

নির্বাচনে কোনো দলে নয়, স্বতন্ত্র হয়ে লড়বেন আসিফ মাহমুদ

নিজের পোস্টার নিজেই নামালেন জামায়াত প্রার্থী শিশির মনির

বদরুন্নেসার শিক্ষা সফরে ঢাকা কলেজের বাস, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে জব্দকৃত ট্যাংকার বন্দরে নিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

মাঝ আকাশে বিমানের দরজা খোলার চেষ্টা, যাত্রী গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন