সদস্য দেশগুলোর বকেয়া পাওনা রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছানোয় মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছে জাতিসংঘ। এ পরিস্থিতিতে সংস্থাটি ২০২৬ সালের জন্য বড় ধরনের বাজেট কাটছাঁট ও কর্মী কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জানান, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বকেয়া এখন দাঁড়িয়েছে ১.৫৯ ট্রিলিয়ন ডলার, যা সরাসরি সংস্থার কার্যক্রমকে হুমকিতে ফেলেছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গুতেরেস সোমবার ২০২৬ সালের বাজেট উপস্থাপন করেন, যা তিনি নির্ধারণ করেছেন ৩.২৪ বিলিয়ন ডলার—২০২৫ সালের তুলনায় ৫৭৭ মিলিয়ন ডলার কম। বাজেট হ্রাসের পাশাপাশি কর্মীসংখ্যা ১৮.৮ শতাংশ কমানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থায় মোট ২,৬৮১টি চাকরি বাতিল করা হবে।
জাতিসংঘের এক বিবৃতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও মেক্সিকোর কাছ থেকে পাওয়া বকেয়া বিলম্বই এই ঘাটতির মূল কারণ। ফলে সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে যে তরলতা সংকটের মধ্যে আছে, তা আরও তীব্র হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের মোট পদগুলোর প্রায় ১৮ শতাংশ শূন্য পড়ে আছে—তবে এসব শূন্যপদ কাটছাঁটের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। গুতেরেস বলেন, “তরলতা সংকটের কারণে অনেক পদ শূন্য হলেও আমরা প্রতিস্থাপনের জন্য অর্থ পাইনি।”
তবে এই সংকটের মধ্যেও ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা UNRWA-র বাজেট অপরিবর্তিত থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন মহাসচিব। তিনি বলেন, “গাজার মানবিক সঙ্কটের মেরুদণ্ডে যেকোনো কাটছাঁট অগ্রহণযোগ্য।” একইভাবে আফ্রিকার উন্নয়ন সহায়তার বাজেটও কমানো হবে না।
অন্যদিকে বিশেষ রাজনৈতিক মিশনের বাজেট ২১.৬ শতাংশ কমিয়ে ২০২৬ সালের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪৩.৬ মিলিয়ন ডলার। কিছু মিশন বন্ধ করা এবং অন্যগুলোর কার্যক্রম ছোট করা হবে ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে।
এছাড়া নিউ ইয়র্কভিত্তিক অফিসগুলো থেকেও ব্যয় কমাচ্ছে জাতিসংঘ। বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল রিয়েল এস্টেট মার্কেটে অবস্থিত এই শহরে সংস্থাটি ২০২৭ সালের মধ্যে দুটি ইজারা বাতিল করবে, যা ২০২৯ সাল থেকে বছরে ২৪.৫ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করবে। ২০১৭ সাল থেকে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন অফিস বন্ধ করে সংস্থাটি ইতোমধ্যেই ১২৬ মিলিয়ন ডলার বাঁচিয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, বর্তমান আর্থিক সংকট কাটাতে সদস্য দেশগুলোকে দ্রুত বকেয়া পরিশোধ করতে হবে; নইলে সংস্থার বৈশ্বিক কার্যক্রম আরও বড় চাপে পড়বে।

