চূড়ান্ত প্রাপ্তির শেষ ১০ দিন

নুসরাত জাহান আয়েশা
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৫, ১২: ৫৪

চৈত্রের তৃষ্ণার্ত পথিকের মতো মুমিন অপেক্ষা করে মাহে রমজানের। আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস রমজান। রোজা শুধু তৃষ্ণা ও ক্ষুধার সংগ্রাম নয়, এটি হৃদয়ের পবিত্রতা অর্জনের এক মহাপ্রচেষ্টা। রোজাদারের জন্য প্রতিটি সাহরি ও ইফতার এক নবযাত্রার সূচনা, যেখানে প্রতিটি দিন আরো একধাপ আত্মশুদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। বান্দা এগিয়ে যায় তার রবের কাছে।

বিজ্ঞাপন

রমজানের প্রথম দশক রহমতের। দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের আর তৃতীয় দশক নাজাতের। প্রথম দশ দিন আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের রহমতের বারিধারা বর্ষণ করে মাগফিরাত ও ক্ষমার উপযোগী করেন। আর দ্বিতীয় দশ দিন আল্লাহর বান্দারা তার দরবারে হাত উত্তোলন করলে গুনাহ মাফ করে দেন। আর তৃতীয় দশ দিন বান্দার জন্য নাজাতের ফয়সালা দেন। তাই মাহে রমজানের শেষ দশক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ সময় রমজানের বিদায়ের পালা। হাদিসে এসেছে, এই দশ দিন রাসুল (সা.) নিজেও এবাদত বন্দেগি বাড়িয়ে দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ দশক আগমন করত, রাসুল (সা.) কোমর বেঁধে নিতেন (অর্থাৎ ইবাদতে আত্মনিয়োগ করতেন)। নিজে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং পরিবারবর্গকেও রাতে জাগিয়ে দিতেন। (বোখারি : ১৮৮৪)

আজ শুরু হচ্ছে রমজানের সবচেয়ে মূল্যবান শেষ দশক । প্রথম ২০ দিনের চেয়ে শেষের এই দিনগুলোয় তাই ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। সেটা হতে পারে বিচিত্র আমলের মাধ্যমে। যেমন-

১. নফল ইবাদত করা

নফল ইবাদত এমন একটি এবাদত, যা ফরজ বা ওয়াজিব নয়, বরং আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করা হয়। রমজানের শেষ দশকে নফল ইবাদত যেমনÑ সালাত, সাওম, জিকির, তিলাওয়াতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর আরো কাছে চলে আসে এবং তার রহমত ও ক্ষমালাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। আর রমজানের শেষ দশকে শবেকদরের মতো মর্যাদাপূর্ণ রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। তাই শেষ দশকের নফল ইবাদত অনেক বড় প্রতিদান লাভের কারণ হয়।

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে এত বেশি এবাদত করতেন, যা বছরের অন্য কোনো সময় করতেন না।’ (মুসলিম : ১১৭৫)

রাসুল (সা.) সব সময় কবরের আজাবের ভয়ে ভীত থাকতেন, যার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছিল, তিনিই ছিলেন আল্লাহতায়ালার সবচেয়ে কাছের এবং প্রিয় বান্দা। আর আমরা তো এটাও জানি না যে আমাদের গুনাহ মাফ করা হবে কি না। তাই আমাদের উচিত অন্তত রমজানের শেষ দশ দিন রাসুল (সা.)-কে অনুসরণ করা এবং বেশি বেশি নফল ইবাদত করা।

২. লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান

হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রজনি লায়লাতুল কদর। লাইলাতুল কদর এমন এক মহিমান্বিত রজনি, যে রজনিতে আল্লাহপাক তার প্রিয় হাবিবের ওপর কোরআন নাজিল করেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র এই রজনির গুরুত্ব বোঝাতে কদর নামে একটি সুরা নাজিল করেন।

পবিত্র এই রজনিকে আল্লাহতায়ালা কোরআনে হাজার রাতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহর কোনো বান্দা যদি এ রাতে ইবাদত করে, তবে সে হাজার মাস ইবাদত করার সওয়াব লাভ করবে। এক হাজার মাসে ৩০ হাজার রাত হয় অর্থাৎ এ রাতের মর্যাদা ৩০ হাজারগুণ বেশি।

লায়লাতুল কদর কবে এটা নিয়ে হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের শেষ দশকে বিজোড় রাতে লাইতুল কদর খোঁজো।’ (বোখারি : ২০১৭)

অর্থাৎ রমজানের শেষ দশকের একরাত বিশেষত ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখ লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই আমাদের উচিত এ রাতগুলোয় বেশি বেশি ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা এবং জান্নাতের পথ সুগম করা।

৩. ইতিকাফ করা

রমজানের শেষ দশকের অন্যতম একটি ইবাদত হলো ইতেকাফ। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশ দিন আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য লাভের জন্য সব ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে মসজিদে অবস্থান করতেন। রাসুল (সা.)-এর প্রিয় আমলগুলোর মধ্যে ইতিকাফ অন্যতম। তিনি নিজে ইতিকাফ করতেন এবং সাহাবিদেরও এই ইবাদতে উৎসাহিত করতেন।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশক ইতেকাফ করতেন।’ (বোখারি ও মুসলিম) ইতিকাফের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে শেষ দশ দিন ইতিকাফ করবে, তার আমলনামায় দুটি কবুল হজ ও দুটি ওমরাহর সমতুল্য সওয়াব লেখা হবে।’ (শুয়াবুল ইমান : ৩৬৮১)

৪. সদকাতুল ফিতর আদায় করা

রমজানের শেষ দশকের আরেকটি ইবাদত হলো সদকাতুল ফিতর আদায় করা। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘প্রত্যেক দাস, আজাদ, নারী, পুরুষ, প্রাপ্তবয়স্ক, অপ্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের ওপর আল্লাহতায়ালার রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক বা যব হোক, তা এক সা পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন এবং লোকজনের ওপর ঈদের সালাতে বের হওয়ার আগেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (বোখারি : ১৫০৩)

রমজানের শেষ দশক সত্যিই এক মহিমান্বিত সময়, যাতে আছে লাইলাতুল কদর, যা হাজার বছরের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। তাই এ সময় নফসের সব খারাপ প্রবৃত্তি দূর করে সত্যিকার অর্থে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের মধ্যে নিজেকে স্থাপন করা উচিত।

বিষয়:

রমজান
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত