Ad T1

চ্যাম্পিয়নস লিগ

ফ্রাত্তেসির ম্যাজিক, সোমারের বীরত্ব আর বার্সার কান্না

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫, ০২: ০০
ইয়ান সোমার ও লামিনে ইয়ামাল

রোমাঞ্চ, উত্তাপ, উত্তেজনা, আক্রমণের ঝড়, বাঁকবদল আর গোল উৎসব। এসব না থাকলে কি আর ফুটবল ম্যাচ জমে! চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ষোলোআনাই পূর্ণ করল বার্সেলোনা আর ইন্টার মিলান। নান্দনিক ‍ফুটবলের কোনো কিছুরই কমতি ছিল না সান সিরোতে। শুরুটা অবশ্য ছিল সাদামাটা। কিন্তু ম্যাচের বয়স বাড়তেই লড়াইটা রূপ নেয় থ্রিলারে। বারবার বদলাতে থাকে ম্যাচের মোড়। স্বাগতিক ইন্টার দুই গোলে এগিয়ে যায় তো সমতায় ফেরে বার্সা। প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখে একপর্যায়ে লিড নিয়ে জয়ের স্বপ্ন বুনতে থাকে কাতালানরা। অবিশ্বাস্য রকমের রোমাঞ্চকর ম্যাচে তখনো বাকি নাটকীয়তা। দোদুল্যমান ছিল শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের ভাগ্য। মহাকাব্যিক ম্যাচে স্কোর পরে লেভেল করে ফেলে ইতালিয়ান জায়ান্ট ক্লাবটি।


মহানাটকীয় ম্যাচের পূর্ণতা পায় শেষে অতিরিক্ত সময়ে। ইন্টারের নায়ক ডেভিড ফ্রাত্তেসির ম্যাজিকের কাছে হার মানে ‘কামব্যাক কিং’ খ্যাত বার্সা। সাত গোলের থ্রিলারে আর পেরে ওঠেনি স্প্যানিশ জায়ান্টরা। মঙ্গলবার রাতে বার্সাকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে হতবাক করে উল্লাসে মাতে ইন্টার। যেন খুশির ফোয়ারা ছোটে মিলানজুড়ে। দুদলের প্রথম লেগটা ছিল ৩-৩ গোলে অমীমাংসিত। এবার দ্বিতীয় লেগে বাজিমাত করেছে সিমোনে ইনজাগির শিষ্যরা। তাতে দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ গোলে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাকর আসরের ফাইনালে নাম লিখে উৎসবের জোয়ারে যেন ভেসে গেছে ইন্টার। তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠেছে ইন্টার। আর বিদায়ের রাগিণী বাজিয়ে মাঠছাড়া বার্সার ডাগআউটে তখন রাজ্যের হতাশা। ইন্টারের ফুটবলারদের মুখের হাসি চওড়া হলেও অতিথিদের চোখে তখন বেদনার অশ্রু!


শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের টিকিট কাটতে হলে ইতিহাস নতুন করে লিখতে হতো বার্সেলোনাকে। কারণ চাপ ছিল কোচ হান্সি ফ্লিকের শিষ্যদের ওপর। একে তো নিজেদের মাঠ, এস্তাদিও অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসের প্রথম লেগটা শেষ হয়েছিল ৩-৩ গোলের সমতা নিয়ে। দ্বিতীয় লেগের নির্ধারণী সময়ের খেলাও ছিল ৩-৩ গোলে সমতা। আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের মধ্যকার কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের স্মৃতিই যেন ফিরে এসেছে এ ম্যাচে। তার ওপর দীর্ঘ দশ বছর পর ইউরোপের সেরাদের আসরের ফাইনালে ওঠার হাতছানি ছিল ব্লুগ্রানাদের সামনে। আরেকটি পরিসংখ্যানও ভাবিয়ে তুলেছিল বার্সাকে। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের এলিট টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল ম্যাচে ঘরের মাঠে আগে কখনো হারেনি ইন্টার। সান সিরোতে এবারও নিজেদের অজেয় যাত্রার রেকর্ডটা অক্ষুণ্ণ রাখল মিলানের জায়ান্টটি।


