আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

শহীদের অকল্পনীয় মর্যাদা

মুহাম্মদ ইশরাক বিন ফরিদ

শহীদের অকল্পনীয় মর্যাদা

একজন খাঁটি মুসলমান ইসলামের বিধিবিধান যথাযথভাবে পালন করেন; নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, জাকাত আদায় করেন, হজ পালন করেন। এছাড়া মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, মিথ্যা পরিহার করা, জুলুম-অন্যায়-অবিচার থেকে বিরত থাকা প্রভৃতি মানবিক ও নৈতিক গুণাবলিও অর্জন করে থাকেন। তবে দ্বীন পরিপূর্ণ করতে আখেরাতে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত হতে তার অন্তরে এক সুপ্ত বাসনা সর্বদা নিহিত থাকে। তা হলো, জেহাদের চেতনা ও শাহাদাতের তামান্না। আল্লাহর জমিনে তার কালেমা বুলন্দ করতে, সর্বত্র ইনসাফ কায়েম করতে এবং জুলুমমুক্ত সমাজ গড়তে সে এই চেতনা লালন করে এবং নিজের মধ্যে ধারণ করে। প্রয়োজনে শরীরের তাজা খুন দিয়ে ইসলাম ও মানবতার জন্য নিজেকে সঁপে দেয় আল্লাহর কাছে। কারণ সে জানে, আল্লাহ তায়ালা মুমিনের জানমাল কিনে নিয়েছেন। বিনিময়ে প্রস্তুত রেখেছেন চিরশান্তির স্থান জান্নাত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের কাছ থেকে তাদের জান আর মাল কিনে নিয়েছেন, কারণ তাদের জন্য (বিনিময়ে) আছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। অতঃপর (দুশমনদের) হত্যা করে এবং (নিজেরা) নিহত হয়। এ ওয়াদা তার ওপর অবশ্যই পালনীয়, যা আছে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে। আল্লাহর চেয়ে আর কে বেশি নিজ ওয়াদা পালনকারী? কাজেই তোমরা যে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করেছ তার জন্য আনন্দিত হও, আর এটাই হলো মহান সফলতা।’ (সুরা তাওবা : ১১১)

এ আয়াতে জান্নাত অর্জনে আল্লাহর রাস্তায় নিজের অর্জিত ধনসম্পদ এবং নিজের জীবন উৎসর্গ করার গুরুত্ব ও তাৎপর্য ফুটে উঠেছে। এছাড়া রাসুল (সা.)-এর সিরাত ও তার মুখনিঃসৃত অসংখ্য হাদিস রয়েছে, যাতে আল্লাহর জন্য তার পথে জেহাদের গুরুত্ব ও ফজিলত সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শহীদি মৃত্যু কামনায় নবীজি

রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর রাহে শহীদ হওয়ার বাসনা লালন করতেন। এমনকি একবার মৃত্যুর পর আবার জীবিত হলেও তিনি জেহাদের জন্যই আবার নিজের জান দিতে চাইতেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘আমার উম্মতের জন্য কষ্টদায়ক হবে বলে যদি মনে না করতাম তবে কোনো সেনাদলের সঙ্গেই না গিয়ে বসে থাকতাম না। আমি অবশ্যই এটা ভালোবাসি যে, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই। (মুসলিম : ১৮৭৬)

জেহাদ সর্বোত্তম ইবাদত

সর্বোত্তম ইবাদত হলো জেহাদ। এরপর কবুল হজ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি (সা.) বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, তারপরে কোন আমল? তিনি (সা.) বললেন, আল্লাহর পথে জেহাদ করা। আবারও জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোনটি? তিনি (সা.) বললেন, হজে মাবরুর, অর্থাৎ কবুলযোগ্য হজ।’ (বুখারি : ২৫০৬)

ইসলামের সর্বোচ্চ শিখর

সব কাজের মূল হলো ইসলাম, স্তম্ভ হলো নামাজ এবং সর্বোচ্চ শিখর হলো জেহাদ। মু’আজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি কি সব কাজের মূল, স্তম্ভ ও সর্বোচ্চ শিখর সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, সব কাজের মূল হলো ইসলাম, স্তম্ভ হলো নামাজ এবং সর্বোচ্চ শিখর হলো জেহাদ।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৯৭৩)

আল্লাহর জন্য জেহাদে শরিক হওয়া এবং আল্লাহর রাস্তায় জেহাদকারী তথা মুজাহিদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ অনেক ফজিলতের কথা বলেছেন।

শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম জীবন

জেহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণকারী এবং জেহাদে লিপ্ত ব্যক্তির জীবন শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের উদ্দেশ্যে ঘোড়ার লাগাম ধরে প্রস্তুত থাকে তার জীবনযাত্রাই সর্বোত্তম। যখনই শত্রুর উপস্থিতি বা শত্রুর দিকে ধাবমান হওয়ার শব্দ শুনতে পায়, তখন সে ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে দ্রুত বের হয়ে পড়ে এবং যথাস্থানে পৌঁছে শত্রুনিধন ও শহীদ হওয়ার মর্যাদার সন্ধান করে।’ (মুসলিম : ৩৯৭৭)

হয় গনিমত নয়তো শাহাদাত

মুজাহিদ শাহাদাতবরণ করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাত দান করবেন। আর জেহাদ করে ঘরে ফিরলে গনিমত লাভে ধন্য হবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ ওই ব্যক্তির জিম্মাদার হয়ে যান, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার পথে বের হয়। ‘এই মুজাহিদ আমার ও আমার রাসুলের প্রতি ঈমান ও বিশ্বাসের সত্যতা স্বীকারের তাকিদেই স্বীয় ঘর থেকে আমার পথে বের হয়েছে, তাকে আমি অবশ্যই পরিপূর্ণ সাওয়াব দান করব, অথবা গনিমাতের মালসহ ঘরে ফিরিয়ে আনব, অথবা তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাব।’ (বুখারি : ৩৭৮)

শহীদের জন্য ছয়টি পুরস্কার

মিকদাম বিন মা’দিকারিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শহীদের জন্য আল্লাহ্ তায়ালার কাছে ছয়টি পুরস্কার আছে—১. তার প্রথম রক্তবিন্দু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ক্ষমা করা হয় এবং তাকে তার জান্নাতের বাসস্থান দেখানো হয়; ২. কবরের আজাব থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়; ৩. সে কিয়ামতের কঠিন ভীতি থেকে নিরাপদ থাকবে; ৪. তার মাথায় মর্মর পাথরখচিত মর্যাদার টুপি পরিয়ে দেওয়া হবে। এর একেকটি পাথর দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম; ৫. তার সঙ্গে টানা টানা আয়তলোচনা বাহাত্তরজন জান্নাতি হুরকে বিয়ে দেওয়া হবে এবং ৬. তার সত্তরজন নিকটাত্মীয়ের জন্য তার সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (তিরমিজি : ১৬৬৩)

লেখক : শিক্ষক, জামেউল উলুম মাদরাসা, মিরপুর-১৪, ঢাকা

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন