মাওলানা দৌলত আলী খান
ইতিকাফ একটি মহান ইবাদত। ইতিকাফের মাধ্যমে ঈমানদার নিজেকে অনন্য উচ্চতায় উপনীত করে। ইতিকাফ অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্য সব বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিরন্তর সাধনায় মশগুল হয়ে পড়ে। সবার উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ঈমানি চেতনাকে প্রাণিত করে তোলা। ইতিকাফকারীর অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। দুনিয়ার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে। ইতিকাফের কারণে প্রবৃত্তির চাহিদা লোপ পায়।
ইতিকাফের পরিচয়
ইতিকাফ অর্থ কোনো স্থানে নিজেকে আবদ্ধ রাখা। শরিয়তের পরিভাষায় বিশেষ নিয়তে বিশেষ অবস্থায় আল্লাহতায়ালার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে।
ইতিকাফ তিন প্রকার-১. ওয়াজিব : ইতিকাফ করার জন্য মানত বা নজর করা হলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। এই ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। রোজাবিহীন ওয়াজিব ইতিকাফ আদায় হবে না।
২. সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া : রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। অর্থাৎ মসজিদের অধিবাসীর মধ্যে কোনো একজন ইতিকাফ করলে, অন্য লোকরা গোনাহ থেকে বেঁচে যাবে। আর যদি কেউ না করে, তখন সবাই গোনাহগার হবে। এই ইতিকাফের জন্যও রোজা শর্ত। এটি ২০ রমজানের সূর্যাস্ত থেকে ২৯ বা ৩০ রমজানে ঈদুল ফিতরের চাঁদ উদয় হওয়া পর্যন্ত বাকি থাকে।
৩. মুস্তাহাব : ওয়াজিব ও সুন্নত ইতিকাফ ছাড়া অন্য এতেকাফ মুস্তাহাব। এর জন্য রোজা শর্ত নয়। আর এ ইতিকাফের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়ও নেই। (হেদায়া : ১/২২৯; ফতোয়া শামি : ২/১৭৮)
আল-কোরআনে ইতিকাফ
পবিত্র কোরআন মানবজাতির সব বিষয়ের পথপ্রদর্শক। ইতিকাফের আলোচনা মহাগ্রন্থ আল কোরআনে উল্লিখিত হয়েছে, যা একজন মোমিনের অন্তরে ইতিকাফ করার প্রতি অধিক আগ্রহ সৃষ্টি করবে এবং ঈমানকে বলবান করবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী ও ইতিকাফকারী এবং রুকু ও সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’ (সুরা বাকারা : ১২৫)
হাদিসে ইতিকাফের ফজিলত
মহানবী (সা.) মদিনায় অবস্থানকালে প্রতিবছর ইতিকাফ পালন করেছেন। দ্বীনি দাওয়াত, তালিম-তরবিয়ত ও জিহাদে ব্যস্ত থাকার সত্ত্বেও তিনি রমজানে ইতিকাফ ছাড়েননি। তবে ইসলামের ইতিহাসে শুধু একবার ইতিকাফ ছাড়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবছর ইতিকাফ পালন করেছেন মহানবী (সা.)। ইতিকাফের ফজিলতের জন্য রাসুল (সা.)-এর ধারাবাহিকতাই যথেষ্ট।
একজন মুসলমান ইতিকাফ পালন করার কারণে দুনিয়ার যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত থাকে। সাধারণত লোকরা চোখের কুদৃষ্টির কারণেই ছোট-বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ইতিকাফের দরুন চোখের দৃষ্টি হেফাজত হয়। সেই সঙ্গে অন্তরও পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। আর ইতিকাফকারীর সওয়াব বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, সে গোনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকে এবং তার জন্য সওয়াব লেখা হয় ওই ব্যক্তির ন্যায়, যে বাইরে অবস্থান করে যাবতীয় ভালো কাজ করে। (ইবনে মাজাহ : ১৮৫৩)
নারীদের ইতিকাফ
ইসলাম মোমিন নারীদের পুরুষের মতো ইতিকাফ পালন করার অনুমতি দিয়েছে। তবে পুরুষরা মসজিদে ইতিকাফ পালন করবে। আর নারীরা আপন ঘরের নির্জন স্থানে ইতিকাফ করবে। যাতে একজন মোমিন নারী রমজান মাসে ইতিকাফ করার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। মেয়েদের ইতিকাফের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমনÑ আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) ইন্তেকাল পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। অতঃপর তার স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন।’ (বোখারি : ২০৬৫; মুসলিম : ২৮৪১)
ইতিকাফে কীভাবে সময় কাটাবেন
সাধারণত একজন মুসলমান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে ইতিকাফ করে। ইতিকাফকারী সব সময় ইবাদতে লিপ্ত থাকে। দুনিয়ার সমুদয় ব্যস্ততাকে বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহর নৈকট্য লাভের সাধনায় থাকে। তাই ইতিকাফকারীকে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, দরুদ পাঠে মশগুল থাকা চাই। এ ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ, আওয়াবিন, এশরাক, চাশত ইত্যাদি সুন্নত নামাজও বেশি পরিমাণে নিয়মিত আদায় করতে পারেন। ইতিকাফ অবস্থায় রাসুল (সা.) বেশি পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করতেন।
লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদরাসা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম
ইতিকাফ একটি মহান ইবাদত। ইতিকাফের মাধ্যমে ঈমানদার নিজেকে অনন্য উচ্চতায় উপনীত করে। ইতিকাফ অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্য সব বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিরন্তর সাধনায় মশগুল হয়ে পড়ে। সবার উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ঈমানি চেতনাকে প্রাণিত করে তোলা। ইতিকাফকারীর অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। দুনিয়ার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে। ইতিকাফের কারণে প্রবৃত্তির চাহিদা লোপ পায়।
ইতিকাফের পরিচয়
ইতিকাফ অর্থ কোনো স্থানে নিজেকে আবদ্ধ রাখা। শরিয়তের পরিভাষায় বিশেষ নিয়তে বিশেষ অবস্থায় আল্লাহতায়ালার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে।
ইতিকাফ তিন প্রকার-১. ওয়াজিব : ইতিকাফ করার জন্য মানত বা নজর করা হলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। এই ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। রোজাবিহীন ওয়াজিব ইতিকাফ আদায় হবে না।
২. সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া : রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। অর্থাৎ মসজিদের অধিবাসীর মধ্যে কোনো একজন ইতিকাফ করলে, অন্য লোকরা গোনাহ থেকে বেঁচে যাবে। আর যদি কেউ না করে, তখন সবাই গোনাহগার হবে। এই ইতিকাফের জন্যও রোজা শর্ত। এটি ২০ রমজানের সূর্যাস্ত থেকে ২৯ বা ৩০ রমজানে ঈদুল ফিতরের চাঁদ উদয় হওয়া পর্যন্ত বাকি থাকে।
৩. মুস্তাহাব : ওয়াজিব ও সুন্নত ইতিকাফ ছাড়া অন্য এতেকাফ মুস্তাহাব। এর জন্য রোজা শর্ত নয়। আর এ ইতিকাফের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়ও নেই। (হেদায়া : ১/২২৯; ফতোয়া শামি : ২/১৭৮)
আল-কোরআনে ইতিকাফ
পবিত্র কোরআন মানবজাতির সব বিষয়ের পথপ্রদর্শক। ইতিকাফের আলোচনা মহাগ্রন্থ আল কোরআনে উল্লিখিত হয়েছে, যা একজন মোমিনের অন্তরে ইতিকাফ করার প্রতি অধিক আগ্রহ সৃষ্টি করবে এবং ঈমানকে বলবান করবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী ও ইতিকাফকারী এবং রুকু ও সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’ (সুরা বাকারা : ১২৫)
হাদিসে ইতিকাফের ফজিলত
মহানবী (সা.) মদিনায় অবস্থানকালে প্রতিবছর ইতিকাফ পালন করেছেন। দ্বীনি দাওয়াত, তালিম-তরবিয়ত ও জিহাদে ব্যস্ত থাকার সত্ত্বেও তিনি রমজানে ইতিকাফ ছাড়েননি। তবে ইসলামের ইতিহাসে শুধু একবার ইতিকাফ ছাড়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবছর ইতিকাফ পালন করেছেন মহানবী (সা.)। ইতিকাফের ফজিলতের জন্য রাসুল (সা.)-এর ধারাবাহিকতাই যথেষ্ট।
একজন মুসলমান ইতিকাফ পালন করার কারণে দুনিয়ার যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত থাকে। সাধারণত লোকরা চোখের কুদৃষ্টির কারণেই ছোট-বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ইতিকাফের দরুন চোখের দৃষ্টি হেফাজত হয়। সেই সঙ্গে অন্তরও পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। আর ইতিকাফকারীর সওয়াব বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, সে গোনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকে এবং তার জন্য সওয়াব লেখা হয় ওই ব্যক্তির ন্যায়, যে বাইরে অবস্থান করে যাবতীয় ভালো কাজ করে। (ইবনে মাজাহ : ১৮৫৩)
নারীদের ইতিকাফ
ইসলাম মোমিন নারীদের পুরুষের মতো ইতিকাফ পালন করার অনুমতি দিয়েছে। তবে পুরুষরা মসজিদে ইতিকাফ পালন করবে। আর নারীরা আপন ঘরের নির্জন স্থানে ইতিকাফ করবে। যাতে একজন মোমিন নারী রমজান মাসে ইতিকাফ করার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। মেয়েদের ইতিকাফের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমনÑ আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) ইন্তেকাল পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। অতঃপর তার স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন।’ (বোখারি : ২০৬৫; মুসলিম : ২৮৪১)
ইতিকাফে কীভাবে সময় কাটাবেন
সাধারণত একজন মুসলমান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে ইতিকাফ করে। ইতিকাফকারী সব সময় ইবাদতে লিপ্ত থাকে। দুনিয়ার সমুদয় ব্যস্ততাকে বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহর নৈকট্য লাভের সাধনায় থাকে। তাই ইতিকাফকারীকে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, দরুদ পাঠে মশগুল থাকা চাই। এ ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ, আওয়াবিন, এশরাক, চাশত ইত্যাদি সুন্নত নামাজও বেশি পরিমাণে নিয়মিত আদায় করতে পারেন। ইতিকাফ অবস্থায় রাসুল (সা.) বেশি পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করতেন।
লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদরাসা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম
মক্কার মসজিদুল হারামের অন্যতম পবিত্র স্থান হাতিম। কাবার মূল কাঠামোর অংশ হিসেবে বিবেচিত এ স্থানটি মুসল্লিদের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত ও নামাজ আদায়ের আকাঙ্ক্ষিত জায়গা। এখানে শৃঙ্খলাপূর্ণ উপায়ে ইবাদত নিশ্চিত করতে পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
২১ ঘণ্টা আগেখাদ্যগ্রহণ যেমন ক্ষুধা মেটানোর জন্য অপরিহার্য, প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হিসেবে খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে উত্তম সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার অনুসরণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যা খায়, যেভাবে খায়—তা তার চরিত্র, নীতি ও রুচির পরিচয় বহন করে। তাই ইসলাম আমাদের খাওয়ার উত্তম সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার শিখিয়েছে।
২ দিন আগেসম্প্রতি ইসলামি আলোচক আমীর হামজা আল্লাহর রাসুল (সা.)–কে ‘সাংবাদিক’ বলেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, যেহেতু নবী (সা.) ছিলেন আল্লাহর বার্তাবাহক, তাই রূপক অর্থে তাঁকে সাংবাদিক বলা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এই তুলনা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বিভ্রান্তিকর এবং রাসুলের মর্যাদার পরিপন্থী।
৫ দিন আগেআমাদের সমাজে বেশ পরিচিত দুটি শব্দ হলো অলি-আওলিয়া। বাঙালি মুসলমান সমাজে সাধারণত মুসলমানদের একটি বিশেষ শ্রেণিকে অলি-আওলিয়া মনে করা হয়। অলি-আওলিয়াদের বিশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতা আছে এমন বিশ্বাসও সাধারণ মুসলমানদের রয়েছে।
৫ দিন আগে