নিজেদের মাঠে সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারের পারফরম্যান্সও ছিল উড়ন্ত। চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে তারা ৯৭২ দিন ধরে অপরাজিত থেকে মাঠে নেমেছিল। এ সময়ের মধ্যে ১৫ ম্যাচ খেলে ১২টিতেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ইন্টার। ড্র করেছে বাকি তিন ম্যাচে। পরিসংখ্যানটি বার্সাকে মানসিকভাবে পিছিয়ে রাখতে যথেষ্ট ছিল। ইন্টারের গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী ইয়ান সোমার বীরত্ব দেখিয়েছেন। তিনি যেন চীনের মহাপ্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বার্সার আক্রমণভাগের সামনে। তার কয়েকটি দুর্দান্ত সেভই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বার্সার জন্য। ইয়ামাল-রাফিনহাদের আক্রমণভাগকে দমিয়ে অবিস্মরণীয় জয়ে মার্তিনেজ-সোমার-ডামফ্রিসরা ফুটবল অনুরাগীদের চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা সেমিফাইনালই উপহার দিয়েছেন। জমজমাট সেই লড়াই উপভোগ করে দর্শকরা এখন বলতেই পারেন- পয়সা উশুল!
ম্যাচের প্রথমার্ধেই লাওতারো মার্তিনেজ ও হাকান চালহানোয়লুর গোলে লিড নিয়েছিল ইন্টার। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে পরে খেলায় ফেরে বার্সা। বিরতির পর ১৫ মিনিটের আক্রমণের ঝড়ে গোল এনে দিয়ে কাতালানদের মাঝে সমতার স্বস্তির পরশ বইয়ে দেন এরিক গার্সিয়া ও দানি ওলমো। আর ৮৮ মিনিটে তো রাফিনহার গোলে ৩-২ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বার্সা। তাতে ঘুরে দাঁড়ানোর দুরন্ত চিত্রনাট্য লেখার আভাসই দিয়েছিল স্পেনের দলটি। কিন্তু ইনজুরি টাইমের তৃতীয় মিনিটে ডেনজেল ডামফ্রিসের আড়াআড়ি শট থেকে বল পেয়ে বার্সার জাল কাঁপিয়ে লড়াই ফের জমিয়ে দেন ইন্টারের সেন্টারব্যাক ফ্রান্সেসকো আচেরবি।

ম্যাচে তখন ৩-৩ গোলের সমতা! দুই লেগ মিলিয়ে দুদলের মধ্যে ৬-৬ সমতা! দর্শকে পরিপূর্ণ সান সিরোর গ্যালারিতে তখন পিনপতন নীরবতা। সবার মনে প্রশ্ন তখন একটা ব্যাপারটা নিয়ে- পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হবে কীভাবে? সেই উত্তরটা জানতেই ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ইরানের ফরোয়ার্ড মেহদী তারেমির ঠেলে দেওয়া বল পেয়ে কাজের কাজটি করে ফেলেন ফ্রাত্তেসি। জয়সূচক গোল উপহার দিয়ে ইন্টারের নায়ক বনে যান ‘ক্রাইসিস ম্যান’ খ্যাত এ মাঝমাঠের তারকা। তার গোলেই ফাইনালে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠে উৎসবে মাতে সিমোন ইনজাগির শিষ্যরা।

ফ্রাত্তেসি এর আগেও ইন্টারত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার গোলেই শেষ আটের প্রথম লেগে বায়ার্ন মিউনিখকে অ্যালিয়াঞ্জ এরিনায় ধরাশায়ী করেছিল ইতালির ক্লাবটি। ২৫ বছরের ফ্রাত্তেসির আরেকটি ম্যাজিক্যাল পারফরম্যান্সে বায়ার্নের মাঠের ফাইনালের টিকিট কেটেছে এবার ইন্টার। নেরাজ্জুরিদের চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা লড়াইয়ের মঞ্চটা যে সাজবে এই আলিয়াঞ্জ অ্যারেনাতেই! আগামী ৩১ মে বায়ার্ন শ্রেষ্ঠত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার মঞ্চে ইন্টার মুখোমুখি হবে পিএসজি বা আর্সেনালের।

একনজরে ফল

প্রথম লেগ
বার্সেলোনা ৩-৩ ইন্টার মিলান

ফিরতি লেগ
ইন্টার মিলান ৪-৩ বার্সেলোনা

দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ গোলে জয়ী ইন্টার

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত