সরাসরি সম্প্রচারকালে সাংবাদিক হানি মাহমুদ সাক্ষী হলেন ইসরাইলি বর্বরতার

মোহাম্মদ শামসুদ্দীন
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩১
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৮

আলো ঝলমলে স্টুডিও নয়, ক্যামেরার সামনে সযত্নে সাজানো সেট নয়—হানি মাহমুদের মঞ্চ হলো ধ্বংসস্তূপে ভরা রাস্তাঘাট, পুড়ে যাওয়া ভবন আর আতঙ্কে দৌড়ানো মানুষের ভিড়। তিনি সংবাদদাতা, দায়িত্ব তার সত্য তুলে ধরা। আর সেই দায়িত্ব পালনের মাঝেই তিনি সাক্ষী হয়ে গেলেন এক উন্মত্ত বোমা হামলার।

বিজ্ঞাপন

দক্ষিণ গাজার রাফাহ। রোববার আল জাজিরার ক্যামেরার সামনে হানি মাহমুদ ব্যস্ত ছিলেন ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরতে। তিনি বলছিলেন—‘গাজার ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক ভবনে বোমা হামলায় পরিবারগুলো বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। প্রতি ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর আকাশ কাঁপিয়ে বোমা পড়ছে।’

কথা শেষ হওয়ার আগেই হঠাৎ কেঁপে উঠলো চারদিক। আকাশ ফুঁড়ে আসলো ভয়াল শব্দ। ধোঁয়া আর আগুনে মুহূর্তেই আচ্ছন্ন হলো পেছনের দৃশ্যপট। ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র তার পিছনের ভবনগুলিতে আঘাত হানে। এ সময় দক্ষিণ গাজার রাফাহের ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকার কুয়েতি হাসপাতাল থেকে সাধারণ মানুষ ছুটে পালিয়ে যাওয়ার সময়ও তিনি সরাসরি সম্প্রচার চালিয়ে যান।

ক্যামেরার সামনেই হঠাৎ মাথা নিচু করে বাঁচার চেষ্টা করলেন হানি মাহমুদ। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ ছুটে চলেছে, কেউ সন্তানকে কোলে নিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াচ্ছে, কেউবা অঝোর কান্নায় খুঁজছে আপনজনকে। সাধারণ মানুষের সেই অসহায়তা, আতঙ্ক আর শোক একসঙ্গে ধরা দিলো লাইভ সম্প্রচারে।

হানি মাহমুদের চারপাশেই শুধু ধ্বংস আর কান্না। কিন্তু তিনি থামলেন না। যুদ্ধক্ষেত্রের সাংবাদিকতার ঝুঁকি কতটা ভয়াবহ, তা পৃথিবী প্রত্যক্ষ করলো আজ।

তিনি জানতেন—একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব শুধু খবর দেওয়া নয়, মানুষের আর্তনাদকে বিশ্ববাসীর কানে পৌঁছে দেওয়া। আর তাই ধ্বংসস্তূপের মাঝেও তিনি থামেননি।

এ যেন এক চিত্রপট, যেখানে একজন সাংবাদিক নিজেই হয়ে গেলেন ইতিহাসের সাক্ষী। সত্য প্রকাশের অঙ্গীকারে তিনি পেশাগত দায়বদ্ধতাকে জীবনের নিরাপত্তার ওপরেও বড় করে তুললেন।

গাজার আকাশে এখনো ধোঁয়া, মাটিতে ছড়িয়ে আছে আহত-নিহতের আর্তনাদ। আর পৃথিবীর মানুষ মনে রাখলো—একজন সাংবাদিকের নাম, হানি মাহমুদ, যিনি সরাসরি সম্প্রচারে সাক্ষী ছিলেন যুদ্ধের বর্বরতার।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত