বাণিজ্যযুদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের মধুচন্দ্রিমা কি ফুরাল

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ৫৬
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ৪৩

প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক অগ্রগতির পর ভারত-মার্কিন সম্পর্ক হঠাৎ এক পরিবর্তনের দিকে যেতে পারে। আগামী কয়েক মাসে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত মিলবে। দুই দেশের সম্পর্কের গতিপথ নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে নিকট অতীতের বেশকিছু ঘটনা। খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।

প্রথম উদ্বেগজনক লক্ষণ দেখা দেয় পেহেলগাম সংকটের সময়। সে সময় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র লড়াই শেষ হওয়ার পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, উভয় প্রতিপক্ষের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুমকির মাধ্যমে তিনি সংঘাতের অবসান ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি তার ওই দাবি বারবার উপস্থাপন করেন। কিন্তু তার ওই দাবি ভারতীয় কূটনীতিকরা অস্বীকার করেন।

বিজ্ঞাপন

পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলতে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স কাশ্মীর বিরোধের অবসানে মধ্যস্থতার জন্য আমেরিকার সদিচ্ছার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। স্পষ্টতই তিনি হয়তো জানেন না, ১৯৬২ সালের নভেম্বরে হ্যারিম্যান-স্যান্ডিস মিশন অনেকটা দুর্বল ভারতের বিরুদ্ধে কোনো অর্থবহ অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি।

নয়াদিল্লির দৃষ্টিকোণ থেকে কেবল এ দাবিগুলোই একমাত্র উদ্বেগজনক লক্ষণ নয়। সংকট শেষ হওয়ার পর ট্রাম্প পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানান। আমেরিকা-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে বিরল এ সম্মান দেওয়া হলো।

নিঃসন্দেহে এসব ঘটনা নয়াদিল্লিতে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। এগুলো বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করতে হবে। এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন নয়াদিল্লিতে কোনো রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেনি। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত আমেরিকার সিনেট দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ দেয়নি, যার দায়িত্ব দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তদারক করা।

পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তোলে ট্রাম্পের ভারতীয় রপ্তানিপণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্করোপের হুমকি দেওয়ায়। এই শুল্কারোপের মাধ্যমে তিনি প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, ভারত রাশিয়া থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পেট্রোলিয়াম এবং প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র কিনছে।

এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প যা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন তা হলো, সম্ভাব্য শুল্কের এই সর্বশেষ হুমকি ভারতকে তাৎক্ষণিক ছাড় দিতে প্ররোচিত করার পরিবর্তে আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কৌশলগত সুযোগকে সীমিত করে দিতে পারে। বাইরের চাপের মুখে এবং কমপক্ষে দুটি অভ্যন্তরীণ বিষয় তাকে ঘিরে রেখেছে, যেগুলো আমেরিকার সঙ্গে একটি চুক্তির জন্য কাজ করতে তার ক্ষমতা সীমিত করতে পারে। প্রথমটি হলো বিহারের নির্বাচন এবং দ্বিতীয়টি সংসদের চলতি বর্ষাকালীন অধিবেশনে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে বিরোধীদের খোঁচা।

তবে নয়াদিল্লিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কারণ কেবল এ বিষয়গুলোই নয়, আরো ভিন্ন কিছু রয়েছে। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা চীনের সঙ্গে একটি বাণিজ্যচুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের মধ্যে একটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের বিষয়েও চলছে আলোচনা। প্রকৃতপক্ষে এটা অনুমান করা যুক্তিসংগত যে, উভয় ক্ষেত্রেই কিছু অগ্রগতি হয়েছে। কেননা, সম্প্রতি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চেং-তেকে আসন্ন লাতিন আমেরিকা সফরের সময় আমেরিকার ওপর দিয়ে বিমানে ভ্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। নিঃসন্দেহে তাকে হয়তো আমেরিকায় না আসতে বলা হয়েছে। এর কারণ চীনের কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে তাইওয়ানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এ ধরনের সফর, এমনকি আমেরিকায় যাত্রাবিরতিতেও আপত্তি জানিয়ে আসছেন।

যদি ট্রাম্প প্রশাসন চীনের সঙ্গে একটি বাণিজ্যচুক্তিতে অগ্রগতি অর্জন করতে পারে এবং তাইওয়ানের প্রতি সমর্থনের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে, তাহলে বেইজিংয়ের হুমকি মোকাবিলায় ওয়াশিংটন খুব সহজেই নয়াদিল্লিকে তার নিজের মতো করে পরিস্থিতি সামলানোর ভার চাপিয়ে দিয়ে দৃশ্যপট থেকে সরে যেতে পারেÑএমন ধারণা করা যায়। বেইজিংয়ের প্রতি ওয়াশিংটনের এ তৎপরতাগুলো নয়াদিল্লির জন্য একটি যৌক্তিক উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরেই সম্ভাব্য মার্কিন পরিত্যাগ নিয়ে আশঙ্কা পোষণ করে আসছে।

ট্রাম্পের এক্স অ্যাকাউন্টে ৩০ জুলাই আকস্মিক ঘোষণা দেওয়া হয়, তার প্রশাসন পাকিস্তানের তেলের মজুত অনুসন্ধান ও উন্নয়নের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে নয়াদিল্লির মধ্যে উদ্বেগ এবং অবিশ্বাসকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। এ ঘোষণা এমন এক সময় এলো, যখন আমেরিকা-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অবনতির দিকে। ঘোষণাটি ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারত্বের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন কতটা গুরুত্ব দেয়, তা নিয়ে আরো সন্দেহের উদ্রেক করবে।

ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে মোদি যেভাবে আশা করেছিলেন তিনি এখন হয়তো বুঝতে পারেন যে, প্রথম মেয়াদের সেই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক দ্বিতীয় মেয়াদে কাঙ্ক্ষিত নীতিগত সুবিধায় রূপ নিচ্ছে না। অন্যদিকে ট্রাম্প স্বল্পমেয়াদি লাভের সন্ধানে গত দুই দশক ধরে ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান উভয় প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের যে আস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তার অনেকটাই নষ্ট করতে পারেন। এ ধরনের ফলাফল উভয়পক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত