বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, গাজায় চিকিৎসার জন্য অবরুদ্ধ উপত্যকাটির বাইরে যাওয়ার অনুমতির অপেক্ষায় থাকা এক হাজার ৯২ রোগী মারা গেছেন। গত বছরের জুলাই থেকে ১৮ মাসের মধ্যে তারা মারা যান। শুক্রবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে সংস্থাটির প্রধান তেদরস আধানম গ্যাব্রিয়েসাস বলেন, দুবছরের বেশি সময়ের আগ্রাসনে উপত্যকাটি থেকে গুরুতর অসুস্থ ১০ হাজার ৬০০ রোগীকে বের করে আনা হয়েছে। এর মধ্যে শিশু রয়েছে পাঁচ হাজার ৬০০।
তবে এখনো বহু রোগী রয়েছেন, যাদের যথাযথ চিকিৎসার জন্য গাজা থেকে বের করে নেওয়া প্রয়োজন বলে বিবৃতিতে মন্তব্য করেন ডব্লিউএইচওর প্রধান। তিনি বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য গাজার বাইরে যাওয়ার অনুমতির অপেক্ষায় থাকা এক হাজার ৯২ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
তেদরস বলেন, এ সংখ্যাটিতেও অবশ্য পুরো চিত্র আসেনি। গাজার রোগীদের জন্য এবং পূর্ব জেরুসালেমসহ পশ্চিম তীর থেকেও চিকিৎসার জন্য আরো দেশের দরজা খুলে দেওয়া উচিত। মানুষের জীবন এর ওপর নির্ভর করছে।
এদিকে শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র তারিক ইয়াসারেভিচ জানান, চিকিৎসার জন্য বের হওয়ার অপেক্ষায় থাকা মোট ১৮ হাজার ৫০০ রোগী এখনো গাজায় রয়েছেন। এর মধ্যে শিশু রয়েছে চার হাজার।
তিনি বলেন, এদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যাদের হাতে অপেক্ষার সময় নেই।
এদিকে গাজাকে পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ শহরাঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে ১১২ বিলিয়ন ডলারের বাজেটের প্রস্তাব তৈরি করেছেন আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ের জামাই জ্যারেড কুশনার। শুক্রবার আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে এ খবর জানানো হয়। খবরে বলা হয়, আমেরিকা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ ব্যয় বহন করবে বলে প্রস্তাবে জানানো হয়। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে ১০ বছরের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, গাজায় শিগগির নতুন প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। একইসঙ্গে উপত্যকায় শান্তিরক্ষায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে। আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে এ সপ্তাহেই কাতারের দোহায় অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে আমেরিকা আলোচনা করবে।
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার মধ্যেই গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। শুক্রবার গাজা শহরের আত-তুফফাহ মহল্লায় এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ইসরাইলি ট্যাংকের গোলাবর্ষণে অন্তত ছয়জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। শনিবার গাজা শহর ও খান ইউনুসে ইসরাইলি বাহিনী কামানের গোলাবর্ষণ করে।
শনিবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বিবৃতিতে বলা হয়, আগের ৪৮ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় ছয়জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া আগের হামলার ধ্বংসস্তূপ থেকে সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ নিয়ে যুদ্ধবিরতির দুই মাস ১০ দিনে নিহতের সংখ্যা ৪০১-এ দাঁড়িয়েছে। মোট আহত হয়েছেন এক হাজার ১০৮ জন। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৬৪১টি।
সব মিলিয়ে ইসরাইলি আগ্রাসনে মোট ৭০ হাজার ৯২৫ নিহত ও এক লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ জন আহত হয়েছেন।
গাজায় হামলার পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরেও চলছে ইসরাইলি তাণ্ডব। শনিবার সালফিতের পশ্চিমে ফিলিস্তিনি গ্রাম আল-জাওয়াইয়ায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী অভিযান চালায়। বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, ইসরাইলি সেনারা গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি, গুদাম ও কারখানায় ঢুকে ভাঙচুর করে। এছাড়া গ্রামের মেয়র আমির শুকায়িরের বাড়িতে হানা দিয়ে তার ছেলেকে আটক করে নিয়ে যায়।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার আহ্বান মধ্যস্থতাকারীদের
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘জলদস্যুতার’ অভিযোগ ভেনেজুয়েলার
গাজায় ধ্বংসস্তুপ থেকে ৯৪ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার